কদাকার যুবক দুইজনার একজন হা হা করিয়া
অট্টহাসি হাসিয়া বলিল – ‘আইস, অনীশকে
নদীর চড়ায় লইয়া গিয়া পুঁতিয়া দিই । কেহ কোনোকালেও আর মদ্যপটির খোঁজ পাইবে না ।’
অপর
যুবকটি শুনিয়া ঘোর আপতি জানাইয়া কহিল – ‘তাহার প্রয়োজন বোধ করিতেছি না । ইহাকে যারপরনাস্তি অপমানিত করা
হইয়াছে । ইহার পরও যদি বাঁচিয়া থাকার আশা বক্ষে পেষণ করিয়া থাকে তাহা হইলে বুঝিতে
হইবে অনীশ অসৎ পথে চালিত হইয়া পশুর ন্যায় জীবন যাপনে অভ্যস হইয়া উঠিয়াছে । উহাকে
আর মানুষ বলিয়া জ্ঞান করিবার উপায় দেখি না ।’
যুবকদুটি
অতঃপর অনীশকে তাহার বাটির নিকটে নামাইয়া দিয়া ফিরিয়া যাইতে উদ্যত হইতেই বাটির ভিতর
হইতে অনীশজায়া মন্দিরা বাহির হইয়া আসিয়া ঘোর মদিরাচ্ছন্ন অনীশকে একপলক দেখিয়া লইয়া
যুবকদিগকে ডাকিয়া বলিলো – ‘ইহাকে যথাস্থান হইতে আনয়ন করিয়াছ তথায় ফেলিয়া আসো নাই কেন ? সেইস্থানে ফেলিয়া আসিলে উত্তম কাজ
করিতে । তাহা যখন করো নাই তখন অন্ততঃ একটি অনুরোধ রক্ষা করিয়া যাও । উত্তমরূপে
প্রহার করিয়া উহার শরীরের অস্থিগুলি চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া দিয়া যাও ।’
যুবক
দুইটির একজন মৃদু হাসিয়া প্রত্যুত্তরে বলিলো –
‘আগামীকাল প্রভাতেই মহাসপ্তমী । আমরা প্রার্থনা করিতেছি
স্বয়ং মা দুর্গা যেন স্বহস্তে বিনাশ করেন অনীশকে ।’
যুবকদ্বয়
চলিয়া যাইবার পর অনীশের উদ্দেশ্যে ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া মন্দিরা দোর বন্ধ
করিয়া দিলো । অনীশের মদিরার ঘোর কাটিলো রাত্রির মধ্যযামে । অনীশ দরজায় বারংবার
করাঘাত করিয়া এবং উচ্চস্বরে হাঁকডাক করিয়াও মন্দিরার মন গলাইতে না পারিয়া আসিয়া
বসিলো উন্মুক্ত প্রাঙ্গনের সুবিশাল আম্রবৃক্ষের তলায় । ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকাইয়া
থাকিলো তারকাখচিত তমসাচ্ছন্ন আকাশের দিকে । গভীর সুরামত্ত অবস্থাতেই যুবকদ্বয় এবং
মন্দিরার কথোপকথন তাহার কর্ণগোচর যে হইয়াছে তাহা কেহই জানিতে পারে নাই ।
অদূরে
কতিপয় শৃগাল উচ্চ রবে ডাকিয়া উঠিয়া রাত্রির চতুর্থ প্রহর ঘোষণা করিলো । মন্দিরা
নিজ রুদ্ধদ্বার অন্ধকার কক্ষে বসিয়া নিঃশব্দে অশ্রুবিসর্জন করিতেছে । অনীশ তাকাইয়া
আছে আকাশের দিকে । তাহার অন্তরে যে ঝড় উঠিয়াছে তাহা কারও গোচর হইতেছে না ।
প্রভতে
আম্রশাখায় উপবিষ্ট বিহঙ্গটির প্রথম রব শুনিয়া মন্দিরা ব্যগ্রহস্তে দোর খুলিয়া
বাইরে আসিয়া অনীশকে দেখিতে না পাইয়া ব্যাকুল হৃদয়ে ইতস্তত দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলো।
সহসা তাহাঁর দৃষ্টিগোচর হইলো সেই মর্মান্তিক দৃশ্য । আম্রবৃক্ষের একটি উচ্চ শাখায়
ঝুলিয়া থাকিয়া অনীশের প্রাণহীন নিথর দেহখানি প্রভাতের মৃদুমন্দ বাতাসে মহানন্দে দোল
খাইতেছে ।
সুজাতার জমানো টাকা
মাঝরাতে
খাটের তলা থেকে খুটখাট শব্দ ভেসে আসতে শুনে মৃগাঙ্কবাবুর কাঁচা ঘুমটা গেল ভেঙে।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসে দেখলেন হালকা আলোর আভা ছিটকে বেরোচ্ছে খাটের তলা থেকে।
মৃগাঙ্কবাবু সবে গলা তুলে বলতে শুরু
করেছেন – “চো......।”
চোরটা নিমেষে খাটের তলা থেকে ছিটকে বেরিয়ে
এসে চেপে ধরলো মৃগাঙ্কবাবুর মুখ – “অ্যাই চুপ্, পুলিশ এসে তোমাকে ধরে নিয়ে গেলে ভালো হবে ?”
মৃগাঙ্কবাবু
চমকে উঠলেন শুনে । অন্ধকারে দেখতে না পেলেও স্ত্রী সুজাতার গলা চিনতে এতটুকুও কষ্ট
হলো না তাঁর । কোনো চোর নয় সুজাতা ঢুকেছিলো খাটের তলায় ! কিন্তু কেন ? দ্রুত বেডসুইচ টিপে আলো জ্বেলে নিলেন
।
সুজাতার হাতটা মুখের ওপর
থেকে সরে যেতেই মৃগাঙ্কবাবু চাপা গলায় শুধোলেন –
“এতো রাতে খাটের তলায় ঢুকে কি করছিলে তুমি ? কেন বললে পুলিশ শুনলে ধরে নিয়ে যাবে
আমাকে ?”
সুজাতা হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন । মৃগাঙ্কবাবু অবাক গলায়
শুধোলেন – “আবার
কি হলো ? কাঁদছো
কেন ?”
সুজাতা
কান্না না থামিয়ে খাটের তলা থেকে টেনে বের করলেন মাঝারি আকারের পেটমোটা একটা চামড়ার
কালো লেডিজ ব্যাগ । ব্যাগটা মৃগাঙ্কবাবুর
দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন – “তোমার পকেট কেটে জমানো টাকাগুলো কালো যে হয়ে যাবে তা আমার ধারণায়
ছিলো না গো । বুঝতে পারলে কি আর জমিয়ে রাখতাম ?
মনের সুখে সপিং করতাম এক একটা মলে গিয়ে ।