গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬

বিপ্লব গম্নগোপাধ্যায়

সিঁড়ি

         কাঠের ভাঙা সিঁড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে ললিত । রুগ্ন নড়বড়ে । কত গ্রীষ্ম বর্ষা শীতের দাগ সেখানে । ওটা এ বাড়িতে আর মানায় না । তবু রয়ে গেছে । পুরানো জিনিষ যেমন একপাশে পড়ে থাকে সেভাবেই । অথচ ওই সিঁড়িটা দিয়েই দোতলায় পড়ার ঘরে উঠে আসত ললিত । চুপচাপ নিরিবিলি সেই ঘরটা হয়ে গিয়েছিল তার নিজের । দোতলায় ঐ একটা মাত্র ঘর । তার বেশি বানাতে পারেনি বাবা ।ঐ একটা ঘর তারজন্য সিঁড়িঘর বানানো পয়সার অপচয় । কাটের সিঁড়িটা তারই বিকল্প ভূমিকা পালন করেছে দীর্ঘদিন । সারাবছর চাষ করে কত টাকাই বা আয় । সংসারের সদস্য সংখ্যাও কম নয় । রুখা মাটি,শুকনা গরু আর তিন গুড়হা জমি । তবু লোকের ভাগচাষ করে,গরুর গাড়িতে মাল বয়ে সম্বছর সকলের মুখের হাসি অম্লান রাখার চেষ্টা করত পতিতপাবন। ললিতের বাবা । সবার আবদারগুলো কাটছাঁট হলেও ললিতের জন্য দরাজ ছিল তার হাত এবং হৃদয় । - তুমি শুধু দাদাকেই ভালোবাসো বাবা । আমরা যেন জলে ভেসে এসেছি । অভিমান কখনও প্রতিবাদের রূপ নিত রূপার গলায় । নীরবতায় সত্যকে মেনে নেওয়া ছাড়া কি আর করতে পারে পতিতপাবন । সে বুঝত ললিতের নিরিবিলি দরকার । পড়ার জন্য আলাদা পরিবেশ । এই ঘামগন্ধ , এই মাটির অপরিচ্ছন্নতা থেকে অনেক উপরে বাবু বাতাস । সেই সুগন্ধের দিকে ছেলেকে ঠেলে দিয়ে আসলে পতিতপাবন প্রমাণ করতে চাইত চাষার ছেলে শুধু চাষাই হয়না । ললিত বাবার কথাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । সে এখন দোতলা নয় কলকাতার বহুতলে থাকে । বহুজাতিক সংস্থার ডাইরেক্টর । রূপার বিয়ে হয়নি । অসুস্থ বাবাকে নিয়ে তার সংসার । কলমি শাক তুলে আনে,পুকুরে গুগলি কুড়িয়ে এনে বাবাকে খাওয়ায় । তার গায়ে শ্যাওলার গন্ধ । সিঁড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে ললিত । ঐ সিঁড়ি দিয়ে সে একাই উপরে উঠে এসেছে । কাওকে টেনে তুলতে পারেনি । সিঁড়িটা রুগ্ন নড়বড়ে ।