কাঠের
ভাঙা সিঁড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে ললিত । রুগ্ন নড়বড়ে । কত গ্রীষ্ম বর্ষা শীতের দাগ সেখানে
। ওটা এ বাড়িতে আর মানায় না । তবু রয়ে গেছে । পুরানো জিনিষ যেমন একপাশে পড়ে থাকে সেভাবেই
। অথচ ওই সিঁড়িটা দিয়েই দোতলায় পড়ার ঘরে উঠে আসত ললিত । চুপচাপ নিরিবিলি সেই ঘরটা হয়ে
গিয়েছিল তার নিজের । দোতলায় ঐ একটা মাত্র ঘর । তার বেশি বানাতে পারেনি বাবা ।ঐ একটা
ঘর তারজন্য সিঁড়িঘর বানানো পয়সার অপচয় । কাটের সিঁড়িটা তারই বিকল্প ভূমিকা পালন করেছে
দীর্ঘদিন । সারাবছর চাষ করে কত টাকাই বা আয় । সংসারের সদস্য সংখ্যাও কম নয় । রুখা মাটি,শুকনা গরু আর তিন গুড়হা জমি । তবু লোকের ভাগচাষ করে,গরুর গাড়িতে মাল বয়ে সম্বছর সকলের মুখের হাসি অম্লান রাখার চেষ্টা করত পতিতপাবন।
ললিতের বাবা । সবার আবদারগুলো কাটছাঁট হলেও ললিতের জন্য দরাজ ছিল তার হাত এবং হৃদয়
। - তুমি শুধু দাদাকেই ভালোবাসো বাবা । আমরা যেন জলে ভেসে
এসেছি । অভিমান কখনও প্রতিবাদের রূপ নিত রূপার গলায় । নীরবতায় সত্যকে মেনে নেওয়া ছাড়া
কি আর করতে পারে পতিতপাবন । সে বুঝত ললিতের নিরিবিলি দরকার । পড়ার জন্য আলাদা পরিবেশ
। এই ঘামগন্ধ , এই মাটির অপরিচ্ছন্নতা থেকে অনেক উপরে বাবু
বাতাস । সেই সুগন্ধের দিকে ছেলেকে ঠেলে দিয়ে আসলে পতিতপাবন প্রমাণ করতে চাইত চাষার
ছেলে শুধু চাষাই হয়না । ললিত বাবার কথাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । সে এখন দোতলা নয় কলকাতার
বহুতলে থাকে । বহুজাতিক সংস্থার ডাইরেক্টর । রূপার বিয়ে হয়নি । অসুস্থ বাবাকে নিয়ে
তার সংসার । কলমি শাক তুলে আনে,পুকুরে গুগলি কুড়িয়ে এনে বাবাকে
খাওয়ায় । তার গায়ে শ্যাওলার গন্ধ । সিঁড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে ললিত । ঐ সিঁড়ি দিয়ে
সে একাই উপরে উঠে এসেছে । কাওকে টেনে তুলতে পারেনি । সিঁড়িটা রুগ্ন নড়বড়ে ।