গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬

পার্থ রায় / দুটি গল্প

নারী

পত্নীর অকাল বিয়োগের পরে ৩২ বছরের সুবিনয় আর নারী সঙ্গ করে নাই। প্রভুত সংযমের পরিচয় দিয়া নিজের কৌমার্য সে অক্ষত রাখিয়াছিল। আত্মীয় পরিজন ও বন্ধু বান্ধবদের পুনর্বিবাহের প্রস্তাবও মৃদু হাস্য ও     এক অনমনীয় কঠিন নীরবতা দিয়া প্রত্যাখ্যান করিয়া রাখিয়াছিল। মনের কোনে পুনর্বিবাহের সুপ্ত ইচ্ছা যে হয় নাই, তাহা নয়। আসলে প্রয়াতা পত্নী সুনয়না কে সে অতন্ত্য ভালবাসিত। গৃহে টাঙ্গানো হাস্যমুখি সুনয়নার ছবির দিকে চোখ পড়িলেই তার ঘর বাঁধিবার সুপ্ত ইচ্ছা এক নিমেষে উধাও হইয়া যাইত।কিন্তু সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সুবিনয়ের নিশীথ কালে একাকী শয্যায় শরীর কামার্ত হইয়া পড়িলে, নিদ্রা দেবী ধরা ছোঁয়ার বাহির হইয়া যাইত এবং এক অসহনীয় পরিস্থিতির উদ্ভব হইত। একদিন কথা প্রসঙ্গে প্রাণের বান্ধব রতন কে তাহার এই অবস্থার কথা সসংকোচে প্রকাশ করিয়া ফেলিল।রতন প্রকৃত বন্ধুর মতো ইহা উপলব্ধি করিল। সে উহা লইয়া কোন প্রকার হাস্যরসের উপক্রম করিল না। রতন বিবাহের পূর্বে বারবনিতা সঙ্গ করিয়াছিল। এই ব্যাপারে তাহার পূর্বলব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাইল। সুবিনয়কে সোনাগাছি নামে কলিকাতার সুপরিচিত গণিকালয়ে যাইবার পরামর্শ দিল। কিন্তু সুবিনয় একাকী সেথায় যাইবার সাহস অর্জন করিতে না পারিয়া, প্রিয় বন্ধু কেও সঙ্গ দিবার প্রস্তাব করিল। যদিও, প্রস্তাব দিয়া বিবেকের দংশন অনুভব করিয়াছিল বিবাহিত বন্ধুর সাংসারিক অবস্থানের কথা ভাবিয়া। কিন্তু তাহাকে অবাক করিয়া দিয়া রতন সম্মত হইল।

এক সন্ধ্যা অন্তে দুই বন্ধু রতনের পূর্ব পরিচিতা এক বারবনিতার ক্ষুদ্র গৃহে উপস্থিত হইল। রতন ও সেই বারবনিতার কথোপকথনে সুবিনয় জানিতে পারিল মেয়েটির নাম লীলা। লীলার মধ্যে বেশ একপ্রকার ঘরোয়া  সুশ্রী ভাব আছে, নমনীয় এবং উদ্ভিন্নযৌবনা।রতন হাস্যালাপের মাধ্যমে জড়সড় সুবিনয়কে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টায় রত হইল এবং লীলাকে ইশারায় বুঝাইয়া দিল, কি করিতে হইবে। কিয়ৎক্ষণ পরে, রতন সিগারেট আনিবার ছলে বাহির হইয়া গেলো। লীলা সুবিনয়ের হাত ধরিয়া অন্দরমহলে একটি কম আলোর কক্ষে লইয়া গেলো।বহুকাল পরে স্ত্রী লোকের স্পর্শে সুবিনয় নিজের অভ্যন্তরে নিদ্রিত সিংহটির জাগিয়া উঠিবার ইঙ্গিত পাইল। কক্ষে প্রবেশ করিয়া দৃষ্টিক্ষমতা অভস্ত্য হইলে পর, সুবিনয় একটি বেশ পরিপাটি করিয়া গোছান শয্যা দেখিতে পাইল। উহাতে একটি নিদ্রিত দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দেখিয়া সুবিনয় যৎপরোনাস্তি বিস্মিত হইল। এইরূপ স্থলে,এইরূপ পরিবেশে ঘুমন্ত শিশুটি বেমানান বলিয়া প্রতীয়মান হইল। সে কিঞ্চিৎ উচ্চস্বরেই শিশুটির পরিচয়  জানিতে চাহিল। ইতিমধ্যে, লীলা অভ্যস্ত হস্তে স্বীয় বক্ষাবরণী উন্মোচিত করিতেই বহু অত্যাচারেও অটুট,নিটোল দুইটি স্তন সুবিনয়কে আমন্ত্রণ জানাইল। তাহার প্রশ্নের উত্তর লীলা দিবার আগেই, শিশুটি ক্রন্দন করিয়া উঠিল। ত্রস্ত্য হইয়া লীলা কহিল,“যাহা করিবার সত্বর করো,উহাকে মাই দেই নাই অনেকক্ষণ। আমার বুক টাটাইতেছে।সুবিনয়ের মুখ দিয়া কিছু বাহির হইল না। সত্যিই লীলার ভরাট স্তনবৃন্ত হইতে দুগ্ধ নির্গত হইতেছিল। এক প্রবল অপরাধ বোধে এবং অভূতপূর্ব বিবেক দংশনে আক্রান্ত সুবিনয়ের মুখ দিয়া কোন কথা বাহির হইল না, জ্যা মুক্ত তীরের ন্যায় সে ছুটিয়া বাহির হইয়া গেল।শাঁসালো খদ্দের হইতে বঞ্চিত হইয়াও,শিশুটির তৃষ্ণার্ত মুখে স্তন দিবার মুহূর্তে লীলার মুখমণ্ডল হইতে বারবনিতার মুখোশ অদৃশ্য হইয়া এক মাতার তৃপ্ত হাসিমুখ আর বাৎসল্যের দৃষ্টি দেখা হইতে মূর্খ সুবিনয় বঞ্চিত হইল    



সেদিন বৃষ্টি হয়েছিল


         বাইরের আবহাওয়ার মত নিজের ভেতর টাও যেন গুমোট হয়ে আছে অতসীর । এক পশলা বৃষ্টির খুব দরকার। মেয়ের গায়ে আজ এই প্রথম হাত তুলল । কতই বা বয়েস । সবে ছয় পূর্ণ হোল, ক্লাস টু তে উঠলো । মর্নিং স্কুল থেকে এসে, দুপুরে একটু ঘুমায় । অতসীই এই অভ্যাস করে দিয়েছিল যাতে সন্ধ্যেবেলা পড়তে পারে । ঘুমিয়ে আছে একটা ছোট্ট পরীর মত, ফুলো ফুলো গালে এখনও চোখের জল শুকিয়ে আছে। দেখে টনটন করে উঠলো বুকটা। নিজের নিষ্ঠুর আচরণে নিজেই অবাক ও হোল, ভেতরে ভেতরে কুঁকড়েও গেলো । কি এমন অন্যায় করেছিল ? শিশু মনে যেটা করেছে, সেটা তো এই বয়েসে ঠিকই করেছে । বড় দের ব্যাপারে ওদের জড়ানো ঠিক হয়নি । টুসি ওর ক্লাসের বন্ধু রুমেলা কে ফেয়ার কপিটা দিয়ে দিয়েছে আজ । কাল রবিবার স্কুল ছুটি । সোমবার ফেরত দেবে । কারণ রুমেলা অ্যাবসেন্ট ছিল জ্বরের জন্যে। অথচ, টুসির যেবার শরীর খারাপ হোল, রুমেলার কাছে ক্লাস নোটটা চেয়েছিল । রুমেলা দেয়নি কারণ ওর মা বারন করেছে । ছোট্ট রুমেলা সরল মনে সত্যি কথাটা বলে দিয়েছিল টুসিকে । অতসী শুনে অবাক হয়ে গেছিলো কারণ রুমেলার মা ঝুমা খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ওর সাথে । এমন ভাব করে, যেন অতসী ওর খুব ভালো বন্ধু। সেই থেকে রাগ পুষে রেখেছিল অতসী । যদিও, ঝুমাকে সেটা বুঝতে দেয়নি কখনো। মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দিয়েছিল এই বলে যে সুযোগ আসবে একদিন । আসলে, স্কুলে টুসি আর রুমেলার মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়া নিয়ে । অবশ্য, এখন বুঝতে পারছে রেষারেষিটা ছোট্ট মেয়ে দুটোর মধ্যে নেই, ঝুমার মনে রয়েছে । খাতাটা দেওয়ার কথা শুনেই, পুরনো ব্যাপারটা মনে পড়তেই মেয়েকে চেপে ধরেছিল অতসী । একটা অসহ্য রাগে দু হাত দিয়ে ঝাঁকাচ্ছিল চুপ করে থাকা টুসিকে। কেন দিয়েছিস ? বল, কেন দিয়েছিস ? আমাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিলনা ? তোর শরীর খারাপের সময়, দিয়েছিল ওর ক্লাস নোটের খাতা?”। শেষে আর রাগ চেপে রাখতে পারেনি, ঠাস করে এক চড় মেরেছিল ওর নরম গালে। দুই চোখে অভিমানে আহত, অবাক দৃষ্টি নিয়ে টুসি মায়ের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠেছিল। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,“মাম্মি, তুমি আর পাপা-ই তো বলেছ মানুষের বিপদে সাহায্য করতে হয়। ও তো আমার বন্ধু। এইটুকু শিশুর মুখে এমন মোক্ষম কথা শুনে থমকে গিয়েছিল অতসী । আবার তাকাল ঘুমন্ত মেয়ের দিকে। একটা হাত দিয়ে বুকের কাছে টেনে নিল। খেয়াল করেনি, যে বৃষ্টির জন্যে ভেতরটা ছটফট করছিল সেটা কখন অঝোর ধারায় নিজের দু চোখে নেমেছে । মেয়ের গালে গাল রেখে মনে মনে বলল, “ তুই এমনই থাকিস, আমার সোনা । তুই ঠিক কাজ করেছিস । আমরাই ভুল। বাৎসল্যে টনটন করে ওঠা মায়ের দুই স্তনের মাঝে পরম নিশ্চিন্তে মুখ রেখে ঘুম ভাঙ্গা টুসি ফিসফিসিয়ে বলল, “আই লাভ ইউ মাম্মি। খুশির বৃষ্টির ঝাপটা বেড়ে উঠল। গুমোট ভাবটা কখন যেন উধাও হয়ে গেছে।মেয়েকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে কোন মতে অতসী বলল,“আই লাভ ইউ টুউ, সোনা