শান্তনু আর শিল্পীর মেয়ে শাখী।
একদম দুধের শিশু শাখী,
মাকে কাছে পেয়েও কাঁদে। ওরা বুঝতে পারেনা কেন কাঁদে। পেট ভর্তি
তাও কাঁদছে, পেটে ব্যথার ওষুধ দিলেও কাঁদছে। ওদের ভয় লাগে,
কোনও অসুখ হলো না তো? ডাক্তার দেখিয়ে সব
রকম পরীক্ষাও করানো হল, কিন্তু কান্না থামেনা। ডাক্তার
বললেন, বড় হওয়ার সাথে সাথে কমে যাবে।
বছর দুয়েক বয়েসে একটু কমলো কান্না।
কিন্তু যখন তাকে নাম ধরে ডাকা হয় সে তাকায় না, শোনেনা। নাম জিজ্ঞেস করলে বলে ‘‘আমার নাম আফ্রীন।’’ খুব কম কথা বলে। কিন্তু
বারবারই বলে আম্মা আব্বু কই? শিল্পীর কেঁদে কেঁদে শরীর খারাপ হয়ে যায়। কি করা উচিত ওরা বঝেনা। নানা
লোকে নানা কথা বলছে। কেউ বলছে তুকতাক করা হয়েছে, কেউ বলছে
ঝারফুঁক করাও। আর কেউ বলছে সাইক্রিয়া্টিস্ট দেখাও।
শান্তনু কোনও বাজে কথা শোনার লোক
নয়। সে মেয়ের সাথে অনেক সময় কাটায়। মেয়ে কথা বলে, খেলা করে, আর থেকে থেকে বলে আমি বাড়ি কবে যাবো? তিন
বছরের মেয়েকে নিয়ে মা বাবা শহরের নাম করা সাইক্রিয়া্টিস্ট-এর কাছে গেলো। ডাক্তার
একটু কথার পর জিজ্ঞেস করলেন,‘‘ তোমার বাড়ি কথায় বলো তো
শাখী মা।’
’ শাখী উত্তর দিল, ‘‘আমার নাম আফ্রীন, আমার বাড়ি বহরমপুরে।’’
‘‘বাড়িতে কে কে আছে মা?’’
‘‘আম্মা আছে, আব্বু আছে, আর দাদা আছে।’’
‘‘দাদার নাম কি?’’
‘‘আদিল।’’
‘‘বাড়িতে কে কে আছে মা?’’
‘‘আম্মা আছে, আব্বু আছে, আর দাদা আছে।’’
‘‘দাদার নাম কি?’’
‘‘আদিল।’’
শান্তনু ডাক্তারবাবুর সাথে আলাদা
করে পরে কথা বললো। ডাক্তার বাবু বললেন, “যদি জানতে পারেন ঠিক কোথাকার কথা
বলছে, গিয়ে দেখতে পারেন। সোনার কেল্লা মনে আছে তো? জাতিস্মর
কনসেপ্ট কিন্তু আছে। তবে আমার মনে হয় বড় হবার সাথে সাথে ও ঠিক হয়ে যাবে।’’
বহরমপুর খুব ছোট জায়গা নয়। তাও
শান্তনু পাড়ি দিল। রিক্সাওয়ালা, চায়ের দোকান, অটোওয়ালাদের
জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো সে। খুব বেগ পেতে হলো না। এক বয়স্ক রিক্সাওয়ালা বললেন,
‘‘মালুম হ্য় সাব, নাইনসাফি হুয়া বহুত
উনলোগোঁকে সাথ। তিন সাল পেহেলে, এক এক্সিডেন্ট মে উও চার
চল বসে।’’
ট্রেনে ফিরতে ফিরতে শান্তনু ভাবে, যে কাল আফ্রীন
ছিল, আজ সে শাখী, আবার পরে হয়ত
সে অ্যানি হবে, কিম্বা হবে একটা ছোট পাখি।
ডাক্তারের কথা মতই কিন্তু ধীরে
ধীরে শাখী আগের কথা ভুলে গেলো সময়ের সাথে। সে এখন মা বাবার কোল আলো করা শাখী। ওকে
নিয়ে এবারে ছুটিতে শান্তনুরা মুর্শিদাবাদ যাবে, হাজারদুয়ারি দেখবে।