গোপাললাল
রোডে আমরা যে ভাড়া বাড়ীতে থাকি তাতে সাকুল্যে বারোটি ঘর। একতলায় থাকেন বাড়ীর
মালিকরা। জ্যাঠতুতো খুড়তুতো দুইভাই। রমেন সাধু আর উপেন সাধু। ওপরে পাঁচটি ঘরে দুই
ভাড়াটে। সম্পর্কেভাই বটে তবে অহিনকুল সম্পর্কটাই বেশী মানানসই বলা যায়। রমেন সাধু
লোকটি বেশ প্যাঁচালো, বদরাগী গোছের। সিড়িঙ্গি চেহারা,
সন্দেহসঙ্কুল চোখ।কাশীপুর গানসেল ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। ঘরে বউ বেশ
শাসন ত্রাসনে রাখে। বাচাকাচ্চা নেই। ছোট উপেন সাধু গোলগাল
হাসিমুখ ভালোমানুষ চেহারা,
বাড়ীর একতলাতেই ছাপাখানা চালায়। স্ত্রৈনমানুষ বললেও কমই বলা হয়।
বউটি আবার বেশ রসময়ী। ঘরের কাজ কর্তাই সামাল দেন, থাকার
মধ্যে দুটি যমজ মেয়ে, মামাবাড়ীতে দিদিমা কাছে থাকে তাই
চাপও নেই অতএব, কত্রী ঠাকরুন মুখে দোক্তা ঠুসে আলতাপায়ে
এর তার বাড়ী ঘুরে,সিনেমা দেখে উইন্ডো শপিং করে আরামসে দিন
কাটায়।বর বউ দুটিতে বড় ভাব। সেদিন ঘরবার করছি,কিছুতেই
আমার বরের সাথে মোবাইলে যোগাোযোগ করতে পারছিন। টানা সুইচড অফ দেখাচ্ছে, তার মানে বাবু মিটিংয়ে বসেছেন। ঘরের বিবিটির কথা আর মনে নেই। কি যে
করি। তখনই শুনি নীচে দুইভাইয়ের মধ্যে তুমুল গোলমাল। এক বাড়ির কর্তা বলছে আর এক
বাড়ির কর্তাকে -
-তোর বউটাই যত নষ্টের গোড়া। সারাদিন বাইরে বাইরে
এতো ঘোরাঘুরি কিসের? বাড়ীর বউ ঘোমটা টেনে সোয়ামীর সেবা
করবে ঘর সামলাবে তা নয়,ধিঙ্গি মাগী সেজেগুজে পরপুরুষের গা
ঘেঁষে বসে সিনেমা দেখছে,বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে”। তার উত্তরে নিরীহভাবে অন্য কর্তা
বলল
–তোর তাতে কি? ও সাজগোজের
পয়সা চাইতে তোর কাছে তো যায় না।
- সে আসবেও না,আমি
পুরুষমানুষ,বুঝলি?পুরুষমানুষ,তোর মত মাউগ্যা নই,মাগচাটা কোথাকার। - মুখ সামলে কথা বলবি বলে দিলাম,পুরুষমানুষ! তাও
যদি বাপ হবার ক্ষ্যামতা রাখতি। বউদি বাঁজা না তুই ক্ষ্যামতাহীন? মুখ খোলাস না সেজদা।
- কি যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা ? বউ সামলানোর ক্ষ্যামতা নেই বাপ হওয়া দেখাচ্ছিস হারামজাদা? অতো ক্ষ্যামতা তো বউকে একদিনের জন্য হলেও ঘরে আটকে দেখা দেখি।
ঝগড়া চলতেই থাকে,রোজকার মত।
বুঝলাম উপেনের বউয়ের দেখাদেখি আবার রমেনের বউ কোথাও যাবার কথা বলেছিল বরকে,তার থেকেই এ তুলকালাম। আমার সহানুভূতিটা উপেনের দিকেই যায়। বাড়ীর
বয়স্কা বউমানুষের এত বারমুখো হওয়া কিসের?এতে সংসার টেঁকে?
বরঞ্চ উপনের বউটার মধ্যে বেশ লক্ষ্মীমন্ত ভাব রয়েছে। ঘরোয়া,সুশীলা।
কিন্তু
এই ফাঁকে আটকে আর বেশী দেরী করা যাবেনা। আমি সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি। কিটিপার্টির দেরী
হয়ে যাচ্ছে। বান্ধবীরা সবাই এসে গেছে বোধহয়,সুরঞ্জন এই
কিটি পার্টি ফার্টি পছন্দ করেনা বলে যেতে বারন করে, আজও
অফিস যাবার আগে একপ্রস্থ কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে। কিন্তু ও
নিজে সারাটাদিন অফিসে ব্যস্ত,কোনদিনই ওর ফেরার কোন ঠিকঠিকানা থাকে না । ছেলেটাও হস্টেলে,ছুটিছাটাতে
কালেভদ্রে বাড়ী আসে,আমার সময়টা কাটে কি করে? অতএব সুরঞ্জনের বারনটাও আর মানা হয়না আমার। যেতে যেতে রমেনের চিপটান
মন্তব্য কানে আসে,“পরের বেলা আটিসুটি নিজের বেলায় চিমটি
কাটি”। আমি সদরদরজাটা খোলা রেখেই রাস্তায় পা রাখি।