-কাকু হয়ে গেছে তোমার বাইক
ফিট -হ্যাঁরে বিটকেল তোর নাম কি?
-ওই যে তুমি বলে দিলে
বিটকেল রাজু হাসল, বাইকটা স্টা্র্ট দিয়ে দেখে নিল ঠিক আছে
কী না। তারপর ছেলেটার পিঠ চাপড়ে বলল, “তুই তো চ্যাম্পিয়ান
রে। হ্যাঁরে পনের ষোলতেই বাইক সারাচ্ছিস। তুই তো বড় হলে বড়ো মিস্ত্রী হবি। ও রবিদা
তোমার ছোট মিস্ত্রীর যে তুলনা নাই।“ এই বলে রবিদাকে রাজু
জোরে হাঁক দিল। রবিদা তেল কালিমাখা ছোটখাটো নাদুস নুদুস শরীর নিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“গোপাল সত্যিই ভালো ছেলেগো রাজুদা।ওর জবাব নাই। রাজু গোপালের পিঠ
চাপড়ে বলল, আ্যাই তুই ইস্কুল যাস না কেন রে? রবিদা, ওর পরিবারের লোকজন কেমন? যে এই বয়সে খাটতে পাঠিয়ে দিয়েছে। রবিদা তার মুখ ভর্তি সদ্য ধান ওঠা
জমির মতন খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “ওর
বাড়ি? কে আর আছে। বাবাটা অন্ধ, মা
অসুস্থ, দিদির মাতাল গ্যাঁজাল স্বামী, তাকে নিয়ে দিদি অস্থির। মা যা হোক করে রান্না করে দেয়। ও খেয়ে এখানে
আসে। দ্যাখোনা এই কদিন আগে ওই এসে বলল, রবিদা আমাকে একটা
কাজ দেবে গো..আমি ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিলুম। মাসে দুহাজার দিই। ও তাতেই খুশ।
-হ্যাঁরে গোপাল তুই ইস্কুলে গেছিলি কোনদিন? গোপাল বলল, গিয়েছিলুম গো কাকু।মাষ্টার
দিদুমণিরা কত কেতা করে পড়ায়। বেশ মজাই পেতুম। ওরা আমাকে কতভাবে পড়াতে চেষ্টা করত।
তারপর মিড-ডে মিলের ঘন্টা পড়লেই মনটা বেলুন হয়ে পড়ত। তারপর খেতে বসলেই আবার চুপসে
যেতো। রাজু বলল, চুপসাতো কেন রে? -আর বলো কেন কাকু আমি তো না হয় খেয়ে নিতুম কিন্তু ওই বাবা মা দিদি এরা?
ঐ রবিদার কারখানার ওই মরাখেকো গাছের মত হা করে তাকিয়ে থাকতো একটু
খাবারের আশায়। জানো কাকু, আমরা নিজেদের বিপিএল প্রমাণ
করতে পারলাম না।না পেলুম বাবার প্রতিবন্ধী ভাতা। আমরাকি বড়লোক বলো। খেতে পাইনা
তবুও পাড়ার দাদা দিদিরা আমাদের দিলো না।বলতে গেলেই বলে আমার পার্টিকে ভোট
দিবি।বুঝিনা ভোট কী খায় না গায়ে মাখে। তারপরেই গেলো অক্কায় পড়াশোনা। পেট বাঁচাতে
তাঁদের বাঁচাতে রবিদার পায়ে এসে পড়লাম। আমার দিদিটা সারাদিন ঘুরে ঘুরে এর ওর বাগান
থেকে নারকেল পাতা এনে ঝাঁটা তৈরী করে। ঐ ঝাঁটা বিক্রিকরে যা পয়সা পায় জামাইদাদা
এসে দিদিকে মারধোর করে পয়সাগুলো নিয়ে গাঁজা মদের দোকানগুলোকে বড়লোক করে। -হ্যাঁরে গোপাল তোর কোথায় বেড়াতে ইচ্ছে করে না? রাজু বলল।‘আমার এই বাইকটা ঠিককরে দিলি তোকে
আমি একদিন অনেকদূর বেড়াতে নিয়ে যাবো। -কোথায় গো রাজুকাকু
কলকাতা? -কলকাতা? কলকাতা কি তুই
জানিস। কলকাতা দেখেছিস? -হ্যাঁগো দেখেছি তো। কেন দেখব না।
প্রত্যেক এ পার্টি ও পার্টি কতো পার্টি একটা ঢাউস বাসে করে চা পাউরুটি গুঘনি দিয়ে
সারাদিন কলকাতার একটা মাঠে বসিয়ে দেয়। তারপর কতো কায়দা করে মঞ্চে কতো বক্তৃতা দেয়
কিন্তু আমাদের অবস্থা একই। আমাদের পাড়ায় অনেক ছেলে। তারালোকর বাড়িতে কাজ করে।
একদিন এক দিদি এসে বলল আমরা না কি শিশু শ্রমিক। আমাদের দিয়ে রবিদা কাজ করাচ্ছে।
রবিদার না কি জেল হবে। আচ্ছা বলতো কাকু রবিদার যদি জেল হয় আমরা খাবো কি? আমরা তো মরেই যাবো না খেয়ে। কতো কায়দা। -হ্যাঁরে
তুই এতো কিছু জানিস? অবাক হয়ে রাজু জিজ্ঞাসা করল।
-জানো কাকু দিদি আমারগোপাল
পূজো করে। আমি খুব রেগে যাই। ঘরে একটা ক্যান্ডারে গোপালকে ডেকে ডেকে বলে আয় গোপাল
ঘরে আয়। ওকে আমি বলি দিদি তুই ভালো হয়ে থাক। আর গোপালকে পূজো করিস না। আর গোপালকে
ডাকিস না। আজকাল দিনেগোপালরা ভালো থাকে না রে।ভালো থাকলে কষ্ট পায় না হলে কংস হয়ে
যয়। রাজু একটু ইয়ার্কি করে বলল, সেটাও তো জানিস দেখছি।
-ও কাকু জানব না। রাতের
বেলায় তো না ঘুমিয়ে যাত্রা দেখি, কংস বধ, আজকের নিমাই, কতো কি যাত্রা। তাই একটু শিখে
ফেলি। এই বলে মুচকি হেসে অদ্ভুতভাবে সে চলে গেল। দোকানের ভেতরে রাজু বাইক নিয়ে
অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হল। আর সারাদিনটা নিজের ছেলে আর গোপালকে মেলাতে চেষ্টা করল।
আর বারবার গোপালের কথাগুলো তার কান বাজছিল।