গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

পাঠ প্রতিক্রিয়া

গল্প সংকলন ‘বৃষ্টির জানালা ও অন্যান্য গল্প’
লেখক - বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
আলোচক - ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প সংকলন ‘বৃষ্টির জানালা ও অন্যান্য গল্প’ পড়লাম ষোলটি সুখপাঠ্য গল্প নিয়ে বিপ্লবের এই গল্প সংকলন । কয়েকটি গল্প এই পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল । আমার জানা ছিল বিপ্লবের প্রথম পরিচয় কবি । বলা ভালো, এই সময়ের তরুণ প্রজন্মের প্রধান কবিদের দলেই থাকবেন তিনি । কিন্তু বিপ্লব যে সংবেদনশীল কথাকার সেটা জানান দিল এই সংকলনটি । জেনে আশ্চর্য হলাম, বিপ্লবের গল্প লেখার নান্দীপাঠ নব্বইএর দশকের শুরুতেই – ১৯৯২তে । তাঁর প্রথম গল্প ‘কাঁচা লঙ্কা ও ভাঙা সাইকেল’ এই সংকলনেও প্রথমেই ঠাই পেয়েছে ।
সংকলনটির প্রচ্ছদলিপির লেখক পরিচিতিতে প্রকাশক লিখেছেন লেখকের গল্পগুলিতে “ অক্ষরের রিফিলে মেঘ ঢেলে তিনভাগ বৃষ্টি ... আর বাকি একভাগ ? কবিতার গানছায়া ভেদ করে সাব অলটার্ন মানুষের ঘামগন্ধে আবর্তিত তাঁর গল্পের ইলেকট্রন ...”বাকি একভাগ বলে জিজ্ঞাসার চিহ্ন দিয়েছেন । আমি বলি বাকি একভাগ মাটির গন্ধ আর প্রান্তিক মানুষের স্বপ্ন – অসক্ত কিন্তু দৃঢ়বদ্ধ মুঠোয় আগলে রাখা স্বপ্ন । ভাঙা সাইকেলে কাঁচা লঙ্কা ফেরি করা হরিদয়ালের স্বপ্ন, সন্তানের জন্য জগন হাজরার স্বপ্ন । বিপ্লবের গল্পগুলিতে আমাদের চেনা ছকে বাঁধা  নর-নারীর সম্পর্কের টানা-পোড়েন নেই । নেই সুখী সুখী মানুষের আত্মযুদ্ধ । তিনি গল্পের উপকরণ সংগ্রহ করেছেন তাঁর দেখা প্রতিরোধহীন সময়ের প্রান্তিক মানুষের রোজনামচা থেকে ।
বিপ্লবের চরিত্রগুলি গল্পের চেনা বাঁধুনিতে হাজির হয়নি তাদের বিষণ্ণতা কিংবা পাওয়া-নাপাওয়ার বৃত্তান্ত নিয়ে । জীবনের আশ্চর্য বোধ থেকে লেখক খন্ড খন্ড দৃশ্য লিখেছেন, চরিত্র নির্মাণ করেছেন আর সেই দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে পাঠককেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন যেন, লেখকের একটি গল্পের পংক্তি ধার করেই বলি ‘শব্দ ও দৃশ্যের শুভেচ্ছা বিনিময়’ । আর শব্দ ও দৃশ্যের সংবেদনশীল ব্যঞ্জনায় একটা বার্তা সঞ্চারিত হয় ‘মানুষের লড়াইএর গল্প কখনও ফুরিয়ে যায় না’ ।
দেবাশিস সাহার শোভন প্রচ্ছদ ও মুদ্রন পারিপাট্যে আশি পৃষ্ঠার বইটির দাম একশ’ টাকা । প্রকাশক পাঠক প্রকাশনা । বিপ্লবের ‘বৃষ্টির জানালা ও অন্যান্য গল্প’ পাঠক সমাদ্রিত হবে বলেই আমার বিশ্বাস