স্মৃতির নদীতে সাঁতরে
চাঁদের আলোয় সাদা পাল তোলা নৌকা দূর থেকে সপ্নময় লাগছে। তারা ভরা
জোছনা আলোকিত মাঠ নদির দু'ধারে ,একটু দুর থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের ডাক...মশাগুলো পিনপিন
করছে পায়ের কাছে,ওরা সংখ্যায় বাড়তে লাগলো
ক্রমেই ।পাশ কেটে যাওয়া নৌকোর ভেতরের লন্ঠনের আলোয় গোল হয়ে বসে মাঝিদের ভাত খাওয়া
দেখে পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো মনে হলো সুমন্তের ।
এই তোমার ক্ষুধা লাগেনি ? সেই কখন থেকে ঘুরছি আমরা ,আমার তো ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে রাত্রি!
হুম, ঘুম আর খাওয়া এই তোমাকে পেয়ে বসেছে
কি যে বলোনা কখন ঘুমাতে
দেখলে বলো ?
দেখোনা চাঁদের আলোয় বাইরে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ...আমি একটু
গলুইয়ের উপরে শুয়ে জলেদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে আসি ?
রাত্রি, আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে ।
মাঝি, ও মাঝি ভাই ভিড়ান নৌকা ।
রাস্তায় টাঙাগুলো কেমন ঢুলে ধুলে ঝুমঝুমি বাজিয়ে চলছে, নিঝুম রাতের টাঙার চাকার খসখস শব্দে পাশাপাশি ফুলোয়ালীদের
ভিড়ে বাঁয়া তবদলার ঠুক ঠুক আর তানপুরার সা পা সা বাধার শব্দ ।মির্জাপুরের মাছিন্দা
ঠেলে ,এলাহাবাদ বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দির, পানের দোকান আর সুরেলা মিষ্টি সারেঙ্গী ,তার সানাইয়ের হৃদয় নিংড়ানো কান্নায় ভেসে যাচ্ছে লখনোউ
।কুতূহল আর চেপে রাখা গেলোনা কখন নিজের অজান্তে রাত্রি চলে গেছে দরজার সামনে অজানা
...
ম্যায় গান শুনুংগী আপকো
শুনায়েংগী আপ ?
আদাব , আদাব বড়ি মেহেরবানী আপকো জরুর শুনেয়েঙ্গী মাগর আপ ? কাঁহাছে ?বৈঁঠিয়ে
তো জারা ...
ফরাস পাতা সারা ঘরময় ,দেয়ালজুড়ে বেলজিয়াম কাঁচে টুকরো টুকরো থর থর করা বুক
কাঁপানো সজ্জা ।
বুদ্ধিদীপ্ত চঞ্চল চোখের এক সুন্দরী গায়িকা পাশে সারেঙ্গী বাজনার
টানে টানে ঠুংরী সুরের লচক,গমক গায়িকার মুখের ভংগী সব
মিলিয়ে বিমুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই । জওহর বলে এসে একজন ডাক দিলো মেয়েটিকে ...
রাত্রি যাবেনা ? ফিস
ফিস করে উচ্চারণ করলো কোনো রকমে সুমন্ত ।এ তোমার ওমরাউজানের রেখা নয় আর শোনো লউখনউ
হলেই এখানে ওমরাউজান থাকেনা চলো ... আমাদের যেতে হবে টিকেট কাটা আছে রাতের ...
আহা, দেখো দেখো ওর নাকের হীরের
নাকছাবিটা আর দেখো ফিনফিনে কালো রেশমি কালো চুল ওর দেখোইনা ...মনে হচ্ছে যেনো
বিষন্ন বিকেলের অলক উড়ছে ...চোখের সুর্মা মনে হচ্ছে ঘনো কালো মেঘের বন্যা বয়ে যাবে
।
কি যে তোমার ভুত ঢুকেছেনা
উঠো তো চলো...
ওকে কিছু দেবোনা আমরা গান
শোনালো এতো সুন্দর !
ট্রেনের সময় মনে নেই তোমার
দিল্লির ট্রেন ধরতে হবে আমার আজ রাতেই চলো...।
দুপুর গড়িয়ে বিকেলে এসে ঝোপ
জংগলের ধার ঘেসে ময়ূর দেখবার ইচ্ছে মাথা সেই যে চেপেছিল সুমন্তের
যদি মাঝে মধ্যে দুএকটা বন
মোরগের দেখা মিলেছিলো আর অসংখ্য অদৃশ্য ঝি ঝি দের ডাক সাথে সাথেই ছিলো ।
ঝোপ-ঝাড়ের শরীর থেকে এক ধরণের অসভ্য গন্ধ আসে কেমন করে ওঠে মন কখনো
কখনো তা প্রলয়ঙ্করী রূপ ও নিতে চায় কিন্তু; রাত্রির
তখন নিজেকে কেমন অসহায় মনে হয় ,মনে
হয় সেই যে চিহ্ন ছোঁয়া গন্ধ তা তো এখনো লেগে আছে!
কিছুতেই সরছেনা । আসোলে রাত্রি নিজেই অনন্তকাল এই স্পর্শ বয়ে বেড়াতে চাইছে সে নিজেই ।
এই সুমন্ত সুমন্ত...শুনতে
পাচ্ছো...শূনো না ...আজ শুধু রাতভর আকাশের তলে দিল্লী দেখবো কেমন ?
তাইনাকি ? তোমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি ?
হ্যাতো,হচ্ছে তো... দিল্লী ফোরড ,মিন্টু রোড দিল্লী গেইট ,লাইট এন্ড সাউন্ড সব সব রাতের জোছনায় মোঘলদের স্থাপনা কেমন রহস্যের
হাতছানিতে ডাকছে যেনো...
দেখেছো কেমন রহস্যে ঘেরা সব
? মনে করো সম্রাট শাহজাহান এখান দিয়ে হেঁটে গেছে কোন এক
বিকেলে বা সন্ধ্যায় ...
মমতাজ মহল অন্দর থেকে চেয়েছিল ...এই জানো এখানেই মেলা বসতো ,নানা রকমারি পসরা সাজিয়ে সুন্দরী নারীরা সেজে গুঁজে
হাসি তামাশায় রঙ ঢং করে মাতিয়ে রাখতো ...
তোমার না কি হয়েছে ...বলোতো
রাত্রি ! সেই কখন থেকে আবোল তাবোল বকেই যাচ্ছো ...
আমি দিব্যি দেখতে পাচ্ছি সুমন্ত তুমি পাচ্ছোনা ওই যে শব্দ শুনতে
পাচ্ছোনা ঘোড়া আসছে এক সাথে অনেক ঘোড়ার খুঁড়ের ? ভাল করে কান পাতো ,শুনতে
পাবে ,এখানে মেলা বসেছে মমতাজমহল তার সখী বাঁদিদের নিয়ে মেলায়
হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে পাচ্ছো শুনতে ?
নাহ্ , তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।
না , আমার মাথা ঠিক আছে । তুমি
কথা দিয়ে কথা রাখোনি । তুমি
বলেছিলে কাশ্মীর নিয়ে যাবে তবে কেনো আমায় এখানে নিয়ে এলে আর এলেই যদি কেনো এখানে থাকতে দিচ্ছোনা ? আমি আমার আমাকে এখানে খুঁজে পেয়েছি ।ওই তো দেখছোনা ঐ
লাল ইটের গম্বুজ কেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমার ছেলেবেলার সময়ের মতো !
জ্যোতি, চলো সোনা যাই আমরা, না হয়
ট্রেন মিস করবো ,খুব ঝামেলা হবে এদিকে টাকাও
ফুরিয়ে এসেছে ।