কুঁ-ঝিকঝিক, রেলগাড়ি । শহর ছাড়িয়ে সবুজ মাঠ, কত রকম গাছ-গাছালি আর প্রান্তর পেরিয়ে ধূপখালি স্টেশন। সেখান থেকে
ছলাৎ-ছল-ছলাৎ নদীতে নৌকো চড়া। নদীর ঢেউয়ের বুকে বৈঠা পড়ে আর ছপ ছপ শব্দ তরঙ্গ
হয়ে বাজে। রুনি কান পেতে সেই শব্দ শোনে। হাওয়ার শব্দ ওঠে কখনও শন্ শন্ শন্। কান
পেতে এই শব্দমালা শুনতে শুনতে আর খুব সুন্দর নদী-নালা-ঘাট, মাঠ বন পেরিয়ে রুনি একসময় পৌঁছে যাবে ভুবনপুর গ্রামের
দাদুর বাড়িতে।এই প্রথম রুনির ট্রেন, নৌকো
আর গ্রাম দেখা সবকিছুই একসাথে।
নদীর ঘাটে নৌকো এসে থামে। নৌকোর গলুই থেকেই নিচে
তাকিয়ে রুনি দেখে অ-নে-ক কাদা। রুনির বাবা তখন এগিয়ে গিয়ে দু’তিনজন লোকের সাথে কথা বলছিলেন, মা আর রুনি দাঁড়িয়ে পড়েছে দেখতে পেয়ে ওর বাবা কি
করে যেন কাদা মাড়িয়েই এলেন ওদের কাছে। বাবা রুনিকে কোলে তুলে নিয়ে আর মা’র হাত ধরে সাবধানে হেঁটে হেঁটে শুকনো জায়গাতে এসে
রুনিকে নামিয়ে দিলেন। কোলে তুলে নেবার মত ছোট্টটি যদিও আর রুনি নেই তবে খুব বড়ও
কিন্তু নয় সে। তবে বাবা কোলে নেওয়াতে ওর একটু একটু লজ্জা লাগছিল। শুকনো জায়গাতে
দাঁড়িয়ে রুনি দেখল একটু আগের নীল আকাশটা কেমন যেন ছাই ছাই রঙের হয়ে গেছে। বাবা বললেন, বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে, চল তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে। এবারে রুনি উঠল রিক্সা-ভ্যানে। সামনে
একজন চালক আর পিছনে একটা বড় জায়গাতে ওরা তিনজন বসে গেল। তিন চাকার রিক্সাভ্যানটি
চলতে লাগল ভেঁপু বাজিয়ে।যেতে যেতে রুনি মুগ্ধ হয়ে দেখল সবুজ ধান ক্ষেত। ক্ষেতের
মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পথ তার নাম মা বলে দিলেন আলপথ। বাতাস লেগে
ধানক্ষেতের ধানগুলো এর ওর গায়ে যেন গিয়ে পড়ছে। ও দেখছিল গাছের সবুজ আর
ধানক্ষেতের সবুজ দুটো একেবারে আলাদা। কি সুন্দর যে লাগছিল ওর।তারপর এক সময় দাদুর
বাড়ি এসে গেল। রুনি তাকিয়ে দেখে বাড়ির বাইরেই দাঁড়িয়ে দাদু ওদের জন্য অপেক্ষা
করছেন।
২.
এবার রুনিদের স্কুলের গরমের ছুটি পড়তে
পড়তে অনেক দেরী হয়ে গেছে জ্যৈষ্ঠের শেষের দিকে পৌঁছে ওর ছুটি শুরু হয়েছে।
ভুবনপুরের দাদুর বাড়িতে এই ছুটি কাটাবার জন্য প্ল্যানটা প্রথমে ছিল রুনির বাবার
পরে মা’ও রাজী হয়ে গেলেন। রুনির দাদু দিদা তো শহরেই থাকেন
কিন্তু মুকু দাদু অর্থাৎ মা যে দাদুকে মামা বলে ডাকে্ন সেই মুকেশ দাদুর অল্প
কিছুদিন আগে নিজের গ্রামের বাড়িতে এই ভুবনপুর গ্রামে ফিরেছেন।এখন অবশ্য রুনির
দিদা গ্রামে নেই, তিনি গেছেন তিনমাসের জন্য
তাঁর ছোট ছেলের কাছে লন্ডনে। দাদু একা বলেই বাবা আর মা মিলে এই প্ল্যানটা এমন
করেছেন যাতে বাড়িতে অল্পকিছুদিন রুনিরা থাকলেও বাড়ি ভরে থাকবে দাদুরও একা লাগবে
না। রুনিদের দাদুর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাবা আবার শহরে ফিরে গেছে্ন। রুনির দিনগুলো
এখন কী যে আনন্দে কাটছে সে বলে বোঝানো যাবে না কাউকে। ভোরের আলো ফুটলেই রুনির ঘুম
ভেঙে যায়। ঘর থেকে ও তখন আলোগোছে দরজা খুলে উঠোনে এসে দাঁড়ায়। ও দাঁড়াতেই ওর
গায়ে হাওয়া এসে মিষ্টি পরশ বুলিয়ে দেয়। আলতো পায়ে কখনও উঠোনের পুব দিকের
পায়রার খোপের কাছে এসে দাঁড়ায় কখনও আবার পেয়ারাতলায় যায়। মা ঘুম ভেঙে রুনিকে
একদিনও বিছানায় দেখতে পান না। ক’দিন
আগে এ নিয়ে খুব রেগে গেছিলেন মা, ওকে
বলেছিলেন, কাউকে না বলে অত ভোরবেলা ঘরের বাইরে বেরোতে নেই।
পুকুরঘাটেও একা একা যেতে মা নিষেধ করেছে্ন, তাই
রুনি পুকুরঘাটে যায়না ঠিকই কিন্তু সকালবেলার এই উঠোনে না বেরিয়ে ও পারে না। ও
উঠোনে এসে দাঁড়াবার একটু পরেই মুকু দাদু উঠে পড়েন ঘুম থেকে, খড়ম পায়ে দাদু ওর পাশে এসে দাঁড়া্ন। তারপর খোপ খুলে
দিয়ে পায়রাগুলোকে রুনি আর দাদু মিলে খাবার দেয়। ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে খুঁটে খুঁটে
সব খাবার খেয়ে বাড়ির ওপর দিয়ে উড়তে থাকে গোল হয়ে। তারপর সবগুলো পায়রা আরও
ওপরে উঠতে উঠতে ছোট হয়ে যায়, একসময়
চোখের বাইরে চলে যায়। পায়রাগুলো উড়ে গেলে রুনি আর দাদু পুকুরঘাটে গিয়ে বসে।
ঘাটের পাশেই একটা লেবুর ঝোপ আছে, ওখান
থেকে লেবুফুলের গন্ধ ভেসে আসে। রোদের আলো এসে পুকুরের জলে পড়ে কেমন চিকচিক করতে
থাকে রুনি তা মুগ্ধ হয়ে দেখে।
৩
বেলা বাড়লে রুনির সাথে খেলার সঙ্গী
জুটে যায় পাশের বাড়ির বিজন, রেশমা
আর আরেকজন সঙ্গী। ওর নাম ভুলু। চারজনে মিলে হৈ হৈ করে খেলায় মেতে ওঠে। বিজন রেশমা
গাছের পাতা বুনো ফুল আর লাল পোড়া মাটি দিয়ে রান্নাবাটি খেলে। মাঝে মাঝে পুতুল
নিয়েও বসে ওরা। আম গাছের নিচে দাদুর বানিয়ে দেওয়া দোলনাতে দোল খেতে খেতে কখন
যেন দুপুর এসে যায়।তখন মা রুনিকে স্নানে নিয়ে যান। আর বিজনরা যে যার বাড়ি। ভুলু
লেজ নাড়াতে নাড়াতে তখন ছায়ায় গিয়ে বসে।
রুনির খুব ইচ্ছে
অন্যদের মত জলে সাঁতরে পুকুরে স্নান করার। কেমন সুন্দর সবাই ঝুপ ঝুপ ঝুপ্পুস করে
জলে লাফিয়ে পড়ে, ওরও তেমন ইচ্ছে করে। মাকে
রুনির ইচ্ছের কথা জানাতেই মা ‘না’ বলে দে্ন। আজও রুনি মা’কে বলছিল, মা আমিও ওদের মত করে স্নান
করব। ঠিক পারব দেখো। মা কিছুতেই ওকে নামতে দেবেন না। এসময় কোথা থেকে যেন মুকু
দাদু সেখানে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, সুনু
মা কি হয়েছে। রুনির কি চাই?
রুনির মা দাদুকে দেখে নরম গলায় জবাব দিলেন, মামা দেখুন না ও সাঁতার জানে না তবু জেদ করছে জলে নামবে
বলে।
দাদু হেসে বললেন, তো কি
আছে! এখন এই ছুটিতে ও তো সাঁতার শিখে ফেলতে পারে। তুই কেন বাধা দিচ্ছিস?
রুনি দাদুর কথা
শুনে খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠল। আর রুনিকে ঠেকায় কে। এবার ও ঝুপ্পুস করে জলে লাফ
দিতে পারবে। মা’র হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য রুনি আপ্রাণ
চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু মা ওকে ছাড়লে তো।
ওর হাত ধরে থেকে রুনিকে মা বললেন, চল
থেকে তোকে আমি সাঁতার শেখাব,তার
আগে এই ঘাটে তুই চুপটি করে একটু বস। রুনিকে মা ঘাটে বসিয়ে রেখে নেমে গেলেন
জলে।রুনি দেখল,
প্রথমে মা ডুব দিলেন একটা তারপর
আবার উঠলেন,
আবার টুপ করে ডুব দিলেন। ও মা!
মাকে রুনি আর দেখতেই পাচ্ছে না যে.. ও মা কোথায় তুমি? রুনি এদিক ওদিক তাকিয়েও মাকে আর খুজেঁ পাচ্ছে না।মা কি
ডুবে গেলেন না কি! ঠিক তক্ষুণি হুশ করে মা ভেসে উঠলেন আবার।
তারপর রুনিকে মা জলে নামিয়ে দিলেন। প্রথমবারেই রুনি হুটোপাটিতে
জলে প্রায় ডুবে যাবার অবস্থা কিন্তু মা তো সাথে আছেন, অমন সাঁতারু সাথে থাকলে রুনি আর ডোবে কি করে। কদিনের
মধ্যেই রুনি সাঁতার শিখে ফেলল।
৪
গ্রামে থাকতে রুনির খুব ভালো লাগছে।
বিকেল হলে ও বিজনদের সাথে এদিক ওদিক ঘুরতে যায়। ওদের মধ্যে বিজনের আবার খুব সাহস।
বাঁশবনের মধ্য দিয়ে, জংলা ঝোঁপের ফাঁক গলে ও
ভেতরে ঢুকে যায়। মা ওকে বলেছেন, বর্ষাকালে
অনেক সাপ এদিক সেদিক দিয়ে চলাচল করে। সাপে কাটলে খুব কষ্ট হবে। বিজন গেলেও রুনি
তাই ঝোপের মধ্যে সহজে ঢুকতে চায় না। রুনিকে একদিন পাখির বাসা পেড়ে এনে দিয়েছিল
বিজন।সেই বাসাটায় আবার দুটো পাখির ছানাও ছিল। রুনির প্রথমে আনন্দ হলেও যখন মনে
হয়েছে মা পাখিটা এসে যখন খুঁজবে ওর ছানাদুটোকে তখন কি হবে। বিজনকে বুঝিয়ে
সুঝিয়ে আবার বাসাটাকে ও গাছের ডালে বসিয়ে দিয়ে এসেছে।
আজ দুপুর পেরোবার
পরই বিজন রেশমা ভুলু এসে রুনিকে ডেকে নিয়ে গেল উঠোনে। ঘরে নয় ওরা আজ বাইরে
বেরোবে ঠিক করল। তারপর সবাই মিলে বেড়াতে বেরোলো। হাঁটতে হাঁটতে আলপথ পেরিয়ে বেশ
দূরের একটা জংলা মত জায়গা দেখিয়ে বিজন বলল, চল ওই
জমিদার বাড়িতে আজ যাই। শুনেই রুনির মনে ভয় আনন্দ মিশিয়ে একরকমের উত্তেজনা তৈরি
হল কিন্তু বাধ সাধল রেশমা। ও বলল, বুড়ো
বটতলার নিচ দিয়ে আমি কখখোনো ঐ ভাঙা বাড়িতে যাব না। ওখানে গলাকাটা পেত্নীরা আসে, মা বলেছে জ্যান্ত খেয়ে নেবে আমাকে পেলে। বিজন তো সাহসী
ছেলে শুনেই চোখে তাচ্ছিল্য ফুটিয়ে বলল, আরে
যা যা ভীতুর ডিম কোথাকার। তোদের যেতে হবে না আমি একাই যাচ্ছি।বিজন ওরকম করে বলাতে
রুনিও বলে বসল রেশমা না গেলেও ও বিজনের সাথে যাবে। কি করা আর রেশমাও ওদের সাথে
চলল।
বটতলাটা পেরোতে
রুনিরও কেমন ভয় ভয় করতে লাগল।তখন বিকেল হলেও এদিকটা বেশ শুনসান। অনেক দূরের নদী
থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। চারদিকে কেমন স্তব্ধ একটা ভাব। ওরা আস্তে আস্তে এগিয়ে
গেল পুরোনো বাড়িটার কাছে।বাড়ির সামনে বড় বড় কিছু গাছ, রুনি কোনো গাছের নাম জানে না, বিজনকে জিগ্যেস করে শুনল এগুলো দেবদারু গাছ। বাড়ির
ভেতর ঢুকে পড়ল ওরা। খুব ঠান্ডা আর শান্ত একটা বাড়ি যেখানে কেউ বাস করে না। ভয়ের
বদলে এবার ওদের মনে কৌতুহল জাগতে শুরু করেছে। ঘোরানো সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলা
ছাড়িয়ে ছাতে। ওরা সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল ছাতে। বাড়ির আনাচে কানাচে চারদিকে
ঝোপঝাড়, ছাতেও এখানে সেখানে গাছ উঠেছে। বিজন ছাত থেকেই দেখতে
পেল ঝোপের মধ্যে ডাসা পেয়ারা ভর্তি একটা গাছ। দুদ্দাড় নেমে পড়ে বিজন গাছে উঠে
পেয়ারা পাড়তে লাগল। ঠিক তখুন গাছের নিচে দাঁড়ানো রুনি আর রেশমা পায়ে কাছে খসখস
শব্দ্ শুনে চমকে তাকিয়ে দেখে একটা সাপ ওদের খুব কাছাকাছি হেলেদুলে যাচ্ছে। ভুলুটা
ঘেউ ঘেউ করে উঠতেই বিজন তাকিয়ে দেখে রুনি আর রেশমা ভয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে।
মুহূর্তের মধ্যে বিজন গাছ থেকে নেমে কোথা থেকে একটা ডাল জোগাড় করে এনে এক ঝটকায়
সাপটাকে তুলে দূরে ছুঁড়ে মারল।তারপর রুনি আর রেশমাকে নিয়ে একছুটে সেখান থেকে
বেড়িয়ে দৌড়।
উফফ্ দৌড়াতে দৌড়াতে রুনির মনে হলো কী সাংঘাতিক একটা ব্যাপার হত
আরেকটু হলেই।
বাড়ি ফিরে মা’কে রাতে সব বলতে মা রুনিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে
বললেন, মামণি বিপদ কি বলে কয়ে আসে কখনও। আমাকে না বলে আর কখনও
যেন এমন কাজ করতে যেও না। রুনিও মনে মনে ভাবল মা তো ঠিক বলছে্ন। মা’কে রুনি জড়িয়ে ধরে বলল, স্যরি মা আর কখনও এমন করব না।
৫
রুনি এখন সাঁতার কাটে বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে। একটু একটু করে গাছে চড়তেও শিখেছে ও। মুকু দাদুর সাথে মাঝে একদিন গিয়ে মেলা আর সার্কাস দেখে এসেছে।কিন্তু এত আনন্দের দিনগুলো সব ফুরুৎ করে পালিয়ে যাচ্ছে বলে ওর মনে হয়। মা বলেছেন, আর মাত্র সাতদিন এখানে থাকা হবে তারপর আবার নিজেদের সেই শহরে ফিরতে হবে।
আজ সকাল সকাল রুনি
ঘুম থেকে উঠে শুনল খুব কাছ থেকে একটা পাখি ডাকছে টুন টুন করে। কতরকমের শব্দের সাথে যে রুনির পরিচয় হল এই কদিনে, ভাবতেই ওর ভালো লাগে। মুকু দাদু উঠোনে এসে দাঁড়ালে
রুনি দাদুকে জিগ্যেস করল, ওটা কি পাখি! দাদু বললেন, টুনটুনি দিদিভাই।রুনির মনে হল পাখিটা যেন ওকেই ডাকছে
রুন রুন করে। ভুলু এসে ওর কাছে দাঁড়িয়েছে এর মধ্যে। হঠাত তখন পাশের বাড়ি থেকে
শোরগোল ভেসে এল। মুকু দাদুকে পিছনে ফেলে রুনি দৌড়ে গেল সেই শোরগোল শুনে। ওর সাথে
পাল্লা দিয়ে ভুলুও দৌড়াচ্ছে। দুটো বাড়ি পরেই যেখান থেকে চিৎকার ভেসে আসছে
সেখানে ঢুকে রুনি শুনতে পেল ওদের দুবছরের ছেলেটাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রুনি দেখল, বাড়ির সকলে খোঁজাখুজির বদলে কান্নাকাটি আর হুলুস্থুলই
বেশী করছে। রুনি এদিক সেদিক শিশুটিকে খুঁজতে শুরু করল। ঘর উঠোন পেরিয়ে পিছনদিকের
পুকুরঘাটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে জলের দিকে চোখ রাখতেই দেখতে পেল পুকুরের যেদিকটা
জংলামত সে জায়গাটার কাছ ঘেঁসে একটা লাল কাপড়ের সামান্য অংশ যেন দেখা যাচ্ছে । রুনি
কোনো কথা না বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল জলে।সাঁতরে কাছে পৌঁছে দেখে যা ভেবেছিল তাই, ওই শিশুটিই জলে ডুবে গেছে। তবে এদিকটা জংলা বলে ওর
গায়ের কাপড়টা আটকে গেছে ঝোপের সাথে, ওর
শরীরটাও গভীর জলে তাই ডুবতে পারেনি তখনও কিন্তু অনেকটা জল পড়ে যাবার সাথে সাথে
পেটে ঢুকে গেছে বলে ও কাঁদতেও পারেনি। ততক্ষণে ভুলোও সাঁতরে চলে এসেছে ওর কাছে।
দুজনে মিলে শিশুটির কাছে গিয়ে তখন জোরে জোরে সবাইকে ডাকাডাকি করতে শুরু করেছে।
সাথে সাথেই এদিক ওদিক থেকে দু একজন এসে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই শিশুটিকে উদ্ধার
করল। তারপর ওরা্ সোজা শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে চলে গেল। রুনিও ওদের পিছে
পিছে হাসপাতালের দিকে দৌড়াতে লাগল। ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়েছিল বলে
শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হল।
রুনি আর ভুলু
বাড়ি ঢুকতেই মা দৌড়ে এসে রুনিকে জড়িয়ে ধরলেন। ততক্ষণে বিজন রেশমাও এসে গেছে।
মুকু দাদুও ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। উনি বললেন, সুনু তোমার মেয়ে আজ যে বুদ্ধিমত্তার সাথে সাহসী কাজটি করে দেখাল
তাতে করে সবার একটা শিক্ষা হয়ে গেল।
৬
ছুটি শেষ । এবার ফেরার পালা ।
রুনিদের নিয়ে
যেতে বাবা এসে গেছেন আগের রাতেই। সব গোছগাছ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরই ওরা বেরিয়ে
পড়বে। মুকু দাদু রুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন। পাশে এসে দাড়িয়েছে বিজন রেশমা
আর ভুলু।বাবাকে মা বোধহয় বলে দিয়েছিলেন, বাবা
রেশমা আর বিজনের জন্য খুব সুন্দর সুন্দর বই,চকলেট
আর জামাকাপড় এনেছে্ন। রেশমা আর বিজনকে রুনি সেই জিনিসগুলো দিল।
রিক্সা ভ্যান এসে দাঁড়াল। বাবা মা
আর রুনি মুকুদাদুকে প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালেন। মুকু দাদু রুনিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আবার এসো দিদিভাই। রুনির খুব মন খারাপ হচ্ছে। রেশমা আর
বিজনও মন খারাপ করে আছে। ভুলু মুকু দাদুর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে ঘনঘন লেজ নাড়িয়ে
যাচ্ছে।রিক্সায় উঠে রুনি ওদের দিকে ফিরে তাকাল… চোখ ভিজে গেল রুনির।
সবাইকে ছেড়ে রুনির একটুও
বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না ।