গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

সুমন্ত্র মাইতি

  
নীল শাড়ির ভাঁজে

সকালবেলার চা এবং খবরকাগজের ফাঁকে ফাঁকেই চোখটা বারবার মুঠোফোনের দিকে চলে যায় তৃণার ৷  ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিয়ে এসে দিনের প্রথম ফুরসত যাপনটা এভাবেই শুরু হয় তার ৷ খুব ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠা, সাংসারিক টুকিটাকি কাজকর্ম , তাতানকে রেডি করা , তারই মাঝে মিনতির আগমন , তাকে টুকটাক নির্দেশ দেওয়া, তাতানের স্কুলবাস আসা ইস্তক তৃণার কাজের বিরাম নেই ৷ সময়টা ছন্দবদ্ধ ভাবেই সাজিয়ে নিয়েছে সে ৷ বেশ একটা নিরুত্তাপ, দ্রিমি দ্রিমি ধীর লয়ের অভ্যস্ত অনায়াস সকাল, ঠিক যেন খুব লো ভল্যুমে বাজতে থাকা ভৈরবী রাগ ৷
ছন্দপতন যে  হয় না, তা নয় ৷ মিনতি ডুব দিল কিংবা ওর শরীর খারাপ হলো , এসবে তো একটু আধটু এদিক ওদিক হবেই ৷ কিন্তু তাতে সংসারের লয়ের তাল কাটে না ৷ তার জন্য কিংশুককে মনে মনে বেশ তারিফই করে সে ৷ অসম্ভব ঠান্ডা একজন মানুষ ৷ চাহিদা খুবই সামান্য এবং সেটুকু না হলেও কোনো অভিযোগ নেই ৷ তৃনা খুব গোছালো স্বভাবের ৷ সংসারের খুঁটিনাটির দিকে সদা সজাগ ৷ বাজার করা, রান্নার তেল মশলা থেকে শুরু করে কিংশুকের জামা কাপড় ফাইল গোছানো, তাতানের হোমওয়ার্ক, নোটস - এসবের দায়িত্ব সে নিয়ে নিয়েছে নিজের ঘাড়ে ৷ এবং ভালোবেসেই ৷ এই নয় যে কিংশুক এ সব দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নয় ৷ মাঝে মধ্যেই মৃদু প্রতিবাদ করে সে, আমাকেও তো কিছু দায়িত্ব দিতে পর তৃণা, সব নিজের কাঁধে নিয়ে নাও কেন ? হালকা হেসে তৃণা এসবের তোয়াক্কা করে নি ৷ কিংশুকও আর বেশি জোরজার করে নি ৷ খুব স্বাভাবিক নিয়মেই ও বুঝেছে, তৃণার তার প্রতি এই নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই ৷ বারোশ স্কোয়ার ফিটের এই সমর্পিত নিরাপত্তার স্বাচ্ছন্দ্যে আজ সে অভ্যস্ত ৷ 
নাহ , তৃণা খুব সুখী ৷ 
অনেকবার নিজেকে এই প্রশ্ন করেছে সে ৷ চেষ্টা করেছে খুঁজতে নিজের অপ্রাপ্তির হিসেব ৷ কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে সে বাস্তবের সামনে নির্ভীকভাবে দাঁড় করিয়েছে ৷ বলেছে, অপ্রাপ্তি খুঁজতে যাওয়া বৃথা ৷ বরং প্রাপ্তিটুকুই যা, সেটাই বা কম কি

তাতানটাও হয়েছে ঠিক তার বাবার মত ৷ শান্ত , ঠান্ডা, এই বয়সের ছেলেদের তুলনায় একটু বেশি পরিনত ৷ বাপ ছেলে দুজনের স্বভাবে আশ্চর্য্য রকম মিল ৷ তরকারিতে নুন কম দাও, বেশি দাও, পছন্দের পদ না রাঁধ কোনো হেলদোল নেই ৷ উপরন্তু মাঝে মাঝেই সে তাতানের টেবিল , জামা কাপড় ইচ্ছে করেই গুছিয়ে রাখে না ৷ তাতান কিন্তু ঠিক গুছিয়ে নেয় তারপর ৷ নিজেই লজ্জা পেয়ে তৃণা তারপর ফিরে যায় নিয়মানুবর্তিতায় ৷ বাপ, ছেলের নিরুচ্চার সমর্পনকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে সে ৷ 

তবুও এই অনায়াস অভ্যস্ততায় যাতে তাড়াতাড়ি ক্লান্তি না আসে, তার জন্য খুব সচেতন ভাবেই নার্সারী স্কুলের চাকরিটা  নেয় ৷ কিংশুকেরও পূর্ণ সমর্থন ছিল এই চাকরিতে ৷ খানিকটা সময় কাটবে , বাইরে গেলে মনটাও বেশ ফ্রেশ থাকবে , এটাই ছিল তার যুক্তি ৷ সে যুক্তি তৃণারও ৷
কিন্তু কয়েকদিন হলো এই ছন্দের কি তাল কেটে যাচ্ছে তার

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গ্রুপ মেসেজে গুড মর্নিং এস এম এস পাঠানো তৃণার বেশ কিছুদিনের অভ্যাস ৷ ইদানিং হোয়াটস-আপ এর দৌলতে তো আরো সহজ ৷ কয়েকজন বন্ধু বান্ধবীদের একসাথে গুড মর্নিং মেসেজ পাঠানোতে এক অদ্ভূত তৃপ্তি আছে ৷ কেউ সকালবেলা ঘুম ঘুম চোখে , কেউ ব্যাস্তসমস্ততার ফাঁকে আলগা চোখ বুলিয়ে নেবে কিংবা কেউ হয়ত খেয়ালই করবে না ৷ উত্তরও প্রত্যাশা করে না সে ৷ কেউ কেউ শুভেচ্ছা ফিরিয়ে দিলেও তার পর খেজুরে আলাপী প্রত্যুত্তরের কোনো ইচ্ছেও নেই তার ৷ সকালটা শুধু শুভকামনার , আড্ডার নয় ৷ কিন্তু ইদানিং কেন যে মন ইতি উতি বারবার শুনতে চায় মুঠোফোনের মৃদু ধাতব আগমনী ? কেন যে, কিসের টানে একফাঁকে চোখ বুলিয়ে নেয় স্ক্রিনে ?

গরিয়াহাটের চেনা দোকানটা থেকে বেরোতেই খানিক থমকে দাঁড়ায় সে ৷ শপিং মলের চেয়ে গড়িয়াহাট তৃণার বেশি পছন্দ ৷ টুকিটাকি কেনাকাটা, উইন্ডো শপিং, ফুটপাথে দরদাম , মাঝে মাঝে চেনা পুরনো বইয়ের দোকানে গিয়ে অল্প বিস্তর বই নিয়ে নাড়াচাড়া , এসবের কাছে শপিং মলের আরোপিত আরাম তুচ্ছ লাগে তার ৷ হুস করে কখন সময় কেটে যায় ৷ 
সেদিনও এরকম ঘন্টা দুয়েক কেনাকাটার পর চেনা দোকানটার ফুটপাথের অপরপ্রান্তে একটু থমকেই দাঁড়ায় ৷ 


মৃন্ময় উল্টো দিকের দোকান থেকে সিগারেট কিনছে ৷ প্রায় কুড়ি বছর হতে চলল, কিন্তু চেহারায় খুব বেশি হলে দৃশ্যত পরিবর্তন কিছু পাকা চুল এবং অল্প মেদ ৷ এছাড়া দাঁড়ানোর ভঙ্গি , সিগারেট ধরানোর কায়দা খুব চেনা ৷ অনেকদিন হয়ে গেল, তবু চিনতে ভুল হয় নি তৃণার ৷ ফুটপাথের ওপার থেকেই ডাক দিয়েছে , মৃন্ময়দা !!
মৃন্ময়ের দূর থেকে খানিক চিনতে না পারার রেশ কাটতে না কাটতেই তৃণা ফুটপাথের এপারে , চিনতে পারছ মৃন্ময়দা
চিনতে পেরেছে মৃন্ময় ৷ চিনতে পেরেই মুখে একরাশ বিস্ময় মিশ্রিত হাসি , তৃণা ? তুমি ? আরিব্বাস , চিনতেই পারছি না যে
- বাজে কথা বল না ৷ এতটাও বুড়িয়ে যাই নি ৷ হ্যা , তোমার মত না হলেও খুব বেশি পাল্টে গেছি কি
খানিক লজ্জা পেয়ে মৃন্ময় বলে : আরে না না ৷ সেটা বলি নি ৷ তা এখানে কি ব্যাপার
হাতের খান পাঁচেক ব্যাগ বীরদর্পে তুলে ধরে ভুরু নাচিয়ে বলে : বানিজ্যে , স্যার ৷
- তা বেশ ভালই বানিজ্য করেছ দেখছি ৷ একা, না কত্তাও এসেছেন
- না গো, একাই ৷ কর্তা তো অফিসে , ছেলে টিউশানে ৷ এরই ফাঁকে এক চক্কর মেরে গেলুম ৷
- বাহ, বেশ ৷ এখন যাবে কোথায়
- সন্তোষপুর ৷ এই যে এখান থেকে ট্যাক্সি ধরে নেব ৷ 
- তুমি সন্তোষপুর যাবে ? তাহলে পাঁচটা মিনিট দাঁড়াও ৷ আমিও বাইপাসের দিকে যাব , তোমাকে নামিয়ে দেব ৷ ট্যাক্সি ভাড়াটা না হয় আমায় দিও ৷
এই বলে তৃণাকে ওখানেই দাঁড় করিয়ে রেখে আসছি বলে হন্তদন্ত হয়ে পাশের ওষুধ দোকানটায় ঢুকে পড়ল ৷ খানিক পরে ফিরে এসে বলে, চল কাছেই গাড়ি পার্ক করা আছে ৷ 

মৃন্ময় দেব , কলেজে তৃনাদের চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র ৷ ওদেরই ক্লাসের শ্রাবনীর সাথে তখন ওর সম্পর্ক, সেই সূত্রেই কলেজে আলাপ ৷ শ্রাবনী আর মৃন্ময়ের আলাপ কলেজের আগে থেকেই ৷ কলেজে এসে প্রেম পরিনতি পায় ৷ ক্যান্টিনে, করিডরে আড্ডায় শ্রাবনীর সাথে থাকার দরুন ওদের সাথে সম্পর্কটা বেশ সহজ হয়ে যায় ৷ মৃন্ময় তখন কলেজে বেশ নামকরা ছাত্র , উজ্জ্বল, চৌকস, ভালো বক্তৃতা দেয় , ছাত্রমহলে মিষ্টি ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয়, সব মিলিয়ে শ্রাবনীর ওপর একটা চাপা ঈর্ষা সর্বদা থাকত মেয়েমহলে ৷ মৃন্ময় অবশ্য বরাবর সবার সাথে সহজ ব্যবহার করত এবং শ্রাবনীর প্রতি পূর্ণমাত্রায় বিশ্বস্ত ৷

ওদের বিয়ে হয় নি ৷ এর জন্য শ্রাবনীর ওপর কোনো রাগ নেই তৃণার ৷ খুব যুক্তি দিয়ে শ্রাবনী বিয়ে না করার কারণ বুঝিয়েছিল তৃণাকে এবং সেটাকে খুব যথাযথ মনে হয়েছিল তার ৷ প্রেম ভাঙ্গার যে তিক্ততা , সেটা খুব একটা দেখা যায় নি দুজনের মধ্যে ৷ সময়ের সাথে সাথে দুজনের সাথেই যোগাযোগ মিলিয়ে যায় তার ৷ তবুও
খানিকটা মেয়েলি কৌতুহলবশতই গোলপার্কের জ্যামে গাড়ি থামাতেই মৃন্ময়কে প্রশ্ন করে সে, বাড়িতে এখন কে কে আছে মৃন্ময়দা
হেসে ফেলে মৃন্ময় ৷
- মা, ভাই আর আমি ৷ 

তারপর খানিক থেমে , নাহ ! বিয়ে করি নি ৷ স্মৃতির ভারাক্রান্ততা কাটিয়েই বোধহয় তারও খানিক পরে সে বলে, ভেব না যে শ্রাবনীর দু:খে বিয়ে করি নি ৷ জাস্ট করা হয়ে ওঠে নি আর কি ৷ আর কথা বাড়ায় নি তৃণা ৷ এরপর একথা সেকথার ফাঁকে টুক করে পৌছে গেছে গন্তব্যে , যাবার আগে ফোন নম্বর নিয়ে, একদিন এস কিন্তু আমাদের এখানে ৷ এই গলি ধরে একটু এগোলেই আমাদের ফ্ল্যাট ৷

- আসবো, একদিন এসে তোমার কত্তার সাথে জোর আড্ডা মেরে যাব ৷
প্রথম উত্তরটা এলো দিন চারেকের মাথায় ৷ গ্রুপ মেসেজে ততদিনে ঢুকে গেছে মৃন্ময়ের নাম ৷চায়ের প্রথম চুমুক দিয়ে আলগোছে ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি ফেলতে আটকে গেল মৃন্ময়ের নাম দেখে ৷  - তুমি বুঝি রোজ সবাইকে ফোনে গুড মর্নিং মেসেজ পাঠাও ? বাহ ! বেশ ভালো অভ্যেস ৷ 
এটাকে ঠিক পাল্টা শুভেচ্ছা বলা যাবে না , খানিকটা প্রশ্ন ৷ চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে তৃণা লিখল , হমমম ! তুমি কি কর

মিনিট খানেক পর ওপার থেকে উত্তর এলো , শয্যা ত্যাগ করি নি এখনো ৷অনেকক্ষণ ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি অবশ্য ।
তার খানিক পরে আবার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে , একটু চা পেলে বেশ হয় ৷ 
খবর কাগজ থেকে চোখটা সরিয়ে তৃণা পুরোপুরি মনোনিবেশ করে ফোনে ৷ 
- খাচ্ছি, তুমি খাবে ? কর্তার জন্য আরো একবার চা বসবে ৷ বল তো তোমার জন্যও জল চাপাই ৷
বেশিক্ষণ উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নি, খানিক পরেই এসেছে উত্তর ৷
- বসাও, আমার কিন্তু স্রেফ এক চামচ ৷
পরের এস এম এস তৃণার , দিন দুয়েক পরে ৷ স্কুলের টিফিন টাইমের সময় খেযালবশত লিখে ফেলল , মৃন্ময়দা ৷ কি করছ ? লাঞ্চ হলো
উত্তর এলো ঘন্টাখানেক পরে ৷ 
- সরি ফর দ্যা লেট রিপ্লাই ৷ ভীষণ কাজে ফেঁসে গেছি গো ৷
- লাঞ্চ করেছ ? না করে থাকলে করে নাও ৷ 
- হমমম, করব ৷ 
ব্যাস, সেদিনকার মত কথোপকথন শেষ ৷ তারপর কিছুদিন আবার নিশ্চুপ, ফের হয়ত একদিন : - তৃণা, আজকে গরিয়াহাটের ওই দোকানটায় এসেছিলাম , যেখানে দেখা হয়েছিল ৷ তুমি কোথায়
- আর বোলো না, দু দিন ধরে জ্বর গো ৷ আজ স্কুলেও যাই নি ৷
- সে কি ? ওষুধ খেলে
- খেলাম এইমাত্র ৷ তুমি গড়িয়াহাটে কেন
- মায়ের ওষুধটা এই দোকান থেকে নি ৷ তাই আসতে হয় ৷

এরকমই টুকরো টাকরা কথার ফাঁকেই কিছুদিন পর তৃণা আবিষ্কার করে, ফোনের দিকে ইদানিং বড় বেশি মনোযোগ ৷ কেমন যেন একটা সামান্য টুকরো কথার অপেক্ষায় মন কেমন করা অনুভূতি ৷ কোথায় ? খেলে ? বাড়িতে ? অফিসে খুব চাপ ? ইত্যাদি অসম্পূর্ণ প্রশ্নের জালে ভীষণভাবে জড়িয়ে পড়তে চায় সে , এবং খানিকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই ৷ উত্তর খুঁজে পায় না কেন এই উথালি পাথালি ? কেন এই চাপা ঝড় সারাক্ষণ নিজের ভেতর ৷ তবে কি সে ..........,? 
নাহ , ভাবনাটা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে তৃণা ৷ সে তো কোনদিন অপ্রাপ্তির হিসেব করে নি ৷ অশরীরী উপস্থিতির প্রতি তার তবে কেন এই মোহো ? ইচ্ছে করলেই তো নিতে পারে তার খুব প্রিয় সেই কিংশুকের ঘামের গন্ধ , গভীর রাত্রে ঘুম ভাঙাতে পারে এখনো তার সেই প্রিয় পুরুষকে ৷ তবে কেন এই দ্যোতনা ? এ তো চোখে যেন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যায় খামতিটাকে , এক ঝটকায় দাঁড় করিয়ে দেয় আয়নার সামনে ৷
এমনি এক ঝড় বাদলার দিনে হঠাত একদিন, তৃণা ! তুমি এখনো গান গাও
বহু পুরনো স্মৃতি উস্কে দেওয়ার ফলেই হয়ত তৃণা খানিকটা প্রগলভ ৷
- হ্যা , আমি এখন পুরোপুরি বাথরুম সিঙ্গার ৷
- সে কি ? তুমি গান ছেড়ে দিলে ? এত সুন্দর গান গাইতে ৷ 

-
সে তো কবেই চুকে বুকে গেছে মৃন্ময়দা ৷- এ ভারী অন্যায় ৷ গানটা ছাড়া উচিত হয় নি তোমার ৷ এত সুন্দর গাইতে তুমি ৷
স্মৃতির ভেতরে খানিক ডুব দিয়েছিল হয়তবা, সেই সময়েই ফের ভেসে ওঠে স্ক্রিনে ৷
- কলেজের ফেয়ারওয়েল-এ তুমি গান গেয়েছিলে বেশ মনে আছে ৷ রবীন্দ্রসঙ্গীত  শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে প্রিয় ৷
- বাব্বা , তোমার মনে আছে ? এতদিন পরেও
খানিক নীরবতার পরে ফের উত্তর আসে ৷
- শুধু তাই নয়, এটাও মনে আছে তুমি সেদিন হালকা নীল এবং হলদে মেশানো রঙের একখানা শাড়ি পরেছিলে ৷ এলো খোঁপা, হালকা মেরুন রঙের লিপস্টিক এবং ডান হাতে একটা সোনার চুড়ি ৷ খুব সুন্দর লাগছিলে সেদিন ৷ ইচ্ছে করছিল তোমায় গিয়ে এই কথাটা বলি ৷
আজ তৃণা সমস্ত শংকা , সংকোচ এবং নিয়মের বেড়াজাল ভাঙবে ৷
- তাহলে সেদিন বলো নি কেন
- সেদিন বলার পরিস্থিতি ছিল না হয়ত ৷ তাই বলে উঠতে পারি নি ৷
- আজও কি বলার পরিস্থিতি আছে
- পরিস্থিতি তো আর পরিণতির মুখ চেয়ে তৈরী হয় না ৷ পরিস্থিতি তৈরী হয় মনে ৷ জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে এসে আজ হয়ত বা সেই সাহসটা পেলাম, অনেকদিন আগে সেই থমকে যাওয়া কথাটা বলার ৷ ভাবতে খুব ভালো লাগলো যে বলতে পারলাম ৷ 
নাহ , তৃণা আর উত্তর দেবে না ৷ এবং এটাও জানে উত্তরের প্রত্যাশাও করে না মৃন্ময় ৷ তার দায় শুধু কথাটা বলার ৷ উত্তর জানার নয় ৷ 

উত্তর দেবার দায় তৃণারও নেই ৷ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অসীম পরিতৃপ্তিতে সে তার আসন্ন বিদায়ী যৌবনকে ভিজিয়ে চলেছে ৷ হঠাত ভালোলাগার অনুভূতির জল চুইঁয়ে পড়ছে তার ঠোঁটে , গালে , চিবুকে, স্তনে এবং জঙ্ঘায় ৷ 
সেই হলদে আর নীল শাড়িটা আজ সে বের করবে ৷ বহু পুরনো স্মৃতি আর ন্যাপথিলিনের গন্ধ গায়ে মেখে সে আজ কিংশুকের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে ৷
- দেখো তো , এই শাড়িটা পরলে আমায় কেমন লাগে ?