সকালবেলার চা এবং খবরকাগজের ফাঁকে ফাঁকেই চোখটা বারবার
মুঠোফোনের দিকে চলে যায় তৃণার ৷ ছেলেকে
স্কুলবাসে তুলে দিয়ে এসে দিনের প্রথম ফুরসত যাপনটা এভাবেই শুরু হয় তার ৷ খুব
ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠা, সাংসারিক টুকিটাকি কাজকর্ম , তাতানকে রেডি করা , তারই
মাঝে মিনতির আগমন , তাকে টুকটাক নির্দেশ দেওয়া, তাতানের স্কুলবাস আসা ইস্তক তৃণার কাজের বিরাম নেই ৷ সময়টা ছন্দবদ্ধ ভাবেই সাজিয়ে নিয়েছে সে ৷ বেশ একটা
নিরুত্তাপ,
দ্রিমি দ্রিমি ধীর লয়ের অভ্যস্ত
অনায়াস সকাল,
ঠিক যেন খুব লো ভল্যুমে বাজতে থাকা
ভৈরবী রাগ ৷
ছন্দপতন যে হয় না, তা
নয় ৷ মিনতি ডুব দিল কিংবা ওর শরীর খারাপ হলো , এসবে
তো একটু আধটু এদিক ওদিক হবেই ৷ কিন্তু তাতে সংসারের লয়ের তাল কাটে না ৷ তার জন্য
কিংশুককে মনে মনে বেশ তারিফই করে সে ৷ অসম্ভব ঠান্ডা একজন মানুষ ৷ চাহিদা খুবই
সামান্য এবং সেটুকু না হলেও কোনো অভিযোগ নেই ৷ তৃনা খুব গোছালো স্বভাবের ৷ সংসারের
খুঁটিনাটির দিকে সদা সজাগ ৷ বাজার করা, রান্নার
তেল মশলা থেকে শুরু করে কিংশুকের জামা কাপড় ফাইল গোছানো, তাতানের হোমওয়ার্ক, নোটস
- এসবের দায়িত্ব সে নিয়ে নিয়েছে নিজের ঘাড়ে ৷ এবং ভালোবেসেই ৷ এই নয় যে
কিংশুক এ সব দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নয় ৷ মাঝে মধ্যেই মৃদু প্রতিবাদ করে সে, আমাকেও তো কিছু দায়িত্ব দিতে পর তৃণা, সব নিজের কাঁধে নিয়ে নাও কেন ? হালকা হেসে তৃণা এসবের তোয়াক্কা করে নি ৷ কিংশুকও আর
বেশি জোরজার করে নি ৷ খুব স্বাভাবিক নিয়মেই ও বুঝেছে, তৃণার তার প্রতি এই নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই ৷ বারোশ
স্কোয়ার ফিটের এই সমর্পিত নিরাপত্তার স্বাচ্ছন্দ্যে আজ সে অভ্যস্ত ৷
নাহ , তৃণা খুব সুখী ৷
অনেকবার নিজেকে এই প্রশ্ন করেছে সে ৷ চেষ্টা করেছে খুঁজতে নিজের
অপ্রাপ্তির হিসেব ৷ কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে সে বাস্তবের সামনে নির্ভীকভাবে দাঁড়
করিয়েছে ৷ বলেছে, অপ্রাপ্তি খুঁজতে যাওয়া
বৃথা ৷ বরং প্রাপ্তিটুকুই যা, সেটাই
বা কম কি ?
তাতানটাও হয়েছে ঠিক তার বাবার মত ৷ শান্ত , ঠান্ডা, এই
বয়সের ছেলেদের তুলনায় একটু বেশি পরিনত ৷ বাপ ছেলে দুজনের স্বভাবে আশ্চর্য্য রকম
মিল ৷ তরকারিতে নুন কম দাও, বেশি দাও, পছন্দের পদ না রাঁধ কোনো হেলদোল নেই ৷ উপরন্তু মাঝে
মাঝেই সে তাতানের টেবিল , জামা কাপড় ইচ্ছে করেই
গুছিয়ে রাখে না ৷ তাতান কিন্তু ঠিক গুছিয়ে নেয় তারপর ৷ নিজেই লজ্জা পেয়ে তৃণা
তারপর ফিরে যায় নিয়মানুবর্তিতায় ৷ বাপ, ছেলের
নিরুচ্চার সমর্পনকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে সে ৷
তবুও এই অনায়াস অভ্যস্ততায় যাতে তাড়াতাড়ি ক্লান্তি
না আসে, তার জন্য খুব সচেতন ভাবেই নার্সারী স্কুলের চাকরিটা নেয়
৷ কিংশুকেরও পূর্ণ সমর্থন ছিল এই চাকরিতে ৷ খানিকটা সময় কাটবে , বাইরে গেলে মনটাও বেশ ফ্রেশ থাকবে , এটাই ছিল তার যুক্তি ৷ সে যুক্তি তৃণারও ৷
কিন্তু কয়েকদিন হলো এই
ছন্দের কি তাল কেটে যাচ্ছে তার ?
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গ্রুপ মেসেজে গুড মর্নিং এস এম
এস পাঠানো তৃণার বেশ কিছুদিনের অভ্যাস ৷ ইদানিং হোয়াটস-আপ এর দৌলতে তো আরো সহজ ৷
কয়েকজন বন্ধু বান্ধবীদের একসাথে গুড মর্নিং মেসেজ পাঠানোতে এক অদ্ভূত তৃপ্তি আছে
৷ কেউ সকালবেলা ঘুম ঘুম চোখে , কেউ
ব্যাস্তসমস্ততার ফাঁকে আলগা চোখ বুলিয়ে নেবে কিংবা কেউ হয়ত খেয়ালই করবে না ৷
উত্তরও প্রত্যাশা করে না সে ৷ কেউ কেউ শুভেচ্ছা ফিরিয়ে দিলেও তার পর খেজুরে আলাপী
প্রত্যুত্তরের কোনো ইচ্ছেও নেই তার ৷ সকালটা শুধু শুভকামনার , আড্ডার নয় ৷ কিন্তু ইদানিং কেন যে মন ইতি উতি বারবার
শুনতে চায় মুঠোফোনের মৃদু ধাতব আগমনী ? কেন
যে, কিসের টানে একফাঁকে চোখ বুলিয়ে নেয় স্ক্রিনে ?
গরিয়াহাটের চেনা দোকানটা থেকে বেরোতেই খানিক থমকে
দাঁড়ায় সে ৷ শপিং মলের চেয়ে গড়িয়াহাট তৃণার বেশি পছন্দ ৷ টুকিটাকি কেনাকাটা, উইন্ডো শপিং, ফুটপাথে
দরদাম , মাঝে মাঝে চেনা পুরনো বইয়ের দোকানে গিয়ে অল্প বিস্তর
বই নিয়ে নাড়াচাড়া , এসবের কাছে শপিং মলের
আরোপিত আরাম তুচ্ছ লাগে তার ৷ হুস করে কখন সময় কেটে যায় ৷
সেদিনও এরকম ঘন্টা দুয়েক কেনাকাটার পর চেনা দোকানটার ফুটপাথের
অপরপ্রান্তে একটু থমকেই দাঁড়ায় ৷
মৃন্ময় উল্টো দিকের দোকান থেকে সিগারেট কিনছে ৷ প্রায় কুড়ি বছর
হতে চলল, কিন্তু চেহারায় খুব বেশি হলে দৃশ্যত পরিবর্তন কিছু
পাকা চুল এবং অল্প মেদ ৷ এছাড়া দাঁড়ানোর ভঙ্গি , সিগারেট ধরানোর কায়দা খুব চেনা ৷ অনেকদিন হয়ে গেল, তবু চিনতে ভুল হয় নি তৃণার ৷ ফুটপাথের ওপার থেকেই ডাক
দিয়েছে , মৃন্ময়দা !!
মৃন্ময়ের দূর থেকে খানিক
চিনতে না পারার রেশ কাটতে না কাটতেই তৃণা ফুটপাথের এপারে , চিনতে পারছ মৃন্ময়দা ?
চিনতে পেরেছে মৃন্ময় ৷
চিনতে পেরেই মুখে একরাশ বিস্ময় মিশ্রিত হাসি , তৃণা ? তুমি ? আরিব্বাস
, চিনতেই পারছি না যে ?
-
বাজে কথা বল না ৷ এতটাও বুড়িয়ে
যাই নি ৷ হ্যা ,
তোমার মত না হলেও খুব বেশি পাল্টে
গেছি কি ?
খানিক লজ্জা পেয়ে মৃন্ময়
বলে : আরে না না ৷ সেটা বলি নি ৷ তা এখানে কি ব্যাপার ?
হাতের খান পাঁচেক ব্যাগ
বীরদর্পে তুলে ধরে ভুরু নাচিয়ে বলে : বানিজ্যে , স্যার ৷
-
তা বেশ ভালই বানিজ্য করেছ দেখছি ৷
একা, না কত্তাও এসেছেন ?
-
না গো, একাই ৷ কর্তা তো অফিসে , ছেলে টিউশানে ৷ এরই ফাঁকে এক চক্কর মেরে গেলুম ৷
-
বাহ, বেশ ৷ এখন যাবে কোথায় ?
-
সন্তোষপুর ৷ এই যে এখান থেকে
ট্যাক্সি ধরে নেব ৷
-
তুমি সন্তোষপুর যাবে ? তাহলে পাঁচটা মিনিট দাঁড়াও ৷ আমিও বাইপাসের দিকে যাব , তোমাকে নামিয়ে দেব ৷ ট্যাক্সি ভাড়াটা না হয় আমায়
দিও ৷
এই বলে তৃণাকে ওখানেই দাঁড়
করিয়ে রেখে আসছি বলে হন্তদন্ত হয়ে পাশের ওষুধ দোকানটায় ঢুকে পড়ল ৷ খানিক পরে
ফিরে এসে বলে,
চল কাছেই গাড়ি পার্ক করা আছে ৷
মৃন্ময় দেব , কলেজে
তৃনাদের চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র ৷ ওদেরই ক্লাসের শ্রাবনীর সাথে তখন ওর সম্পর্ক, সেই সূত্রেই কলেজে আলাপ ৷ শ্রাবনী আর মৃন্ময়ের আলাপ
কলেজের আগে থেকেই ৷ কলেজে এসে প্রেম পরিনতি পায় ৷ ক্যান্টিনে, করিডরে আড্ডায় শ্রাবনীর সাথে থাকার দরুন ওদের সাথে
সম্পর্কটা বেশ সহজ হয়ে যায় ৷ মৃন্ময় তখন কলেজে বেশ নামকরা ছাত্র , উজ্জ্বল, চৌকস, ভালো বক্তৃতা দেয় , ছাত্রমহলে
মিষ্টি ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয়, সব
মিলিয়ে শ্রাবনীর ওপর একটা চাপা ঈর্ষা সর্বদা থাকত মেয়েমহলে ৷ মৃন্ময় অবশ্য
বরাবর সবার সাথে সহজ ব্যবহার করত এবং শ্রাবনীর প্রতি পূর্ণমাত্রায় বিশ্বস্ত ৷
ওদের বিয়ে হয় নি ৷ এর জন্য শ্রাবনীর ওপর কোনো রাগ নেই
তৃণার ৷ খুব যুক্তি দিয়ে শ্রাবনী বিয়ে না করার কারণ বুঝিয়েছিল তৃণাকে এবং
সেটাকে খুব যথাযথ মনে হয়েছিল তার ৷ প্রেম ভাঙ্গার যে তিক্ততা , সেটা খুব একটা দেখা যায় নি দুজনের মধ্যে ৷ সময়ের সাথে
সাথে দুজনের সাথেই যোগাযোগ মিলিয়ে যায় তার ৷ তবুও
খানিকটা মেয়েলি কৌতুহলবশতই গোলপার্কের জ্যামে গাড়ি থামাতেই
মৃন্ময়কে প্রশ্ন করে সে, বাড়িতে এখন কে কে আছে
মৃন্ময়দা ?
হেসে ফেলে মৃন্ময় ৷
-
মা, ভাই আর আমি ৷
তারপর খানিক থেমে , নাহ !
বিয়ে করি নি ৷ স্মৃতির ভারাক্রান্ততা কাটিয়েই বোধহয় তারও খানিক পরে সে বলে, ভেব না যে শ্রাবনীর দু:খে বিয়ে করি নি ৷ জাস্ট করা
হয়ে ওঠে নি আর কি ৷ আর
কথা বাড়ায় নি তৃণা ৷ এরপর একথা সেকথার ফাঁকে টুক করে পৌছে গেছে গন্তব্যে , যাবার আগে ফোন নম্বর নিয়ে, একদিন এস কিন্তু আমাদের এখানে ৷ এই গলি ধরে একটু এগোলেই
আমাদের ফ্ল্যাট ৷
-
আসবো, একদিন এসে তোমার কত্তার সাথে জোর আড্ডা মেরে যাব ৷
প্রথম উত্তরটা এলো দিন চারেকের মাথায় ৷ গ্রুপ মেসেজে ততদিনে ঢুকে
গেছে মৃন্ময়ের নাম ৷চায়ের প্রথম চুমুক দিয়ে আলগোছে ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি ফেলতে
আটকে গেল মৃন্ময়ের নাম দেখে ৷ - তুমি
বুঝি রোজ সবাইকে ফোনে গুড মর্নিং মেসেজ পাঠাও ? বাহ !
বেশ ভালো অভ্যেস ৷
এটাকে ঠিক পাল্টা শুভেচ্ছা
বলা যাবে না ,
খানিকটা প্রশ্ন ৷ চায়ের কাপটা
হাতে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে তৃণা লিখল , হমমম
! তুমি কি কর ?
মিনিট খানেক পর ওপার থেকে উত্তর এলো , শয্যা ত্যাগ করি নি এখনো ৷অনেকক্ষণ ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি অবশ্য ।
তার খানিক পরে আবার
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে , একটু চা পেলে বেশ হয় ৷
খবর কাগজ থেকে চোখটা সরিয়ে
তৃণা পুরোপুরি মনোনিবেশ করে ফোনে ৷
-
খাচ্ছি, তুমি খাবে ? কর্তার
জন্য আরো একবার চা বসবে ৷ বল তো তোমার জন্যও জল চাপাই ৷
বেশিক্ষণ উত্তরের জন্য
অপেক্ষা করতে হয় নি, খানিক পরেই এসেছে উত্তর ৷
-
বসাও, আমার কিন্তু স্রেফ এক চামচ ৷
পরের এস এম এস তৃণার , দিন দুয়েক পরে ৷ স্কুলের টিফিন টাইমের সময় খেযালবশত
লিখে ফেলল ,
মৃন্ময়দা ৷ কি করছ ? লাঞ্চ হলো ?
উত্তর এলো ঘন্টাখানেক পরে ৷
-
সরি ফর দ্যা লেট রিপ্লাই ৷ ভীষণ
কাজে ফেঁসে গেছি গো ৷
-
লাঞ্চ করেছ ? না করে থাকলে করে নাও ৷
-
হমমম, করব ৷
ব্যাস, সেদিনকার মত কথোপকথন শেষ ৷ তারপর কিছুদিন আবার নিশ্চুপ, ফের হয়ত একদিন : - তৃণা, আজকে গরিয়াহাটের ওই
দোকানটায় এসেছিলাম , যেখানে দেখা হয়েছিল ৷ তুমি
কোথায় ?
-
আর বোলো না, দু দিন ধরে জ্বর গো ৷ আজ স্কুলেও যাই নি ৷
-
সে কি ? ওষুধ খেলে ?
-
খেলাম এইমাত্র ৷ তুমি গড়িয়াহাটে
কেন ?
-
মায়ের ওষুধটা এই দোকান থেকে নি ৷
তাই আসতে হয় ৷
এরকমই টুকরো টাকরা কথার ফাঁকেই কিছুদিন পর তৃণা আবিষ্কার করে, ফোনের দিকে ইদানিং বড় বেশি মনোযোগ ৷ কেমন যেন একটা
সামান্য টুকরো কথার অপেক্ষায় মন কেমন করা অনুভূতি ৷ কোথায় ? খেলে ? বাড়িতে
? অফিসে খুব চাপ ? ইত্যাদি
অসম্পূর্ণ প্রশ্নের জালে ভীষণভাবে জড়িয়ে পড়তে চায় সে , এবং খানিকটা ইচ্ছাকৃত ভাবেই ৷ উত্তর খুঁজে পায় না কেন
এই উথালি পাথালি ? কেন এই চাপা ঝড় সারাক্ষণ
নিজের ভেতর ৷ তবে কি সে ..........,?
নাহ , ভাবনাটা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে তৃণা ৷ সে তো কোনদিন
অপ্রাপ্তির হিসেব করে নি ৷ অশরীরী উপস্থিতির প্রতি তার তবে কেন এই মোহো ? ইচ্ছে করলেই তো নিতে পারে তার খুব প্রিয় সেই কিংশুকের
ঘামের গন্ধ ,
গভীর রাত্রে ঘুম ভাঙাতে পারে এখনো
তার সেই প্রিয় পুরুষকে ৷ তবে কেন এই দ্যোতনা ? এ তো
চোখে যেন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যায় খামতিটাকে , এক ঝটকায় দাঁড় করিয়ে দেয় আয়নার সামনে ৷
এমনি এক ঝড় বাদলার দিনে
হঠাত একদিন,
তৃণা ! তুমি এখনো গান গাও ?
বহু পুরনো স্মৃতি উস্কে
দেওয়ার ফলেই হয়ত তৃণা খানিকটা প্রগলভ ৷
-
হ্যা , আমি এখন পুরোপুরি বাথরুম সিঙ্গার ৷
-
সে কি ? তুমি গান ছেড়ে দিলে ? এত সুন্দর গান গাইতে ৷
- সে তো কবেই চুকে বুকে গেছে মৃন্ময়দা ৷- এ ভারী অন্যায় ৷ গানটা ছাড়া উচিত হয় নি তোমার ৷ এত সুন্দর গাইতে তুমি ৷
স্মৃতির ভেতরে খানিক ডুব
দিয়েছিল হয়তবা, সেই সময়েই ফের ভেসে ওঠে
স্ক্রিনে ৷
-
কলেজের ফেয়ারওয়েল-এ তুমি গান
গেয়েছিলে বেশ মনে আছে ৷ রবীন্দ্রসঙ্গীত ৷ শুধু
তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে প্রিয় ৷
-
বাব্বা , তোমার মনে আছে ? এতদিন
পরেও ?
খানিক নীরবতার পরে ফের
উত্তর আসে ৷
- শুধু
তাই নয়, এটাও মনে আছে তুমি সেদিন হালকা নীল এবং হলদে মেশানো
রঙের একখানা শাড়ি পরেছিলে ৷ এলো খোঁপা, হালকা
মেরুন রঙের লিপস্টিক এবং ডান হাতে একটা সোনার চুড়ি ৷ খুব সুন্দর লাগছিলে সেদিন ৷
ইচ্ছে করছিল তোমায় গিয়ে এই কথাটা বলি ৷
আজ তৃণা সমস্ত শংকা , সংকোচ এবং নিয়মের বেড়াজাল ভাঙবে ৷
-
তাহলে সেদিন বলো নি কেন ?
-
সেদিন বলার পরিস্থিতি ছিল না হয়ত
৷ তাই বলে উঠতে পারি নি ৷
-
আজও কি বলার পরিস্থিতি আছে ?
- পরিস্থিতি
তো আর পরিণতির মুখ চেয়ে তৈরী হয় না ৷ পরিস্থিতি তৈরী হয় মনে ৷ জীবনের অনেকটা
সময় পেরিয়ে এসে আজ হয়ত বা সেই সাহসটা পেলাম, অনেকদিন
আগে সেই থমকে যাওয়া কথাটা বলার ৷ ভাবতে খুব ভালো লাগলো যে বলতে পারলাম ৷
নাহ , তৃণা আর উত্তর দেবে না ৷ এবং এটাও জানে উত্তরের
প্রত্যাশাও করে না মৃন্ময়
৷ তার দায় শুধু কথাটা বলার ৷ উত্তর জানার নয় ৷
উত্তর দেবার দায় তৃণারও নেই ৷ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অসীম পরিতৃপ্তিতে সে তার আসন্ন বিদায়ী যৌবনকে ভিজিয়ে চলেছে ৷ হঠাত ভালোলাগার অনুভূতির জল চুইঁয়ে পড়ছে তার ঠোঁটে , গালে , চিবুকে, স্তনে এবং জঙ্ঘায় ৷
সেই হলদে আর নীল শাড়িটা আজ সে বের করবে ৷ বহু পুরনো স্মৃতি আর
ন্যাপথিলিনের গন্ধ গায়ে মেখে সে আজ কিংশুকের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে ৷
-
দেখো তো , এই শাড়িটা পরলে আমায় কেমন লাগে ?