রথের রশি
শুধু আজকের দিনটায় মুখার্জি জেঠুর বাড়িতে পাড়ার সবার অবাধ প্রবেশ। আজ রথ। প্রায় ১০০ বছরের পুরনো এ বাড়ির রথযাত্রা উৎসব। ওবাড়ির মেয়েরা সব পোর্সেলিনের পুতুলের মত, ধবধবে ফর্সা, টানা টানা চোখ। মুখার্জি জেঠিমা তো সাক্ষাৎ মা দুগগা আর ঝিমলি ও তিতলি তাঁর লক্ষ্মী-সরস্বতী।
তিতলি অপুর সঙ্গে এক স্কুলেই পড়ে। বাড়ির এমবাসাডর গাড়িতে স্কুলে আসে,
আবার ছুটি হলে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। স্কুলে কথা না বললেও আজ তিতলি অপুর
সঙ্গে একসাথে রথের দড়ি ধরে টানবে, ওদের বাড়ি থেকে রথ বেরিয়ে বুড়ো শিবতলা পেরিয়ে, চাঁপাদের
পুকুর পাড় ধরে খুরখুর করে চলবে, সারাটা পথ কচিকাচারা ‘জয়-জগন্নাথ’ বলে চিল্লাবে আর
তিতলিদের বুড়ো বামুন ঠাকুরের হাতের কাঁসার বড় থালা থেকে মুহুর্মুহু ছড়িয়ে দেওয়া লুটের
বাতাসা কুড়াবে। গাঙ্গুলি কাকুদের উঠোনের সামনে গোঁসাইদের ছাঁচতলায় জগন্নাথ ঠাকুর ভাইবোন
সহ মাসির বাড়িতে সাতদিন জিরোবেন। মাসির বাড়িতে রথ পৌঁছলে সবাইকে জিলিপি, বোঁদে, পাঁপড়
ভাজা, ক্ষীরমোহন, পেঁড়া পেটপুরে খাওয়ানো হবে। তারপর হেঁটে হেঁটে চাঁপাদের অন্ধকার পুকুরপাড়
ধরে, হরিকাকাদের ছাতিম ফুলে ছাওয়া উঠোন ডিঙিয়ে, বুনিপিসির কামিনী ঝোপের গন্ধে ভরা অন্ধকার
কুয়োতলা পেরিয়ে বাড়ি ফেরবার পথে অপুর বুকের ভিতরটা কিরকম যে করতে থাকে, অমন আর অন্য
কখনও করে না। কতবার তিতলি উন্মনা অপুর হাত চেপে ধরে, জিলিপির রস লেগে গেলেও অপু রাগ
করে না, বরং গার্জেনের মত তিতলির হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলে, ‘ভয় নেই, আমি আছি
না? আমি সব রাস্তা চিনি।’ এই সাতদিন প্রত্যেকদিন সন্ধ্যার সময় ওরা মাসির বাড়িতে গিয়ে
দেখে আসে জগন্নাথের আরতী। দুহাত ভরে প্রসাদ নেয় আর আবার সেই চাঁপাদের অন্ধকার পুকুরপাড়
ধরে, হরিকাকাদের ছাতিম ফুলে ছাওয়া উঠোন ডিঙিয়ে, বুনিপিসির কামিনী ঝোপের গন্ধে ভরা অন্ধকার
কুয়োতলা পেরিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। ওই সাতটা দিন একেবারে আলাদা। বছরের আর তিনশ’ আটান্ন
দিনের থেকে এক্কেবারে আলাদা।
একটা বড় জামবাটি হাতে মা এসে বললেন, ‘অপু, বাবা ছুট্টে একবার মুখার্জি
বাড়ি যা না! জেঠিমাকে বলবি, মা চাল দিতে বলেছেন।’ দুদিন বাদে বোর্ডের পরীক্ষা। এভাবে
রোজ রোজ কিছু না কিছু চাইতে অপুর ভারি লজ্জা করে। কিন্তু অপুর লজ্জা করলেও তার আপত্তি
মা শুনবেন না, কারণ তিনি নিরুপায়। বাবা শাঁখা বিক্রি করতেন। সামান্য কিছু ধানী জমি
লোক দিয়ে চাষ করিয়ে সারাবছরের চালটা আসে। কষ্টেসৃষ্টে চলে যেত। অপু মেধাবী। স্কুলে
স্যারেরা ওর জলপানির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁরা বইপত্র দিয়ে ব্যক্তিগত ভাবেও সাহায্য
করেন। কিন্তু বাবা যেদিন থেকে পক্ষাঘাতে একরকম পঙ্গু হয়ে শয্যা নিয়েছেন, সংসার আর চলছে
না। অপুর সামনে পরীক্ষা। মা চান ছেলে যেন একটু দুধ ঘি খেতে পায়। সে তো জোটেই না, ভাতটুকু
জোটানোও দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। ভাগ্যিস মুখার্জি গিন্নী সময়ে অসময়ে সাহায্য করেন, তাই
তিনটে পেট কোনমতে চলে যায়।
ইজেরের উপর একটা জামা গায়ে গলিয়ে অপু বাটিটা নেয় মায়ের হাত থেকে। তাকে
দেখেই মুখার্জি জেঠিমা বলে ওঠেন, ‘কি লাগবে বাবা? যা না, রান্নাঘরে গিয়ে বামুন ঠাকুরকে
বল্, দিয়ে দেবে।’ জেঠিমার শোবার ঘর থেকে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে অপুর চোখ চলে যায়
তিতলির ঘরের দিকে, তিতলি পিয়ানো শিখছে, মাস্টারমশাই এসেছেন। তার মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে।
সরস্বতী ঠাকুরের মত লাগে দূর থেকে, কেবল বাঁ গালের পাশে রগের ধারে ধবধবে ফর্সা গালের
উপর নীলচে শিরাটা কলমের মত ফুটে আছে, যেন বলছে, ‘অপু, এই কলমে ভাগ্য লিখব তোর!’ নিজেকে
অসম্ভব অসহায় লাগে অপুর এমন সময়গুলোতে।
বিদায় পর্বটা খুব সাদামাটা ভাবেই হয়েছিল। মা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন
প্রণাম করাতে। হায়ার সেকেন্ডারিতে অপু পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রথম হয়েছে। বাবা মায়ের
তাকে আর পড়ানোর সাধ্য নেই। অপুর এক দুঃসম্পর্কের নিঃসন্তান মামা ওকে নিজের কাছে লণ্ডনে
নিয়ে যেতে চান, উচ্চশিক্ষার যাবতীয় খরচ তিনিই দেবেন। মুখার্জি জেঠিমা মা-কে বলেছিলেন,
‘তোরা বড় গরীব! কোঁক ছেঁচা ঐ একটি সন্তান, তাকেও রাখতে পারলি না!’ তিতলি দাঁড়িয়েছিল
দরজার কাছে। পায়ের নখ দিয়ে মাটিতে আঁচড় কাটছিল। অপুও মিষ্টির প্লেট হাতে পায়ের নখ দিয়ে
মেঝে আঁচড়াচ্ছিল।
রাত্রে চোখ মুছতে মুছতে অপুর মা টিনের সুটকেস গুছিয়ে দিচ্ছিলেন, হঠাৎ
অপু বলল, ‘মা, আমি তিতলিকে একটা বই উপহার দিয়ে আসি। এই যাব আর আসব।’ তিতলি দাঁড়িয়েছিল
ছাদে। কাউকে কিছু বলতে হল না, অপুকে ওদের বাড়ির দিকে আসতে দেখেই নেমে এল সদরে। যদি
নাও আসত, আজ অপুকে কিছুই আটকাতে পারত না। ও ঠিক জেঠিমাকে দিয়ে তিতলিকে ডাকিয়ে আনাত।
কাল থেকে অপু তো আর আসবে না এ-বাড়িতে! তিতলি বলল, ‘তাহলে চলে যাচ্ছ!’ আশ্চর্য, ওর গলা
কাঁপছে কান্নায়, অপুকে ‘তুই’ নয়, ‘তুমি’ বলল ও। অপুর গলা থেকেও স্বর বেরোচ্ছিল না।
দুজনেই কথা না বলে হাঁটতে হাঁটতে আমবাগানের দিকে যেতে থাকে। নীরবতা ভেঙে তিতলি বলে,
“এরপর কি করবে?”
“পড়ব আরও। তুমি?”
“আমিও। বাবা আমাকেও বিদেশে পাঠাবেন বলছিলেন, তবে এখনই নয়, গবেষণা করতে
যাব। কিন্তু আমার তো বিদেশে কেউ থাকেন না, আমাকে স্কলারশিপের পরীক্ষা দিতে হবে। তোমার
আমাকে মনে থাকবে, অপু?”
আবেগে অপু কেঁপে ওঠে, বলে, “তোমার? আমি চলে গেলে ভুলে যাবে না তো? আমাকে
চিঠি লিখবে?”
তিতলি সম্মতিসূচক ঘাড় কাঁত করে। অন্ধকারে আমবাগানে পুরনো কাঠের রথ এই
বিদায় পর্বের সাক্ষী থাকে। অপু একটা কাগজে মোড়া প্যাকেট অন্ধকারের ভিতর থেকে এগিয়ে
দিল তিতলির দিকে, কোনমতে বলল, ‘এটা তোমার জন্য, ‘অপরাজিত’, আমার প্রিয় বই!’ অপু দেখতে
পায়নি, সরস্বতীর গাল-দুখানি মা-লক্ষ্মীর সিঁদুরের মত লাল টকটকে হয়ে উঠল লজ্জায়। সে
যে আগেই পড়েছে এ বই! বই-এর নায়ক অপুর বৌ-এর নাম অপর্ণা! তিতলির স্কুলের নামও যে ওই!
গত সপ্তাহ থেকে মনোবিদের চেম্বারে যাতায়াত করছে অপর্ণা। এ শহরে কেউ
কারো খবর নেয় না। জেট গতিতে ছুটছে জীবন। গত বছর অরূপ ওকে ছেড়ে চলে গেছে। নিউ ইয়র্কে
দুজনে একই ল্যাবে রিসার্চ করছিল, সেখানেই প্রেম ও পরিণয় সূত্রে বাঁধা পড়া। বাবা চলে
গিয়েছিলেন আগেই। মা ছিলেন ঝিমলির কাছে দার্জিলিঙে। মা-ও যখন চলে গেলেন, একবার গ্রামের
বাড়িতে ফিরেছিল অপর্ণা, ঝিমলি আর জামাইবাবুও এসেছিলেন। জমি-বাড়ি হস্তান্তর ও সম্পত্তি
বিক্রি সংক্রান্ত আইনি ঝামেলা মিটিয়ে আবার পিছুটানহীন তিতলি ফিরে গিয়েছিল আমেরিকাতেই।
অরূপের কাছে, কেবল অরূপের জন্য। তখন তার অরূপের সঙ্গে প্রেমের পূর্বরাগ পর্ব। পৃথিবীতে
আপন বলতে তখন একমাত্র অরূপ।
মৃত সন্তান প্রসব করার পরে অপর্ণার মা হওয়ার সম্ভাবনা চিরতরে নষ্ট হয়ে
যায়। তারপর থেকেই মানসিক অবসাদের সূত্রপাত আর তখন থেকেই অরূপকে যতই আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে,
ততই অরূপ ওর কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। সেই সময় প্রতিটা দিন অপর্ণা অপুর কথা ভেবেছে,
তাদের গ্রামের বাড়ির কথা, বাড়ির সেই পুরনো রথ আর রথের মধ্যে জগন্নাথের দুটি বিশাল নয়ন
বারবার মানসপটে ভেসে উঠেছে। অপুর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এম এস সি পড়ার
সময় থেকেই। চিঠি লিখেছে অপর্ণা, কিন্তু উত্তর আসেনি। হয়তো অপু সেগুলো পায়নি। হয়তো সে
ঠিকানা বদলেছে। এমনই ভেবেছে অপর্ণা।
এখন কোথাও কেউ অপর্ণার জন্য অপেক্ষা করে নেই। অপর্ণারও কারো কাছে ফেরার
তাড়া নেই। অরূপের সঙ্গে তার বিয়েটা ভেঙে গেছে দুবছর আগে। অরূপ তার নতুন সঙ্গিনীর সঙ্গে
পাসাডোনায় স্থায়ী হয়েছে। ইদানীং অসহনীয় একাকীত্ব অপর্ণাকে অস্থির করে তুলেছে। সহকর্মীদের
পরামর্শ, “গেট ইনভলভড্ ইন আ রিলেশনশিপ্!” কিন্তু কাউকে উপদেশ দেওয়া যতটা সহজ, কার্যত
কাজটা তত সহজ হয় না। নিজের চেষ্টাতেই মনোবিদের ফোন নম্বর খুঁজে বের করে সপ্তাহে দুদিন
করে এপয়েন্টমেন্ট নিয়েছে অপর্ণা। ল্যাব থেকে বেরিয়ে অপর্ণা ফেরে তার এক কামরার এপার্টমেন্টে।
ইচ্ছে হলে রান্না করে, যেদিন ক্লান্ত লাগে, একটু দুধ খেয়েই শুয়ে পড়ে। সকালে আবার ল্যাবে
যায়। কাজ করে সারাদিন। বিকালে ফেরার বাস ধরে। আজ ল্যাব থেকে একটু আগেভাগেই বেরিয়ে পড়েছে
অপর্ণা। শরীরটা ভালো লাগছে না। ক্লান্তি, অসম্ভব ক্লান্তি তাকে দেহে মনে যেন নিঃশেষ
করে ফেলেছে। আজ মনোবিদ ডাক্তারের সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট আছে। মনোবিদের চেম্বার থেকে বেরিয়ে
টুকটাক বাজার করে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল, আজ
বাসের দেখাই নেই। ফিফথ এভেনিউ-তে কি আজ বাস চলাচল বন্ধ? বাসস্টপে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা
করতে করতে হঠাৎ কানে আসে সঙ্কীর্তনের ধ্বনি। সহসা দেখে দূর থেকে এগিয়ে আসছে ইস্কনের
রথ। সামনে ফুলের মালা পড়ে বহু তরুণ-তরুণী নাচছে। বাজছে কাঁসর ঘণ্টা, হরেকৃষ্ণ সঙ্কীর্তনে
উন্মত্ত একটি দল এই রাস্তা ধরেই এগোচ্ছে।
অপর্ণার স্থান-কাল-পরিস্থিতি সমস্ত গোলমাল হয়ে যায়। আজ বুঝি রথ? তাই
কি আজ এই পথে বাস চলছে না? বুকের ভিতর কি যেন দলা পাকিয়ে ওঠে। দূর থেকে হৃদয় বিদ্ধ
করে জগন্নাথের সেই ‘চকা নয়ন’। কল্পনার পাখায় ভর করে অপর্ণা দেখে কার যেন দুটি চোখ চরাচর
জুড়ে চেয়ে আছে—“ভুলে গেছ আমায়? ভুলে আছ আমায়?” অপর্ণার দুপায়ে যেন বিদ্যুৎ ভর করেছে,
“ভুলিনি, ভুলিনি বন্ধু, কিচ্ছু ভুলিনি! তোমার সেই অপলক চাউনী যে আমার মনের রথে আসীন
জগন্নাথের চকা নয়নের মাঝে কত যুগ ধরে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে! তোমায় ভুলতে কি পারি?”
দুরু দুরু বক্ষে অপর্ণা পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় সঙ্কীর্তনের দলের দিকে। দলের পুরোভাগে
নৃত্যরত এক সন্ন্যাসী, পীত বস্ত্র, মুণ্ডিত মস্তক তরুণ সন্ন্যাসী আনন্দে বিভোর হয়ে
নেচে চলেছেন ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে!’ তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত
শরীরের প্রতিটি বিন্দু থেকে যেন আনন্দ ঝরে পড়ছে। কী মধুর মূরতি! চোখ যেন সরছে না ঐ
নবীন সন্ন্যাসীর উপর থেকে! সহসা আমূল চমকিত হয় অপর্ণা। এ মুখ তো তার অতি চেনা! ওই তো
সেই গলার বাঁ দিকে লাল জরুল! ‘তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় নাকো কভু!’ “অপু! অপু! তুই
এখানে!” বিড়বিড় করে অপর্ণা! প্রবল ঢেউয়ে তলিয়ে যাওয়া মানুষ যেমন করে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে,
সেই আশায় অপর্ণা ধেয়ে আসে ভীড়ের একেবারে কাছে। অঝোর ধারায় দু’চোখ ঝাপসা অপর্ণার, থমকে
গেছে সময়, দুটি নিষ্পাপ বালক-বালিকার কথোপকথন আজ কত বছর পর হুবহু মনে পড়ে যায়।
“জানিস তো, রথের দড়ি ছুঁলে সব বন্ধন মুক্ত হয়ে যায়, আর রথের মধ্যে জগন্নাথকে
দেখলে, আর জন্ম নিয়ে ধরায় আসতে হয় না”, বিজ্ঞের মত অপু বলে।
অবিশ্বাসী চোখে তাকায় তিতলি, “ধুস্, কে বলেছে তোকে?”
“আমার বাবা বলেছে রে!”
“আমার মা কি বলেন জানিস?”
“কি?”
“রথের দড়ি টানলে তুই যাকে ভালোবাসিস, তার আয়ু হয় রথের দড়ির মত লম্বা।
আর রথের মধ্যে বসা ঠাকুর দর্শন করলে মনের সব সাধ পূর্ণ হয়!”
সঙ্কীর্তন দলটা একেবারে কাছে এসে পড়েছে। অপর্ণার বুক ঢিপ ঢিপ করে।
“অপু, একবার চোখ মেলে তাকা, দেখ, আমি তোর সেই তিতলি! আমার গালের নীল শিরাটা ছুঁয়ে দেখবি
অপু?”
নাচতে নাচতে অপর্ণার সামনে দিয়ে চলে যায় সঙ্কীর্তন দলটি। সন্ন্যাসী-ঠাকুর
চোখ মেলে দেখেননি। ঝাপসা চোখ মুছতে মুছতে অপর্ণা রথের দড়ি স্পর্শ করে, জগন্নাথ দর্শন
করে প্রণাম করে মনে মনে বলে, “ঠাকুর, দুজনের কথাই রেখ, অপুর বাবার কথা আর আমার মায়ের
কথা!”