গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২১

প্রদীপ ঘটক

 

ছুরি


"মা,দাদা কোথায়?"

বিরক্ত মা বলে "জানি না যা। যে যমের দুয়ারে গেছে যাক্, আর যেন না ফেরে।"

গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে সোমার। দাদাই যে তার সব। 

গঅ্যাবনর্মাল দাদা জন্মাবার পর বাবা-মা ভেঙে পড়ে। কত আশা ছিল বুড়ো বয়সে ছেলে রোজগার করে খাওয়াবে। কিন্তু………

তাই আরেকটা চেষ্টা। কিন্তু এবার মেয়ে। মাথায় বাজ পড়ে বাবা মায়ের। তারপর থেকেই মায়ের বিমাতৃসুলভ আচরণ। বাবার কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাবাও নৃশংস হয়ে উঠছেন দিন দিন। মদ্যপ বাবাও মায়ের অনুগামী। সব অপরাধ ওই ভাই-বোনের।

দাদাই বুকে করে আগলে রাখে বোনকে। কিন্তু দাদা মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায়। আবার ফিরে আসে, কখনও পাঁচ দিন, কখনও সাত দিন। 

ফিরলেই মা বলে "আবার এলেন আমার হাড়-মাস এক করতে।"

দাদা আড়ালে কাঁদে, সোমাও। সান্ত্বনা দেয় "দাঁড়া আমার কলেজে পড়া শেষ হোক। একটা কাজ জুটিয়ে তোকে নিয়ে চলে যাব।"

আজ পনেরো দিন পেরিয়ে গেল। দাদা ফেরেনি। উৎকন্ঠা পাথরের মত চেপে বসেছে সোমার বুকে।

 আজ খেতে বসে মা'কে দৃঢ়ভাবে জিজ্ঞাসা করে "মা,সত্যি করে বল, দাদা কোথায়?"

উত্তর দেবার বদলে মা গরম তরকারির বাটি ছুড়ে দেয় সোমার দিকে।

আর সহ্য হয়নি সোমার। টেবিল থেকে ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে সোজা চালিয়ে দেয় মায়ের গলায়।

মায়ের দেহটা টানতে টানতে নিয়ে যায় বাড়ির পিছনে। শীতের রাত। ডোবার জল, পাড়ের গাছে এক অদ্ভুত শীতলতা। মানকচুর পাতা থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে শিশির। 

সোমা ধাপা চালায় মাটিতে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে। কয়েকবার ধাপা চালাতেই বেরিয়ে পড়ে একটা হাত। যে হাতে সে বহুবছর রাখি বেঁধে এসেছে।

এতক্ষণে ডুকরে ওঠে সোমা।

 

গভীর রাতে মদ্যপ বাবা বাড়ি ফেরে। জিজ্ঞাসা করে "তোর মা কোথায়?"

 

সোমার হাতে আবার ছুরি উঠে আসে।