গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৬ জুন, ২০১৭

ডঃ সুজাতা ঘোষ

নাটকের নাম ঘর


 পর্ব  -

মাঝ রাত, চাঁদের আলো এসে পড়েছে জলের কালো প্রথম স্তরে। গাছগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে বহুযুগ ধরে। হাসি কোলে দু বছরের মেয়ে শিউলিকে টানতে টানতে এসে পৌঁছল নদীর ধারে। বলরাম কাঁধে তুলে নিয়েছে বছর চারেকের ছেলে পল্টুকে। এই দুটি রতনই তাদের ইচ্ছাশক্তি, বেঁচে থাকার। চারটি মানুষ কোন রকমে পালিয়ে বাঁচতে পারলে চাঁদও খুশি হয়। হালকা মিষ্টি আলো তাই হয়তো ছড়িয়ে দিচ্ছে, অন্ধকারের পথকে কিছুটা মসৃণ করার জন্য।

অনেকটা পথ বাবুল, খেয়োর, কেওরা পেড়িয়ে কাঁদায় থপথপিয়ে এসে উঠল ছোট্ট ডিঙিটায়। চিরদিনের মত চলে যেতে হবে এই সুন্দরী বনকে ছেড়ে। কত স্বপ্ন, ইচ্ছা, ভালোবাসা পিছনে ফেলে শেষবারের মত সুন্দরী গাছগুলোকে বেদনা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিদায় জানাল হাসি। হাসিকনা, ছোটবেলায় আদর করে নাম রেখেছিল ওর মা। বিয়ে দিয়েছিল এই বলরামের সাথে। তখন ওর বয়স বড়জোর তের বছর হবে। পছন্দ না হলেও মুখ ফুটে বলতে পারে নি, বার বছরের বড় এই মানুষটিকে জীবন সঙ্গী বলে মেনে নিয়েছিল ছোট্ট হাসি। নদীর ধারে ছোট একটি গ্রাম, সাতটি ঘর। কেউ চাষ করে, কেউ বা মধু আনে আবার কেউ মাছ ধরতে যায় নদীতে। বলরামের বাবার একটি আটচালা মুদি দোকান ছিল।  বাবা মারা যাওয়ার পর ঐ দোকানেই চা, পাউরুটি, লেরি বিস্কুট, গজা, মুরি এ সবই বেচা শুরু করল শহর থেকে এনে। আস্তে আস্তে হাসির সহযোগিতায় দোকানটার মাথায় টালির ছাউনি হল, মেঝেতে ইট পাতা হল, উঠোনে গাছের গুড়ি পেতে দেওয়া হল, বসে চা খাওয়ার জন্য। একটা কাগজে পাশের গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার মশাইকে দিয়ে লিখিয়ে আনল দোকানের নাম, “ মনসা চা স্টল  নামটা হাসির শ্বাশুরীর। যদিও তার ইচ্ছা ছিল নিজের নামে নাম দেওয়ার, কিন্তু বলরামের মাতৃভক্তির সামনে সাহস করে বলতে পারে নি।

 নৌকা একটু টাল খেল মনে হয়, নাকি নিজের মাথাটাই টাল খাচ্ছে, কে জানে। দুদিন পেটে কিছু পড়ে নি। ছেলে মেয়ে দুটোও মুখে রা কাটছে না। ওরাও বোধ হয় বুঝতে পেরেছে যে, চারিপাশে অন্ধকার; আলোর দিকে দৌড়তে হবে।

প র্ব

ঘুম ভেঙেছে। মাথার উপর কিচির মিচির, ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, অনেক সংসার এক গাছের উপর। হাসির চোখ ঘোরে গাছ থেকে আকাশ, অন্যগাছ, পাতা, মাটি, ঘর, সরু রাস্তা, ধুলো, নেড়ি কুকুর, চায়ের দোকান, বলরাম কোথায়? দেখা যায় না কেন? হাসি উঠে বসল, ছেলে মেয়ে দুটো ঘুমাচ্ছে খিদেতে ক্লান্ত হয়ে; পেটটা হাঁপরের মত উঠছে আর নামছে। গায়ের জামাগুলো টেনে দিল হাত দিয়ে। খিদে কি মরে গেছে? কিছু টের পায় না হাসি। উঠে দাঁড়িয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে রাস্তার ধারের কুয়োর দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় সে। চোখে মুখে জল দিলে ভালো লাগবে। ঠোঁটের জল জিভ ছুঁতেই খাবার ইচ্ছা জেগে উঠল। হাতের চাটুতে জল তুলে চুমুক দিল। মনে হল কি শান্তি! মাথা তুলে তাকাতেই দেখল কিছুটা দূরে ঝাপসা হওয়া দোকানের ভিতর থেকে দুটো বড় বড় জিজ্ঞাসু চোখ তাকিয়ে ওর দিকে। কতক্ষণ ধরে চেখে যাচ্ছে, জানে না হাসি। আঁচলটা টেনে ঢেকে নিল নিজেকে। একটা অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। বলরাম যে কোথায় গেল! বাচ্চা দুটোও ঘুমাচ্ছে। হাসি ফিরে এল আবার গাছতলায়।
চোখদুটো বুজে আসছে ঠাণ্ডা হাওয়ায়, রাতের ভেজা কাপড় এতক্ষণে শুকিয়ে গেছে। পায়ের তলাটা সুড়সুড় করছে হথাৎ। এই হচ্ছে মুশকিল, সকাল সকাল শরীরের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে না দিলেই পায়ের তলা সুড়সুড় করবে, কোমরে চিনচিনে ব্যাথা হবে। কি করে এখন! কোন ঝোপ ঝাড় দেখে বসতে হবে গিয়ে, বাচ্চা দুটোকে ফেলে রেখে যাবে এইভাবে! তাছাড়া যাবেও বা কোথায়? কেউ যদি দেখে ............... , ওই যে দূরে মাটির ঢিবির মত রয়েছে, ওর পিছনে যাওয়া যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে বলরাম এসে পড়েছে, হাতে কিছু একটা আছে কাগজের ঠোঙায়। হাসি আর অপেক্ষা না করে বলল, আমি একটু ওখানে যাচ্ছি, ওদের দেখ। হাসির হাতে আর সময় ছিল না কোন কথা শোনারও দৌড়ল এক নিঃশ্বাসে। জীবনে এই প্রথম বড় হওয়ার পর রাস্তায় নির্লজ্জের মত প্রাতকৃত্য সারতে হল তাকে।

এবারে বেশ হাল্কা লাগছে শরীরটা। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বলরাম ঠোঙা থেকে কিছু বের করে বাচ্চাদের মুখে তুলে দিচ্ছে। হাসি আবার হাত পা ধুয়ে ওদের কাছে গিয়ে বসল। বলরাম ঠোঙাটা হাসির হাতে দিয়ে বলল, -

এই একটু জোগাড় করে আনলাম, খাও সবাই মিলে।
হাসি -    থাকার কোন ব্যবস্থা করতে পারলে? এইভাবে বটতলায় ........................
বলরাম -এত সহজে কি সব হবে! দাড়াও ধৈর্য্য ধর। একটা কোন কাজ যদি জোটাতে পারি, তবে ...........................
হাসি -কারোর বাড়ি যদি বাসন মাজার কাজ পাই, আমি করবোখন।
বলরাম -দাড়াও ওই দোকানটায় গিয়ে কথা বলে দেখি। তোমরা খাও, আমি একটু চেষ্টা করি, যদি কিছু কাজের ব্যবস্থা করা যায়।
হাসি -এইটুকু হাতে করে নিয়ে যাও, পেটে কিছু পড়ে নি .................. তিনদিন হয়ে গেল।

প  র্ব  -

পল্টু আর সিঙ্কিকে দুমাইল হেঁটে পাঠশালায় চটের উপর বসিয়ে দিয়ে হাসি চলে গেল কাজে। এ বাড়িতেই থাকে, খায়, ঘরের সব কাজ নিজের মত করে দেখেশুনে করে। বলরাম এদেরই মিষ্টির দোকানে সারাদিন গায়ে গতরে খাটে। মাস গেলে একশো টাকা হাত খরচ আর পুরো সংসার নিয়ে থাকা খাওয়া। এবাভেই চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। এখন মনে মনে ধন্যবাদ জানায় ওই চায়ের দোকানদারকে। সেদিন যখন বলরাম এই নতুন মাটিতে কাজ খুঁজতে এসেছিল, তখন ওই দোকানদারই তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তাই তো একটু মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে আজ সংসার নিয়ে। নাহলে কতদিন ওইভাবে গাছতলায় থাকা যায়! এনারা লোক ভালো, সমস্ত কাজকর্ম

করে দেওয়ার পর সকালে এক কাপ করে চা দুজনকে, যা ওরা চারজনে ভাগ করে খেত, দুপুরে তিন বাটি ভাত আর ডাল, দু বাটি বড়দের আর এক বাটি ছোটদের। আর সেই রাতে দুটো করে রুটি আর একটু তরকারি। এথেকে ভাববার কোন দরকার নেই যে, বাড়িতে কোন রান্না হয় না; হাসিই সব রান্না করে দেয়, কিন্তু সেটা মালিকদের জন্য। আর ওদের জন্য সারা বছর একই খাবার বরাদ্দ।
তবুও ওরা সুখী। চারজনে এক ছাদের নীচে দুবেলা খেয়ে বেঁচে আছে। একবার লেখাপড়া শিখিয়ে ছেলেমেয়ে দুটোকে মানুষ করতে পারলেই তো কেল্লা ফতে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে সারাদিন পরিশ্রম করে চলেছে বলরাম আর হাসি।   

প  র্ব 

বিছানায় শুয়ে হাসির মনে পড়ে বহু পিছনে ফেলে আসা অতীতকে। বিয়ের পর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ, দেওর, ভাসুর আর তাদের সংসার, সে যেন এক রাবনের সংসার। সদ্য বউ হয়ে আসা হাসিকনা ভেবে পেত না, সারাদিন রান্নাঘরে উনুনের তাপে জ্বলেপুড়ে আসার পর কোথায় এসে একটু পা ছড়িয়ে বসবে। নিজের ঘর বলে কিছু ছিল না, সবাই মিলেমিশে থাকতে হয়, শ্বাশুড়ির মহান উপদেশ ছিল এটাই। অনেক সাহস করে অশান্তি করাতে অবশেষে বলরাম নিজে হাতে মাটি দিয়ে একতলার ছাদে একটা ঘড় বানিয়েছিল। মাটির ঘড়ের উপর আর একটা মাটির ঘড়। মাথাকে হাঁটুর কাছে নামিয়ে এনে ভিতরে ঢুকতে হত। কোন জানালা না থাকায় দম বন্ধ হয়ে আসত হাসিকনার। তার উপর যখন বলরাম দরজা টেনে দিত রাতে, সেতো আরও ভয়ঙ্কর। সমস্ত পুরুষত্ব তখনই একমাত্র দেখাবার সুযোগ পেত বলরাম, হাসিকনাকে। এভাবেই সে জন্ম দিয়েছিল তার একান্ত আপন পল্টু আর সিঙ্কিকে।

আজ বয়সের অভিজ্ঞতায় সব স্মৃতিই সুন্দর মনে হয় তার। চুলে পাক ধরেছে, কোমরে মেদ, চোখে চশমা, নখে কুনি আর পায়ে হাজা। বলরামকে অনেক বুঝিয়ে হাসি আসতে পেরেছিল নতুন এক শহর কোলকাতায়। প্রথমে বলরাম একা এসে কাজ জোটায় একটা মুদি দোকানে, সেখানেই সে ঘুমাত রাতে, সারাদিনের কাজের শেষে। ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে একটা ছোট্ট ঘড় ভাড়া নেয়, তার মত অনেক মানুষই থাকে এই সারিবদ্ধ ঘড়গুলিতে। তবে প্রাতঃকৃত্য সম্পর্নের জন্য একটাই ঘড়, যেটা সব ভাড়াটেদের মিলেমিশে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। এখানেই মিষ্টির দোকানের বাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে হাসিকনা চলে আসে। তারপর বহু বছর কেটে যায় এই ঘরেছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, চাকরি পেয়েছে, হাসির তো এখন সুখের সংসার।

প   র্ব  

ছেলে, ছেলের বৌ, তার তিন ছেলেমেয়ে, আর বলরামকে নিয়ে হাসির সুখের সারা দিনরাত। সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত হাসি ভুলেই যায় যে, তার ঘড় এখনও বাকি রয়ে গেছে। সময় সরে সরে যায়, স্মৃতি আবছা হয়, সুখ দুঃখ ঘুরে ফিরে আসে আর যায়। হাসিকনার জীবনের প্রয়োজনীয়তা কমছে আর অন্যদের বাড়ছে। বলরাম তো চিরকালই বিনা চাহিদার এক মানুষ। পা গুটিয়ে ঘুমানোর মত জায়গা আর জীবিত থাকার মত খাদ্যকেই তার জীবনের চরম পাওনা বলে মনে করে।

হাসির জায়গা ক্রমশ ছোট হতে হতে বিন্দুতে মিশেছে। সমস্ত ঘরই অন্য সদস্যদের প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠায়, এখন তার আর বলরামের স্থান হয়েছে সিঁড়ির তলায় রাখা জুতোর বাক্স, ঝাঁটা, ফিনাইলের বোতল, মিটার ঘড়ের পাশে চিলতে সরু ফাঁকা জায়গায়। হাসিকনা তাতেই সুন্দর রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে নিজের চেষ্টায়। পরিষ্কার একটা পায়া নড়া চৌকি পেতেছে, তার উপর পুরনো ছেঁড়া বিছানার চাদর সেলাই করে পাতা, কোনায় রান্নার সরঞ্জাম। দেওয়ালে ছোট আয়না, মাথার কাছে কাগজের বাক্সের উপর লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, কালি, শিব সবাই আছে পায়ে ফুল নিয়ে হাসিমুখে।

হাসিকনার কয়েক বছর আগের কথা মনে পড়ে গেল। ছেলে নতুন বাড়ি করেছে, সে যেন বিশাল এক রাজমহল। ভাবতেই ভাঙা ভাড়ার ঘরে শুয়ে শরীর কেঁপে উঠত তার। এও ছিল ভাগ্যে! মনে পড়ে, সকালবেলা উপোস থেকে স্নান করে নতুন শাড়ী পড়ে বাড়ির চারদিকে ফুল হাতে ঘুরে গৃহপ্রবেশ করেছিল  সে।

চোখের কোলের জল মুখে এল, ভাবল এই ঘরও বেশ ভালো। দরজা খুললেই আকাশ, মাটি, বৃষ্টির জল, ফুল, পাতা। বলরাম সান্তনা দিয়ে বলে এই বেশ ভালো আছি। দরজা খুললেই সমস্ত পৃথিবী। দুচোখ ভরে আনন্দ নাও, শান্তিতে শ্বাস ছাড়। আর কি চাই? হাসিকনা হেসে উত্তর দেয়, হ্যাঁ, বাইরে সুন্দর বাগানও করেছি, কষ্ট করে দূরে যেতে হবে না, হাত বাড়ালেই ঠাকুরের ফুল। ইচ্ছা হলে সকালে হাঁটতেও পারি।

বলরাম -হ্যাঁ, এই ভালো। এই শেষ বয়সে এর চেয়ে বেশী আর দরকার কি?
হাসি চোখের কোনে জল মুছে বলে -  কোনদিন কি দরকার ছিল কিছু তোমার?
বলরাম -জানি, তোমার অনেক অভিমান আমার উপর, কিন্তু আমার যে এর চেয়ে বেশী সামর্থও ছিল না কোনদিনই। দুবেলা যাতে খেতে পাও আর মাথার উপর যাতে ছাঁদ থাকে, সেটুকু তো করে দিয়েছি।
হাসি -তা দিয়েছ, কিন্তু সে ছাঁদ আমার নয়। অন্যের ছাদের নীচে সারাটা জীবন সংসার সাজিয়ে গেলাম। নিজের ঘর কি তাই বুঝলাম না।
বলরাম -যেদিন সুন্দরবন ছেড়েছি বাঁচার জন্য, সেদিন শুধু যেকোন ভাবে একটু জায়গা খুঁজেছি, যাতে মাথা গুঁজতে পারি। ওখানে থাকলে না খেয়ে মরতে হত। এখানে এসে আর যাই হোক, সেই সমস্যা তো হয় নি। প্রানেও বেঁচেছি, খাবারও পেয়েছি। কত মানুষ তো রাস্তায় জন্মায়, সংসার পাতে, শেষ হয়ে যায়। আমরা তো অন্তত ঘরের ভিতর সারাটা জীবন কাটিয়ে গেলাম, হোলই বা অন্যের।
হাসিকনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে     
-হ্যাঁ, সেই, ঠিকই বলেছ। ঘর নাই বা হল, ছাদ তো আছে। ছেলেমেয়েরাও ভালোভাবে বেঁচে আছে তাদের সংসার নিয়ে। এখন আমাদের জীবনটায় আর দেখার বাকিই বা কি আছে! জীবনের শেষে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা মাত্র।

বলরাম -অনেক রাত হল, এবারে দরজা বন্ধ করে দেই, নাহলে বৌমা আবার চেঁচামিচি করবে।
হাসি -  সেই ভালো, আমারও ঘুম পাচ্ছে। বসে বসে সকালের জন্য অপেক্ষা করে লাভ কি? চলো ঘুমাই।
বলরাম -হ্যাঁ, এভাবেই একদিন হয়তো চিরদিনের মত ঘুমের দেশে চলে যাব।

হাসিকনার বন্ধ চোখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে। সে জানে সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে, কিন্তু তার জীবনের শেষ সঙ্গী, এই মানুষটিই চিরকালের অপছন্দের হলেও এই শেষ ভরসা, একজন মানুষ হিসাবে পাশে থাকার জন্য। কাকে আগে যেতে হবে, তা তো কেউ জানে না। মনে মনে প্রার্থনা করে হাসি, সকালে উঠে যেন পাশে মানুষটাকে দেখতে পায়, শ্বাস নিচ্ছে। আজকাল বড় ভয় করে হাসির।
এখন কত রাত, জানে না হাসিকনা, চাঁদের আলো দরজার ফাঁক দিয়ে বিছানায় এসে পড়েছে। আজ মনে হচ্ছে, জীবন বড় লোভনীয়, ছেড়ে যেতে মন চায় না। আর কতগুলো শ্বাস নিতে পারবে, সে জানে না, তবে এইটুকু বোঝে, অপছন্দের মানুষও শেষ জীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে অভ্যাসবসত। ঘরের জন্য ছাঁদ, মাটি, দেওয়াল; না, তার হাত ধরাটাই সবচেয়ে বড় ভীত হয়ে ওঠে এক সময়।
হাসিকনা পাশ ফিরে বলরামকে দেখে ভাবে, এজন্মে ঘর নাই বা হল, পরের জন্মে হবে। এখন যেন হাত ছেড়ে পালিয়ে যেও না আমায় একা রেখে।।