গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৬ জুন, ২০১৭

চন্দনকৃষ্ণ পাল

বিবাহঃ প্রাক পর্ব

ধানমন্ডির এক মেসে অবস্থান আমার। ধানমন্ডিতেই অফিস। ছোট খাটো চাকরি। কলিগরা বলে পেটে ভাতে চাকরি। ঘটনা সত্যিই। মেস ভাড়া আর খাওয়া খরচের পর তেমন কিছুই থাকে না। এদিকে বয়স ফুস। ত্রিশ ক্রস করেছে। কলেজ ইউনিভিার্সিটি লাইফ কেটেছে রোজগারের ধান্দায়। বান্ধবী নিয়ে আড্ডা মারার সুযোগ ছিলো না রে ভাই। নিরামিষ জীবন। অফিসে তো সবাই আপা। ছোটরাও বড়রাও। বসের আলাপ? নৈবচঃ। গ্রামের বাড়ি যাই। বন্ধু-বান্ধবরা, এলাকার লোকজন জিজ্ঞেস করে কোথায় থাকি? সুপার একটা হাসি মেরে বলি ধানমন্ডি। যেনো নিজের বাড়ি। ভাবভঙ্গি ঐ রকমই। লোকজন ভাবে ভালোই কামাচ্ছে। দু একজন মুখ কাটা। বলে উপরি-টুপরী কেমন? রহস্যময় হাসি মুখে ঝুলিয়ে রাখি। আমি নিজে তো জানি সরকারী স্কেলের বেতন ছাড়া চার পয়সাও পকেটে আসেনা। টিউশনি পাইনা। সব স্কুল মাষ্টাররা হাপিস করে দিয়েছে। এদিকে হাসিনা আপা গদিতে বসে অফিস টাইম নটা পাঁচটা করে জুৎসই আর একটা ল্যাং মেরেছেন। এখন অফিস বাসা। মাসের শেষে তেলাপোকার মতো বেঁচে থাকার জন্য সামান্য তন্ডুল। দুতিন মাসে একবার বাড়ি গেলে মা-বাবার গুরু গম্ভীর বক্তব্য, ‘এবার বিয়ে টিয়ে করো, বয়স তো হলো, আর কতো?’ ভয়ে ভয়ে বলি, ‘আর কিছুদিন সময় দরকার। একটু গুছিয়ে নেই।দিন যায় আশায় আশায়। গুছানো আর হয় না। ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, মিরপুর রোডে তন্বিদের দেখি। হাফ প্যান্ট, স্কিন টাইট গেঞ্জি থেকে শাড়ী টু লেহেঙ্গা (বন্ধুর ভাষায় ডিস এন্টেনা)। দূর থেকে দেখি আর বুক শুকিয়ে যায়। চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, ফাষ্ট ফুডের দোকান গুলোতেও দেখি আর ভয় আরো বাড়ে। কি হবে গো। বিয়ের কথা কল্পনা করতেও ভয় পাই। হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে জরুরী খবর। বৃহস্পতিবার দিন যেভাবেই হোক বাড়ি চলে আয়। কি হলো রে। বৃদ্ধ বাবা। টেনশনে বুধবার কাটে। বৃহস্পতিবার হাফ অফিস করেই বসকে বলে বিদায় নেই। সন্ধ্যের পর পর বাসায় পৌছেই চমকাই। স্বয়ং বড় বোন জামাই। বিশাল ভূড়ি বাগিয়ে থ্রি সিডেট সোফা একাই দখল করেছেন। আয়রে শালা এবার আর কিভাবে ফসকাবি। 
-মানে? 
-মানে হলো সব ঠিক। মেয়ে দেখবি। হ্যাঁ বলবি। সানাই বাজবে। তারপর বউ এর গলা জড়িয়ে ধরে.........। 
আমার তো প্রেষ্টিজ পাংচার হবার জোগাড়। ঠাস করে বলে বসলাম- 
-ঐ মিয়া গৌরী পাইছেন নাকি যে ধরে নিয়ে বিয়ে করাবেন? 
-শালা তুই আবার কুমারী হলি কবে? 
আমি এবার ফুস। বেলুন চুপসে গেলো। তাই তো। মালকড়ি যে শূন্যের কোঠায়। নেতিয়ে পড়ে বললাম, 
-বউকে খাওয়াবো কি দুলাভাই। 
পান খাওয়া ঠোটে চমৎকার হাসি ঝুলিয়ে, ভূড়ি নাড়িয়ে দুলাভাই বললেন, 
-আমাকে দিয়ে দিস। 
হাল ছেড়ে দিলাম।
পরদিন আন্ডা বাচ্চা থেকে মুরুব্বী পর্যন্ত জন ছয়েক মিলে মেয়ে দেখা হলো। আমি তো বলির পাঠা। মেয়ে বাড়ীর সবাই আমাকে দেখে। দরজার ওপাশে জানালার ওপাশে ফিস ফাস। মেয়ে দেখা হলো। সবারই পছন্দ হয়েছে। দুলাভাই বললেন-
 -তোকেও চান্স দিচ্ছি দেখে  নে। 
আলাদা রুমে কন্যা, দুলাভাই আর কন্যার এক গাদা বৌদিসহ  আলাদা বৈঠক হলো। আমি আর কি করবো।  বৌদিরা আমাকে পারলে ত্যানা বানিয়ে দেয়। কন্যাকে শুধু সর্বসাকুল্যে কটাকা পাই তার হিসেব দিলাম। বললাম চিন্তা ভাবনা করে মতামত দিতে। তিনি একবার বড় বড় চোখ করে আমাকে দেখলেন। একটু খানি ভড়কে গিয়ে বিদায় নিলাম।
সপ্তাহ খানেক পর বড় ভাইএর রেজিষ্টি চিঠি পেলাম। চিঠির বক্তব্য আগামী ২৬ শে ফেব্রয়ারি, ১৪ ই ফাল্গুন রোজ সোমবার তোর বিয়ে!!!
-