গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শেখর কর

চেনা বন্ধু


সেই ছোট্টবেলার ইস্কুলটাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে চিত্তপ্রিয় কেমন যেনন বিহ্বল হয়ে পরে । আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগের নীলফামারী শহরের প্রন্তের এই গ্রামটির চেহারা আজ পুরো পাল্টে গেছে । সেই টিনের বেড়া আর টিনের চালের স্কুলের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে পাকা দালানের মসত স্কুলবাড়ী । চিত্তপ্রিয়র চিনতে একটু কষ্ট হচ্ছে । পিছনের বাঁশবাগানটা নেই , সে জায়গায় তৈরী হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস । অনেক লোকজনের আনাগোনা । বাঁশবাগানের ওপাড়ে হামিদুলরা থাকত । এখন কোথায় থাকে কে জানে ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাভাষার উপর একটা সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে চিত্তপ্রিয়র এই বাংলাদেশে আসা । তাই জন্মভিটার টানে সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে প্রতাপুর গ্রামে আসার এই সুযোগটাকে কোনমতে হাতছাড়া করেনি সে ।
বুকের ভিতর কোথায় যেন একটা আবেগ বাষ্পীভুত হচ্ছে । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্তরোর্ধ প্রক্তন এই অধ্যাপক চিত্তপ্রিয় দত্ত যেন এক নিমেষে ছোট্ট চিতু হয়ে যায় , যে তার মায়ের হাতের গরম ভাতমাখার দলা খেয়ে এই স্কুলে  পড়তে আসতো । 

সে শুনতে পাচ্ছে কতকেউ যেন তাকে ডাকছে চিতু....চিতু....বলে । ছোটবেলার অনেক ছবি একসঙ্গে মনের মধ্যে কোলাজ তৈরি করছে আবার একনিমেষে হারিয়ে যাচ্ছে ।  আচমকা চিত্তপ্রিয়র চোখে পড়ে স্কুলের দক্ষিন দিকের সেই বটগাছটার দিকে ! শুধু সেই এখনও সে দাঁড়িয়ে আছে চেনা বন্ধুর মত ! মুহূর্তের মধে্য সেই বাষ্পগুলো ছুটে আসে দুই চোখে ।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল সেকে্রটারী মহাশয়ের হাত চেপে ধরে চিত্তপ্রিয় । হঠ।ৎবলে বসে - যদি অনুমতি দেন তাহলে একবার ওই বটগাছটার কাছে গায়ে ওকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি ?
সেক্রেটারি মহাশয় বিষ্ময়ে নির্বাক । দুহাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন ঝাপসা চোখে ।