ইয়র্কার
বাড়ির কাছেই খেলার মাঠ ছিল । রোজ
বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার
সময় ক্রিকেট ব্যাট হাতে মাঠে হাজির । আমাদের ১১ জনের টিমে বেশ কজন ডিসট্রিক্ট
প্লেয়ার, অবশ্য আমি নই। মাঠের পাশেই সারি সারি দোতালা বাড়ি তার
ছাদে আমাদের ই সম বয়সী মেয়েরা আমাদের খেলা দেখত । আমরা তাই উৎসাহিত হতাম । মাঝে
মাঝে ভালো চৌকা ছক্কা হলে হাত তালি পড়তো তাতে আরও ভালো লাগতো । মানে যা হয় আরকি ওই ইয়ে ...... । আমাদের সঙ্গে একটি মেয়ে পড়তো সাইন্সে নামটা এখন মনে আছে
সংযুক্তা দাস । ওর বাবা আই.এ.এস অফিসার ছিলেন। কিন্তু মেয়েটা খুব সাদা
মাটা ছিল । ভালো খেললে ওর বন্ধুদের সঙ্গে লাফিয়ে হাততালি দিত।
একদিন আমি খুব জোর ব্যাট ঘুরিয়েছি ছক্কার আসায় কিন্তু বলটা ইয়র্কর ছিল ,
ব্যাস লেগ
স্টাম্প উড়ে পেছনে পড়লো । আমাদেরই বন্ধু আম্পায়ার ‘বল্টু’ সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল তুলে আমায় আউট করে দেয়।
খুব লজ্জা জনক পরিস্থিতি । মনে মনে ভাবলাম টাইমিং টা কেন ঠিক করে বুঝতে পারলাম না ! চারটে বল খেলেই আউট তাও মাত্র ২ রান করে । ওপরে চোখ ওঠানোর সাহস হলনা । কারন সংযুক্তা যদি দেখে
থাকে কেলেঙ্কারি কান্ড হবে । আমি মাথা নিচু করে প্যাভিলিয়নে চলে যাই । সত্যি বড্ড
খারাপ পারফরমেন্স হল।
পরের দিন কেমিস্ট্রি প্রাক্টিকাল ক্লাসে সংযুক্তার সঙ্গে চোখ মেলাতে পারলাম না
। আমি নিজের মনে 'টাইট্রেসন' টা করছি । হটাত দেখি পাশে সংযুক্তা । একটু অপ্রস্তুত হয়ে
বলি , “কিছু বলছিলে”?
আমার বেকুবের মত চেহারা দেখে ও হেঁসে ফেলল । আমি আরও লজ্জা পেলাম । কালকের
খেলাটা বোধ হয় ও দেখেছে। ইস কি বাজে খেলেছি কালকে। মনে মনে ভাবি ।
বলল , “তুমি খেলার
সময় অত অন্যমনস্ক থাকো কেন”?
আমি বলি এই কথা বলার জন্য আমার কাছে এলে ?
না ।
তবে ?
তোমার প্রাক্টিকাল রেকর্ড টা দাও । গতবারের এক্সপেরিমেন্টের রেসাল্ট টা দেখবো
।
ও ! এই নাও ।
কিছু বললে না যে ?
কি বলবো ? হ্যাঁ আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম নাহলে আউট হতাম না । বলটা ইয়র্কর ছিল । টার্ন নিয়ে লেগ স্টাম্প এ জোরে
লাগে ।
ও বলে ওইরকম ইয়র্কর জীবনে প্রতি মুহূর্তে আসবে । সেটাকে ফেস করতে হবে সজাগ
থেকে নাহলে তোমায় প্রতি মুহূর্তে বোল্ড হতে হবে । কিছু বুঝলে !
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে ওর চোখের দিকে তাকাই । চোখে দুষ্টুমি তে ভর্তি হাঁসি ।
খুব খারাপ লাগলো । আবার ওর ওই হাঁসিতে কিছু ইঙ্গিত ছিল বলে মনে হল।
আজ ও আমি ..ওই ইঙ্গিত টা কি ! তাই খুঁজছি । নিজেকে প্রশ্ন করে । কি হতে
পারে ? দূর আমি তৃতীয় আর ষষ্ঠ সুরের মিলিত শব্দ হয়ে
গেলাম নাকি ! কিছুই মাথায় আসে না। আমি বুঝি প্রাক্টিকাল রেকর্ড টা এক বাহানা মাত্র । ও আসলে
আমাকে কিছু বোঝাতে চাইছিলো ............।