গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

অনুগল্প

ইয়র্কার

 বাড়ির কাছেই খেলার মাঠ ছিল । রোজ বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে বিকেল  সাড়ে পাঁচটার সময় ক্রিকেট ব্যাট হাতে মাঠে হাজির । আমাদের ১১ জনের টিমে বেশ কজন ডিসট্রিক্ট প্লেয়ার, অবশ্য আমি নই। মাঠের পাশেই সারি সারি দোতালা বাড়ি তার ছাদে আমাদের ই সম বয়সী মেয়েরা আমাদের খেলা দেখত । আমরা তাই উৎসাহিত হতাম । মাঝে মাঝে ভালো চৌকা ছক্কা হলে হাত তালি পড়তো তাতে আরও ভালো লাগতো ।  মানে যা হয় আরকি ওই ইয়ে ...... আমাদের সঙ্গে একটি মেয়ে পড়তো সাইন্সে নামটা এখন মনে আছে সংযুক্তা  দাস । ওর বাবা আই..এস অফিসার ছিলেন। কিন্তু মেয়েটা খুব সাদা মাটা ছিল । ভালো খেললে ওর বন্ধুদের সঙ্গে লাফিয়ে হাততালি দিত।

একদিন আমি খুব জোর ব্যাট ঘুরিয়েছি ছক্কার আসায় কিন্তু বলটা ইয়র্কর ছিল , ব্যাস লেগ  স্টাম্প উড়ে পেছনে পড়লো । আমাদেরই বন্ধু আম্পায়ার বল্টুসঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল তুলে আমায় আউট করে দেয়। খুব লজ্জা জনক পরিস্থিতি । মনে মনে ভাবলাম টাইমিং টা কেন ঠিক করে  বুঝতে পারলাম না ! চারটে বল খেলেই আউট তাও মাত্র রান করে । ওপরে চোখ ওঠানোর সাহস হলনা । কারন সংযুক্তা যদি দেখে থাকে কেলেঙ্কারি কান্ড হবে । আমি মাথা নিচু করে প্যাভিলিয়নে চলে যাই । সত্যি বড্ড খারাপ পারফরমেন্স হল।  

পরের দিন কেমিস্ট্রি প্রাক্টিকাল ক্লাসে সংযুক্তার সঙ্গে চোখ মেলাতে পারলাম না । আমি নিজের মনে 'টাইট্রেসন' টা করছি । হটাত দেখি পাশে সংযুক্তা । একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলি , “কিছু বলছিলে”?

আমার বেকুবের মত চেহারা দেখে ও হেঁসে ফেলল । আমি আরও লজ্জা পেলাম । কালকের খেলাটা বোধ হয় ও দেখেছে। ইস কি বাজে খেলেছি কালকে। মনে মনে ভাবি ।

বলল , “তুমি খেলার সময় অত অন্যমনস্ক থাকো কেন”?

আমি বলি এই কথা বলার জন্য আমার কাছে এলে ?

না ।

তবে ?

তোমার প্রাক্টিকাল রেকর্ড টা দাও । গতবারের এক্সপেরিমেন্টের রেসাল্ট টা দেখবো ।

! এই নাও ।

কিছু বললে না যে ?

কি বলবো ? হ্যাঁ আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম নাহলে আউট হতাম না । বলটা  ইয়র্কর ছিল । টার্ন নিয়ে লেগ স্টাম্প এ জোরে লাগে ।

ও বলে ওইরকম ইয়র্কর জীবনে প্রতি মুহূর্তে আসবে । সেটাকে ফেস করতে হবে সজাগ থেকে নাহলে তোমায় প্রতি মুহূর্তে বোল্ড হতে হবে । কিছু বুঝলে

আমি ফ্যাল ফ্যাল করে ওর চোখের দিকে তাকাই । চোখে দুষ্টুমি তে ভর্তি হাঁসি ।

খুব খারাপ লাগলো । আবার ওর ওই হাঁসিতে কিছু ইঙ্গিত ছিল বলে মনে হল।


আজ ও আমি ..ওই ইঙ্গিত টা কি ! তাই খুঁজছি । নিজেকে প্রশ্ন করে । কি হতে পারে ? দূর আমি তৃতীয় আর ষষ্ঠ সুরের মিলিত শব্দ হয়ে গেলাম নাকি ! কিছুই মাথায় আসে না। আমি বুঝি প্রাক্টিকাল রেকর্ড টা এক বাহানা মাত্র । ও আসলে আমাকে কিছু বোঝাতে চাইছিলো  ............।