দেখা
ওও রিক্সাওয়ালা, ভাড়া যাবা নাকি ? ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই চোখে যেন ধাঁধাঁ লাগে
ইয়াকুবের । একি দেকগছে সে ! এ তো শাবানা ! সেই বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় বর্ডার পেরিয়ে চলে ওপারে চলে যাচ্ছে,তখন ইয়াকুবের বয়স তেইশ/চব্বিশ আর শাবানার উনিশএর মত হবে । হলদিবাড়ির
পূর্বপাড়ায় তখন ওদের মেলামেশা গভীর । শাবানা্র আব্বুজান জসিমুদ্দীন মিয়া সপরিবারে
বাংলাদেশে চলে যাবে মনস্থ করতে শাবানা ইয়াকুবকে বলেছিল ‘তুইও চল আমাদের লগে,
আমরাও ঐপারে গিয়া
ঘর বাঁধুম’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয় নি । ইয়াকুবের বৃদ্ধা মা নাসিমা বেওয়া স্বামীর ভিটা ছেড়ে
যেতে চায় নি বলে ।
রাতে, অন্ধকারে বর্ডার পার হওয়ার সময় ইয়াকুবের হাত চেপে ধরে বলেছিল ‘তুই কিসের দিবানা রে’ ? সেই কান্নাজড়ানো গলা আর আকুতিভরা চোখ আজও
বুকে মোচড় দেয় ইয়াকুবের ।
এখন এতোগুলো বছর পর ইয়াকুব হলদিবাড়িতে ভ্যান রিক্সা চালায় । একমুখ দাড়ি গোঁফে
আর জীর্ণ বেশে ওকে চেনাই দায় । আর মাঝবয়সী শাবানার চেহারায় ও পোশাকে আভিজাত্যের
ছাপ । ওর স্বামী ওদেশে এখন মিল মালিক । দুই সন্তানের জননী উচ্ছসিত শাবানা রিকশায়
বসে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে করতে ইয়াকুবকে আচমকা প্রশ্ন করে ‘আচ্ছা রিক্সাওয়ালা,পূবপাড়ার
ইয়াকুব আলিরে চিনো’ ? পড়ন্ত আলোয়
রিক্সা চলতে থাকে হুজর সাহেবের মাজারের পাশ দিয়ে । আজানের সুর ভেসে আসে । কোন
উত্তর মেলে না ।