গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শেখর কর

অনুগল্প

দেখা

ও রিক্সাওয়ালা, ভাড়া যাবা নাকি ? ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই চোখে যেন ধাঁধাঁ লাগে ইয়াকুবের । একি দেকগছে সে ! এ তো শাবানা ! সেই বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় বর্ডার পেরিয়ে চলে ওপারে চলে যাচ্ছে,তখন ইয়াকুবের বয়স তেইশ/চব্বিশ আর শাবানার উনিশএর মত হবে । হলদিবাড়ির পূর্বপাড়ায় তখন ওদের মেলামেশা গভীর । শাবানা্র আব্বুজান জসিমুদ্দীন মিয়া সপরিবারে বাংলাদেশে চলে যাবে মনস্থ করতে শাবানা ইয়াকুবকে বলেছিল তুইও চল আমাদের লগে, আমরাও ঐপারে গিয়া ঘর বাঁধুম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয় নি । ইয়াকুবের বৃদ্ধা মা নাসিমা বেওয়া স্বামীর ভিটা ছেড়ে যেতে চায় নি বলে ।


রাতে, অন্ধকারে বর্ডার পার হওয়ার সময় ইয়াকুবের হাত চেপে ধরে বলেছিল তুই কিসের দিবানা রে? সেই কান্নাজড়ানো গলা আর আকুতিভরা চোখ আজও বুকে মোচড় দেয় ইয়াকুবের ।
এখন এতোগুলো বছর পর ইয়াকুব হলদিবাড়িতে ভ্যান রিক্সা চালায় । একমুখ দাড়ি গোঁফে আর জীর্ণ বেশে ওকে চেনাই দায় । আর মাঝবয়সী শাবানার চেহারায় ও পোশাকে আভিজাত্যের ছাপ । ওর স্বামী ওদেশে এখন মিল মালিক । দুই সন্তানের জননী উচ্ছসিত শাবানা রিকশায় বসে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে করতে ইয়াকুবকে আচমকা প্রশ্ন করে আচ্ছা রিক্সাওয়ালা,পূবপাড়ার ইয়াকুব আলিরে চিনো? পড়ন্ত আলোয় রিক্সা চলতে থাকে হুজর সাহেবের মাজারের পাশ দিয়ে । আজানের সুর ভেসে আসে । কোন উত্তর মেলে না ।