প্রতিবিম্ব
নদীর নাম কংসাবতী।শীর্ণকায়া । তবুও যৌবনবতী । বর্ষায় দুকুল ছাপা যৌবন । আঁকাবাঁকা সর্পিল ছন্দ। ঠিক কবিতার মত।স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দেরা খেলা করে নদীর বুকে । দুপাড়ে শালমহুয়া আর করঞ্জার ভীড় । নদীর আঁচলে নরম সুবাস ।
নদীর নাম কংসাবতী।শীর্ণকায়া । তবুও যৌবনবতী । বর্ষায় দুকুল ছাপা যৌবন । আঁকাবাঁকা সর্পিল ছন্দ। ঠিক কবিতার মত।স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দেরা খেলা করে নদীর বুকে । দুপাড়ে শালমহুয়া আর করঞ্জার ভীড় । নদীর আঁচলে নরম সুবাস ।
তবু
তার মনে দ্রোহ । চোখ তার আগুনের গোলা । পুঞ্জিভূত অভিমান । সভ্যতার
নামে তাকে চিরে ফালাফালা করে বুকে অজস্র পাথরের বোঝা চাপিয়ে রুদ্ধ করেছে তার
ছন্দম্ গতি । ধর্ষিতা হয়েছে মুকুটমনির টিলায় । বেঁধে দেওয়া হয়েছে বাঁধ । বাঁধে হারিয়ে গেছে তার জীবন যৌবন । পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত বাস্তুকারের
দল
।
কংসাবতী
ধর্ষিতা নারীর মত কথা বলে । লাশ হয়ে পড়ে থাকে ।
মেয়ের নাম পাতামনি। সুগঠনা ।
মেয়ের নাম পাতামনি। সুগঠনা ।
কংসাবতীর
রুপোলী বালিয়াড়ি । নগ্ননির্জন । পৌষালী
হিমেল হাওয়া । অবিন্যস্ত করঞ্জার শুকনো পাতা । ঝরে পড়ছে টুপটাপ। যৌবনবতী আকাশ । পূর্নিমার
মিহি আলো।সাইমন ওঁরাও
ক্ষ্যাপাটে অবিন্যস্ত চুল আর মেঘলা চোখ নিয়ে ইতিউতি নির্জনতার গভীরতা মেপে বালি
খুঁড়ছে একমাস না কাটা আঙুলের নখ দিয়ে । ষোল ইঞ্চির
মত খুঁড়ে চমকে ওঠে সাইমন ওঁরাও । চুঁয়ে আসা
স্নিগ্ধ কংসাবতীর জলে ভরে ওঠে গর্তটা । ভরা পোয়াতির মত । পূর্নিমার
চাঁদ প্রতিবিম্বিত হয়
সেই হিম জলে। খুশী হয় সাইমন। এইতো সেই অবিকল পাতামনির মুখচ্ছবি।স্নিগ্ধ, কোমল, নিস্পাপ অভিমানী ষোড়শী পাতামনি। ঠিক একমাস
আগের দেখা । সারহুল পরব । উত্তাল
সাঁওতাল পল্লী খলবলানো ঝরণার মত । পূর্নিমা
রাত
। রাতভর নাচ । লালপাড়
সাদাশাড়ী । হাতে খাড়ু,কোমরে রুপোর বিছে পায়ে মল । ছেলেদের
পরনে গেঞ্জি আর হলুদ ধুতি । মাথায় ময়ূর
পালক
। প্রায় সবাই
মহুয়া নেশায় মত্ত। সাইমনও । মাদলের
দ্রিমিদ্রিমি তালে সাইমন ওঁরাও বিভোর । নেশা কাটতেই ভোর। দুচোখ কচলে দেখে
পাতামনি নেই ।
খুঁজে
পাওয়া গেল মুকুটমনিপুরের টিলায় । নিথর
পাতামনি। গুটিকয়
হায়নার শিকার পাতামনি । রক্তাক্ত যোনিতে অজস্র ডেঁয়ো
পিঁপড়ে
। রুদ্ধ হয়ে গেছে চলার গতি । গলায়
কালশিটে দাগ । হারিয়েছে জীবন যৌবন। ঠিক যেন
ক্ষয়াটে চাঁদ। লাশ হয়ে পড়ে আছে পাতামনি।চারহাতি গামছায় ঢেকে দেয় ওর নগ্ন শরীর । হঠাৎ টলটলে
জল নড়ে ওঠে । হারিয়ে যায় প্রতিবিম্ব । সাইমন
ওঁরাও এর বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে ।
নারীও নদীর মত কথা বলে।দুজনা একাত্মতা অনুভব করে। দুরে একটা চিতা জ্বলে ওঠে । বাঁপাশ থেকে ভেসে আসে ক্ষুধার্ত শেয়ালের ডাক ।
নারীও নদীর মত কথা বলে।দুজনা একাত্মতা অনুভব করে। দুরে একটা চিতা জ্বলে ওঠে । বাঁপাশ থেকে ভেসে আসে ক্ষুধার্ত শেয়ালের ডাক ।
সাইমন
বালির গর্তটা দুহাতে আঁকড়ে থাকে ।