গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়

প্রতিবিম্ব


নদীর নাম কংসাবতী।শীর্ণকায়া তবুও যৌবনবতী বর্ষায় দুকুল ছাপা যৌবন আঁকাবাঁকা সর্পিল ছন্দ। ঠিক কবিতার মত।স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দেরা খেলা করে নদীর বুকে দুপাড়ে শালমহুয়া আর করঞ্জার ভীড় নদীর আঁচলে নরম সুবাস

তবু তার মনে দ্রোহ চোখ তার আগুনের গোলা পুঞ্জিভূত অভিমান সভ্যতার নামে তাকে চিরে ফালাফালা করে বুকে অজস্র পাথরের বোঝা চাপিয়ে রুদ্ধ করেছে তার ছন্দম্ গতি ধর্ষিতা হয়েছে মুকুটমনির টিলায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বাঁধ বাঁধে হারিয়ে গেছে তার জীবন যৌবন পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত বাস্তুকারের দল

কংসাবতী ধর্ষিতা নারীর মত কথা বলে লাশ হয়ে পড়ে থাকে

মেয়ের নাম পাতামনি। সুগঠনা

কংসাবতীর রুপোলী বালিয়াড়ি নগ্ননির্জন পৌষালী হিমেল হাওয়া অবিন্যস্ত করঞ্জার শুকনো পাতা ঝরে পড়ছে টুপটাপ। যৌবনবতী আকাশ পূর্নিমার মিহি আলো।সাইমন ওঁরাও ক্ষ্যাপাটে অবিন্যস্ত চুল আর মেঘলা চোখ নিয়ে ইতিউতি নির্জনতার গভীরতা মেপে বালি খুঁড়ছে একমাস না কাটা আঙুলের নখ দিয়ে ষোল ইঞ্চির মত খুঁড়ে চমকে ওঠে সাইমন ওঁরাও চুঁয়ে আসা স্নিগ্ধ কংসাবতীর জলে ভরে ওঠে গর্তটা ভরা পোয়াতির মত পূর্নিমার চাঁদ প্রতিবিম্বিত হয় সেই হিম জলে। খুশী হয় সাইমন। এইতো সেই অবিকল পাতামনির মুখচ্ছবি।স্নিগ্ধ, কোমল, নিস্পাপ  অভিমানী ষোড়শী পাতামনি। ঠিক একমাস আগের দেখা সারহুল পরব উত্তাল সাঁওতাল পল্লী খলবলানো ঝরণার মত পূর্নিমা রাত রাতভর নাচ লালপাড় সাদাশাড়ী হাতে খাড়ু,কোমরে রুপোর বিছে পায়ে মল ছেলেদের পরনে গেঞ্জি আর হলুদ ধুতি মাথায় ময়ূর পালক প্রায় সবাই মহুয়া নেশায় মত্ত। সাইমনও মাদলের দ্রিমিদ্রিমি তালে সাইমন ওঁরাও বিভোর নেশা কাটতেই ভোর। দুচোখ কচলে দেখে পাতামনি নেই


খুঁজে পাওয়া গেল মুকুটমনিপুরের টিলায়  নিথর পাতামনি। গুটিকয় হায়নার শিকার পাতামনি রক্তাক্ত যোনিতে অজস্র ডেঁয়ো পিঁপড়ে রুদ্ধ হয়ে গেছে চলার গতি গলায় কালশিটে দাগ হারিয়েছে জীবন যৌবন। ঠিক যেন ক্ষয়াটে চাঁদ। লাশ হয়ে পড়ে আছে পাতামনি।চারহাতি গামছায় ঢেকে দেয় ওর নগ্ন শরীর হঠাৎ টলটলে জল নড়ে ওঠে হারিয়ে যায় প্রতিবিম্ব সাইমন ওঁরাও এর বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে

নারীও নদীর মত কথা বলে।দুজনা একাত্মতা অনুভব করে। দুরে একটা চিতা জ্বলে ওঠে বাঁপাশ থেকে ভেসে আসে ক্ষুধার্ত শেয়ালের ডাক


সাইমন বালির গর্তটা দুহাতে আঁকড়ে থাকে