হ্যালো, প্রভু আছেন? একটু লাইনটা দিন না
প্লীজ।
কে বলছেন?
কাকে চাইছেন?
আঁজ্ঞে আমি ভগবান ডট্ কম্ পত্রিকা থেকে
ওনার এক সন্তান, মদন গুপ্ত বলছি। প্রভুকে একবার বিশেষ প্রয়োজন, লাইনটা ওনাকে একবার
দিন না। আমি বেশী সময় নেব না।
তাতো বুঝলাম, কিন্তু আপনি কাকে চাইছেন?
আঁজ্ঞে স্যারকে, মানে ভগবান বাবু, সরি,
মানে প্রভু ভগবানজীকে।
কিন্তু এতো সকালে কেউ ফোন করে? উনি এখনও
ঘুমচ্ছেন, তাছাড়া মর্তে ঐ নামে ওনার কোন সন্তান আছে বলেও তো কোনদিন শুনি নি।
আঁজ্ঞে এখনতো সকাল এগারটা। তাহলে কখন ফোন
করবো বলুন।
প্রভুর তো আর আপনার মতো শুয়ে বসে সময় কাটে
না, তাই ওনার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। আপনি ওনার নম্বরটাই বা পেলেন কিভাবে? যাইহোক
আর ফোন করে ওনাকে বিরক্ত না করে, আপনার বক্তব্য ওনাকে সংক্ষেপে দশটি শব্দের মধ্যে
লিখে এস.এম.এস.
করে দেবেন।
আপনাদের ওখানে এস.এম.এস. যায়? তাছাড়া দশটা শব্দে কখনও
বক্তব্য শেষ করা যায়?
আরে বাবা, বক্তব্য মানে তো প্রভু
সর্বশক্তিমান অথবা প্রভু করুণাময় বা প্রভু আমাদের মঙ্গল করো। এরজন্য কত শব্দ লাগে
শুনি? এর বাইরে বেশী তেল মাখানো কথাবার্তার তো কোন প্রয়োজন দেখি না।
না স্যার, দশটা শব্দে বা এস.এম.এস. করে
কাজ হবে না। আমি আমার পত্রিকার জন্য ওনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই, আপনি ওনাকে
একটু বুঝিয়ে বলে রাজী করান প্লীজ।
তাতে আমার কী লাভ হবে? তাতে আমার নাম বা
বক্তব্যের উল্লেখ থাকবে? আমি কষ্ট করে ওনাকে রাজী করাবো, আর উনি নিজে নেপো হয়ে
দইটি খাবেন। ওনাকে তো কখনও সাক্ষাৎকার দিতেও শুনি নি। যাইহোক আপনি পরে ফোন করুন,
দেখি কী করতে পারি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার, আমি
ঘন্টাখানেক পরে ফোন করবো।
আপনি কী পাগল না কী? প্রভু ঘুম থেকে উঠে
প্রাতরাশ সেরে একটু বিশ্রাম নেবেন। আপনি সন্ধ্যার দিকে ফোন করুন।
ঠিক আছে স্যার।
-----------------------------------------------------------------------------
হ্যালো, আমি ভগবান ডট্ কম্ থেকে মদন গুপ্ত
বলছি। সকাল বেলা আমি ফোন করেছিলাম।
বুঝেছি, একটু ধরুন।
হ্যালো, তুই কে বলছিস বাবা? বল আমার কাছে
কী জানতে চাস?
স্যার,
আমি ভগবান ডট্ কম্ পত্রিকার মালিক, আপনার দাসানুদাস,
মদন গুপ্ত বলছি। আপনাকে আমার পত্রিকার জন্য কিছু প্রশ্ন করতে চাই। বেশ কয়েক মাস
চেষ্টা করে আজ আপনাকে পেয়েছি, কিন্তু আপনাকে কী বলে ডাকবো? স্যারটা বড় বেমানান,
কেমন পরপর মনে হয়, বাবা বা দাদা বলে সম্বোধন করলে আপনার কী আপত্তি আছে?
আপত্তির কী আছে, তুই কী জানিস না
মর্তলোকের এক বিখ্যাত কবি বলেছেন— নামে কী বা আসে যায়?
হ্যাঁ জানি বৈকি, কিন্তু তিনি তো ইংরেজ
কবি, বিদেশের মানুষ। আপনি অন্যান্য দেশের খবরও রাখেন?
তার মানে? বিদেশটা কী আমার শাসনের মধ্যে
পড়ে না বলে মনে করেছিস? গোটা বিশ্বটাই আমার শাসিত অঞ্চল। এখন তো তোদের কম্পিউটারের
কৃপায় সারা বিশ্বের খবর রাখা আরও সহজ হয়ে গেছে। তবে আমার এখানে ভালো কম্পিউটার
জানা লোকের বড় অভাব। দেখি তো, তোদের ওখানকার বাচ্চারা পর্যন্ত কত ভালো কম্পিউটার
চালায়।
ভগবানদা, আপনার ওখানে লোকেরা কম্পিউটার
চালায়? ওখানেও লোক বাস করে?
ওমা সে কী কথা, তোদের ওখান থেকে কম্পিউটার
জানা যারা এখানে আসে, তারাই তো কম্পিউটার চালায়। কিন্তু এরা লোক ভালো হলেও কাজ
সেরকম জানে না।
কিন্তু দাদা, আমরা তো জানি ঈশ্বর যা করেন
মঙ্গলের জন্যই করেন। ভালো কাজ জানা কিছু কম্পিউটার বিশেষজ্ঞকে সময়ের আগেই আপনার
ওখানে নিয়ে চলে গেলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
সেটা অসাংবিধানিক হবে, তাছাড়া তাতেও তো
বিস্তর অসুবিধা। ভালো কম্পিউটার জানা লোক হলেই তো হ’ল না, তার এখানে আসার মতো
অন্যান্য গুণাগুণও তো থাকা প্রয়োজন। কাজের লোক যারা আসে, তারা স্বর্গে আসার
উপযুক্ত নয়। আবার স্বর্গে আসার উপযুক্ত যারা এখানে আসে, তারা সারা জীবন ঠাকুর
ঠাকুর করে কাটিয়েছে বটে, কিন্তু কোন কাজকর্ম করেও নি, শেখেও নি। এখনতো এখানে লোক
প্রায় আসেই না বলা যায়।
কেন? মৃত্যুর হার কমেছে ঠিক কথা, কিন্তু
লোকও তো ফুটে যাচ্ছে, থুরি মারা যাচ্ছে প্রচুর।
আরে আগেতো সৎ, ধার্মিক লোকের অভাব ছিলো
না, কিন্তু এখন গোটা বিশ্ব জুড়ে এ ব্যাপারে কিরকম বুজরুকি চলছে দেখিস না। মন্দিরে
আমার গলা থেকে, বাক্স থেকে গয়না খুলে নিচ্ছে, এমন কী আমার পূজার নাম করে চাঁদা
তুলে নামীদামী লোককে দিয়ে ফিতে কেটে উদ্বোধন করে ভালো ভালো মিষ্টির প্যাকেটগুলো
পূজার আগেই সাবাড় করে দিচ্ছে। আগে এসব বুঝতেও পারতাম না, কিন্তু এখন তোদের
আবিস্কৃত খুড়োর কল, সিসিটিভির দৌলতে সব বুঝতে পারি।
গোটা বিশ্বটা আপনার শাসনে চলে বলছেন,
কিন্তু বিশ্বের নানা প্রান্তে তো নানা ধর্মের, নানা সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে।
সবাইতো আপনার পূজা করেও না। প্রত্যেক ধর্মের তো আলাদা আলাদা আরাধ্য দেবতা আছে।
এই বুদ্ধি নিয়ে তুই সাংবাদিকতা করিস? দেখিসনা
কোন কোম্পানি বেশী বড় হয়ে গেলে, সুষ্ঠভাবে কোম্পানি পরিচালনার জন্য,
লাভ কম দেখাবার জন্য,
মোট আয় বিভিন্ন কোম্পানির নামে ভাগ করে দিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি
দেবার জন্য, কোম্পানির
মালিক একই কোম্পানিকে পাঁচ সাতটা কোম্পানিতে পরিণত করে। বুঝলি না? মনে কর দাস অ্যান্ড কোম্পনি, দাস ব্রাদার্স, দাস অ্যান্ড সনস্, ইত্যাদি
একই দাসবাবুর কোম্পানি, কিন্তু বিভিন্ন নামে ভাগ হয়ে যাওয়ায় দাস বাবুকে ট্যাক্স কম
দিতে হয়, আবার সুষ্ঠভাবে কারবার চালাতেও সুবিধা হয়। প্রতিটা কোম্পানিতে নামেই
অন্যলোক মালিক, অন্য লোক চালায়, আসলে সবক’টা কোম্পানি স্বয়ং দাসবাবুই চালান।
বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিকরা তাদের মালিকের কাছে অভাব অভিযোগ পেশ করলে দাসবাবুই তার
সুরাহা করেন। আসলে গোটা দাস গ্রুপের মালিক দাসবাবুই, বিভিন্ন কোম্পানির লোকের কাছে
তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত। মনে কর না কেন বিভিন্ন ধর্মগুলো হচ্ছে এই বিভিন্ন
কোম্পানি, আর আমিই সেই দাসবাবু, যাকে এক এক ধর্মের লোক এক এক নামে চেনে, এক এক
নামে ডাকে।
কিন্তু সারা দুনিয়া জুড়ে এই যে এত হানাহানি,
এত হিংসা, এত জঙ্গি আক্রমণ, এত হত্যা, আপনি কার মঙ্গলের জন্য সব দেখেও চুপ করে
থাকেন যদি একটু বলেন।
আবার একটা বোকা বোকা প্রশ্ন। আচ্ছা তুই তো
সাংবাদিক, খবর জোগাড় করাই তো তোর কাজ। তোর আশপাশে কত সমাজ বিরোধী, প্রমোটার, মাস্তান,
রোজ সকাল সন্ধ্যা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, মানুষ মারছে। বলতো, সব দেখে, সব জেনে, সব
বুঝেও, সব রাজ্যের সব সরকার মুখ বুজে আছে কেন? কারণ এরাই সরকারের সবথেকে বড় পূজারি।
তারমানে আপনিও ঐ একই কারণে মুখ বুজে আছেন?
আপনার সন্তান বেঘোরে প্রাণ দিচ্ছে আর আপনি নীরব, এ আপনার কেমন বিচার?
নো কমেন্ট্।
কিছু একটা অন্তত বলুন।
হারাধনের দশটি ছেলে কবিতাটা পড়েছিস? তোদের
মতো আমারতো আর একটা বা দুটো সন্তান নয়, শুধু তোর দেশেই আমার একশ’ কোটির ওপর সন্তান
আছে। তার মধ্যে থেকে কয়েক হাজা্র, এমন কী কয়েক লক্ষ বেঘোরে প্রাণ হারালেও, রইলো
না আর কেউ হয়ে আমার হারাধনের মতো অবস্থা হবে না।
বাঃ, বেশ উত্তর যাহোক।
আর কোন প্রশ্ন আছে? আমার এবার একটু
বিশ্রামের প্রয়োজন।
দাদা, সবাই যে বলে আত্মা অবিনশ্বর, কথাটা
কী সত্যি? মানুষের সংখ্যা যে এত প্রবল বেগে বাড়ছে, আপনি এত নতুন আত্মাই বা জোগাড়
করছেন কোথা থেকে?
এ বড় জটিল প্রশ্ন। চৈতন্য, হৃদয়, মন,
স্বভাব, দয়া, মায়া, মমতা, এইসব গুণ দিয়েই তো আত্মার সৃষ্টি। যাদের এই সব গুণগুলোই
নেই, তাদের আত্মার প্রয়োজনটাই বা কী? তোরা যে হাইব্রেড সবজি রোজ বাজার থেকে কিনে
খাস, তার ফলন বেশী কিন্তু কোন গুণ নেই। এখনকার মানুষের ফলন বেশী কিন্তু গুণহীন,
তাই আত্মারও প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু দাদা আমরা তাহলে.........
“চা দিয়ে গেলাম উঠে পড়”।
গিন্নির ডাকে
ঘুমটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলে, প্রথমেই মনে হ’ল আমি তো মদন গুপ্ত নই, সাংবাদিকও
নই, আমি তো সরল বসু, সাতশ’ টাকার মাছি মারা কেরানি। মদন গুপ্ত তাহলে কে?