গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

মৌসুমী রায় (ঘোষ)


উপলব্ধি

সোনালী ক্লাস নিচ্ছিলো, তখনই ফোনটা আসে | রুমেলার কল বলেই রিসিভ করলো | রুমেলা ওর খুব ভালো বন্ধু, নিশ্চয় কোনো জরুরী দরকারে ফোন করেছে| তা না হলে সাধারনত ক্লাস নিতে নিতে সোনালী বড় একটা ফোন কল রিসিভ করে না | ক্লাসের বাইরে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় | স্টুডেন্টদের কিছু লিখতে দিয়ে এসেছে |

-হ্যালো !
-কি রে! তুই ইন্টারভিউ- এলি না কেন ?
উৎকণ্ঠা ফেটে পড়লো রুমেলার স্বরে |
-ইন্টারভিউ ! কিসের ?
আকাশ থেকে পড়লো সোনালী |
-আরে আজকে তো সেই চাকরীর ইন্টারভিউটা ছিলো | তুই তো সর্ট লিস্টেড ছিলিস | তোর নাম কতোবার ডাকলো | তুই এলি না কেন ?
শুনতে শুনতে সোনালীর কান-মাথা ভোঁ ভোঁ করতে থাকে| কি? সেই চাকরীটার ইন্টারভিউ ? যেটা ওর কাছে স্বপ্ন আর সর্ট লিস্টেড হয়েও মিস করলো | কি করে হোলো এটা ? তো কোনো ইন্টারভিউ লেটার পায়নি|
-কিন্তু আমি তো কোনো ইন্টারভিউ লেটার পাইনি | আমি তো জানিনা আজ ইন্টারভিউ ছিলো | .... যখন আমার নাম ডাকছিলো তখন তুই কেনো আমাকে জানালি না? তাহলে কিছু তো করা যেতো | এখন জানাচ্ছিস, এখন তো কিছুই করার নেই | ঈসস...!
আফসোস ফেটে পড়লো সোনালীর স্বরে |

শেষের কথাগুলো শুনে রুমেলা যেন খানিক থমকে গেলো| আমতা আমতা করে বললো, "আমি তো জানিনা তুই এপ্লাই করেছিলিস, আমাকে তো বলিসনি, আমি ভাবলাম অন্য কেউ | তাই..."
বোঝাই যচ্ছে একটা ছেদো অজুহাত | এমন যদি সত্যিই ভাবতো তবে এখন কলটা করলো কেনো যখন আর করার কিছুই নেই | ভালো সাজার কৌশল| রাইভালরী |

মাস কয়েক আগে সোনালী এপ্লাই করেছিলো এই পোস্টটার জন্য | তখন এপ্লিকেশন চাওয়া হচ্ছিলো| ইউনিভার্সিটি শেষ হওয়ার পর রুমেলার সাথে যোগাযোগ কমে গেলেও বন্ধুত্ব ভালোই ছিলো, আর তাই নিয়ে ওরা দুজন বেশ গর্ব করতো| যোগাযোগ কমে যাওয়ায় খবরটা দিতে পারেনি রুমেলাকে, যেমন - জানতে পারেনি রুমেলাও এক. পোষ্টের জন্য এপ্লাই করেছে| সেটাকেই অজুহাত করেছে| যাইহোক, ইন্টারভিউ লেটারটা পেলো না কেনো সেটা দেখতে হবে |

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো জেনারেল পোস্টে পাঠানো সেই ইন্টারভিউ লেটার পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের গাফিলতিতে সোনালীর হাতে এসে পৌঁছয়নি| সব জানিয়ে আবার এপ্লিকেশন দিয়ে এক নিষ্ফল চেষ্টা করলো সোনালী | অফিসের এক স্টাফ হেসে বলেছিলেন, "আপনার বন্ধু ইন্টারভিউ চলাকালীন ডেকে নিলে ইন্টারভিউ লেটার ছাড়াই আপনি ইন্টারভিউ দিতে পারতেন|" কাটা ঘায়ে নুনের ছিটেটা মুখ বুজে হজম করতে হোলো |

সোনালী আরও একবার বুঝলো পৃথিবীতে বন্ধু বলে কিছু নেই, কেউ নেই | সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী | আর জীবনটা একটা বক্সিং-এর রিঙ|