ফানুস ওড়ানো রাত্রি দেখেছি, ফানুসের পতন ও। ঝরে পড়া তারাদের কেউ মনে রাখে না। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট, ফিঁসফাসে ভারী হয়ে ওঠা বাতাস। তারপর সব ক্যামন ফিঁকে হয়ে যেতে থাকে । ফানুসের ওড়াওড়ি দেখে আমিও ভাবতাম, ওরা বুঝি কোন পাহাড় চূড়োয় গিয়ে জিরোবে । তারপর দেখলাম, একসময় ওদের আলো নিস্প্রভ হয়ে আসছে আমার আকাশেই; খসে পড়ছে আমার কল্পনাকে ছাই করে । সে এক অন্য কষ্টের অনুভব ।
দীর্ঘ পথ ভ্রমনে কষ্টের বিচিত্র রঙ, আলাদা কারুকাজ...........। ব্যাস্ত মানুষেরা সাধারণত অতশত দেখে না । আমিও শিখে গেছি দেখেও না দেখার ভাণ করতে । একজন ভিক্ষুককে টাকা দিলে দশজন ঘিরে ধরবে, এই ভয়ে মাথা নীচু করে হনহন করে হেঁটে যাই। কুৎসিত কিছু দেখার ভয়ে চারদিকে তাকাই না। কবিতার খাতা খুলে ঘর সংসারের খুচরো হিসেব লিখি । আপাদমস্তক ভণিতায় জড়ানো এক গৃহভূত ।
এক সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁর ডাক শুনে চমকে যাই। এই রঙচঙে শহরে ঝিঁঝিঁ! রঙের আড়ালে মলিন কেত্তন.........। বাইরে চোখ রাখতেই উথাল পাথাল জ্যোসনা । ছেঁড়া মেঘগুলোর উচ্ছাসে ফেলে আসা দিন, ওরা নিরন্তর আঁকছে। এই প্রথম শহরটাকে আমার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ।
কোজাগর সাজে । অনেককাল আগের চোখ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি । চাষ করা কাশফুল ছুয়ে ইছামতীর পাড়ে চলে যাই। ঐ তো আমার অন্ধ নানী বসে নিঃসঙ্গ চৌকির একপাশে। হারিকেন বাতি নিভিয়ে রেখেছি । শারদ জ্যোছনায় ঘর মাখামাখি । নানী আমার মুখ হাতড়ে দেখছিলেন, আশ্চর্য ক্ষমতাবলে জেনে গিয়েছিলেন আমার চিবুকে কালশিটে পড়েছে । আবছা বাতাসে কেঁপে উঠে ভিতরবাড়ীটা । অন্তরের চোখ দিয়ে যে দ্যাখে, তার কাছে কিভাবে ভাণ করবো ?