দাদিআম্মা সারাক্ষণই বিরক্ত । বাড়ির কাজের মেয়েটিকে সে ছেড়ি বলে ডাকে । ছেড়িডা
কোথায় গেল ?
চিৎকার করে নিজের মৃত্যু কামনা
করেন
। কারণ ছেড়ি নাকি তাকে পাত্তাই দেয় না। ছেড়িকে বাদ দিয়ে দাদি আম্মা এবার নাতিদের নিয়ে শুরু করে । তার
সারাদিনের অভিযোগ নাতিরা কেউ মানুষ হচ্ছে না । চরম
বিরক্তি নিয়ে বলে,'ঐ যে কয় যেই পাখি ওড়ে,বাসায় ধরফর করে ।' পাড়ার মেয়েরা বেড়াতে এসে তার কুশল জানতে চাইলে সেখানেও
বিরক্তি বলে,
কেমন আর আছি মরিনা-টরিনা । আমাদের
মাথায় একদিন দুষ্ট বুদ্ধি এলো । মনে হল দাদাভাইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলে দাদি আম্মা নিশ্চয়ই খুশি হবেন । আমরা তাদের বিয়ের কথা জানতে চাই । দাদিআম্মা
খুশি না হয়ে অনেকদিন আগে মারা যাওয়া দাদাভাইকে উদ্দেশ্য করে ঘৃণাভরে উচ্চারণ করে, বুইড়্যারে মাফ করি নাই । আমরা
পরস্পরের দিকে তাকাই, দাদাভাই পাখিটা কী উড়তে
পারে নাই ? ধরফর করে নাই ?
অনেক সন্ধানে জানতে পারি দাদাভাইয়ের একটি গোপন ব্যাপার ছিল ।
চিঠি
কলেজে পড়ার সময় ওরা তিন বান্ধবী পরস্পরকে চিঠি লিখত । চিঠি
খেলায় বাবা মায়ের দেয়া নামগুলো বদলে দিয়ে তিনজন হয়ে গেল,আশা-লতা-মিতা ।
তিনজনের গায়ের রং কাল । তিনজনেরই
চোখ সুন্দর । ক্লাসরুমের দেয়ালে ওদের চোখ নিয়ে কবিতা লেখা হত ।
কো-এডুকেশনে পড়ায় প্রত্যেকটি দিন
ছিল কৌতুহলে পূর্ণ । ওদের চিঠিগুলো না পাওয়ার বেদনায় ভরা থাকত।আজ সে চিঠি
পড়লে মনে হয় বেচারী । দ্বিতীয় বর্ষে উঠেই লতার প্রেম হয়ে গেল জুনুভাইয়ের সাথে । মিতার
বিয়ে হয়ে গেল । আশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কারণ এখন আর চিঠি লেখা হয় না । কোন
এক অজ্ঞাত কারণে মিতার স্বামী মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে মিতার সাথে ছাড়াছাড়ি
হয়ে যায় । লতা ডাক্তারী পড়তে গেলে এইচ এস সি তে,ফেল করা প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক ভেঙে যায় । আশা
আবার চিঠি লেখার সুযোগ পায় । দায়িত্ব নিয়ে লেখে,ভেবনা
সব ঠিক হয়ে যাবে। আশা আবার চিঠিতে বেদনার
ভাষাগুলো ঠিক করে ভাবে, এই তো বেশ ।