গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৮ জুন, ২০১৪

সাঈদা মিমি

মাইছা দেউ

          এত রাত্তিরে কেউ ডোঙা ভাসায়? আমরা ভাসালাম, আমি, হাতেম আর ডোঙার মাঝখানে বসে নানি মা।  এই কুলক্ষণা চিন্তা নানির মাথা থেকে এসেছে, আজ ছাইবাবা পীরের জলসায়ে জশন, সারারাত চলবে, নানি পীর বাবার মুরিদ, তাকে যেতেই হবে গাঁও গেরামে রাত আটটা মানেই মাঝরাত, আর এইসময় আমি আর হাতেম বৈঠা চালাচ্ছি? ডোঙা ডুবলে বুঝবা বুড়ি! কথা না কইয়া জোরে বৈঠা চালা,  হাতেম তো আমার চাইতেও ছোট, ওর কব্জিতে কি এমন জোর? তারপরও নানিকে বাবার আখড়ায় পৌঁছে দিলাম দেড়ঘন্টার মধ্যে, পথ কিন্তু আধাঘন্টার, আমরা কি দক্ষ মাঝি, এ্যাঁ ?

আমরা দুই ভাইবোন কিন্তু মহাখুশী, পীর বাবাজীর জলসায় খানাদানার ব্যাবস্থা জম্পেশ, অনেক সবজি আর মাংসের ছোট ছোট টুকরোর মিশেল দেয়া ঢিলা খিচুরী, দুধের ঘি ওঠা পায়েশ, অপেক্ষা করে আছি সময়টা কখন আসবে,কলাপাতার পাতে রাখা সব খাবার চেটেপুটে খাবো ভাবনা পিছলে পড়লো পীর সাহেবের নুরাণী তবকের ডিব্বায়, আমাদের ডাক পড়েছে হুজরার ভিতর

নানি বলেই যাচ্ছেন…. ( বুড়ি এই ছিলো তোমার মনে?) আমার নাতিনডারে দেখেন হুজুর, এই বয়সে ছেচুনি দিয়া ছেইচ্চা পান খায়, ভর দুপুরে খালপাড়ে বইস্যা মাছ ধরে, রাইতের বেলায় একলা একলা পিছন দুয়ারের কৃষ্ণচূঁড়ার নীচে বইস্যা থাকে, নিজের লগে নিজে কতা কয় আর হাসে, এইরকম ত্যানাপ্যাঁচানো হরেক বর্ণনার পর হুজুর হুংকার ছাড়লেন, : করিম্মা তর তুলারাশি না? একজন রোগাভোগা জুব্বাধারী করিম উঠে এলো, সে বিশেষ কিছু দেখতে পায় যা আমরা দেখি না, কারণ করিম তুলারাশির পুরুষ হুজুর পানিতে ফুঁ দিলেন, :ভালো কইরা জলে চোখ রাখ, পরীক্ষণ কইরা এই পরীক্ষণ কি জিনিস? যখন এই চিন্তা আমার মাথায় ঘুরছে এবং নাকে এসে লাগছে খিচুরী পায়েশের সুবাস, তখন করিম জানালো, পানিতে একটা ডানাওয়ালা মাছ দেখা যাচ্ছে

সর্বনাশ.. পুনরায় দ্বিগুণ তেজে হুংকার ছাড়লেন বাবাজি. মাইছা দেউ বড়ই বিচিত্র কথা. একটা মেছো দেউ হুজুরেরর পড়া পানির মগে! অতঃপর যা শুনলাম তাতে আমার ঘোর কেটে গেলো :তোমার নাতিন রে মাইছা দেউয়ে ধরছে আমি আতকে উঠি, পরশু আমার পুঁটি মাছের খলুই অর্ধেক সাফা ছিলো, এইতো কয়েকদিন আগেই নলখাঁগড়ার আড়ালে চিমসে মতন কালো একজন বামনকে দেখেছি, কোনদিন রাতে যেন একটা ভীষণ ঠাণ্ডা বাতাসে আমার ঘাড়ের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো….! :তোমার নাতিনরে বইলা আটকাইতে পারবা না, দেউ তারে দিবানিশি ডাকে :তয় উপায় হুজুর? নানি কেঁদেই ফেললেন :কবচ দিতাছি, এহনই ডাইন বাজুতে বাইন্ধা দিমু, দুইটা তাবিজ লেইখা দিতাছি, রুপার মাদুলিতে ভইরা জুম্মাবারে গলায় ঝুলাইয়া দিবা, আর পানি পড়া তো দিমুই, খরচ পড়বো সাড়ে পাঁচশ টাকা আট আনা, একমাস হেরে চোখে চোখে রাখবা, দেউ রে আমি আটকামু এরই মধ্যে

হুজুর ধরা খেলো হাটবারের দিনে, না দুপুর না বিকেলে। ছোটদের সব কথা জানতে মানা, বড়রা বলাবলি করে, শুনি, হুজুরের দ্বিতীয় বিবির কুমারী বাদি রশনীর পেট খসাতে গিয়ে, সত্যটা জানাজানি হয়ে গেছে।