ছিটে বেড়ার ফাঁক দিয়ে আকাশটাকে দেখে একটুও অবাক হয় না
গোপলা । খুব খোলামেলা শুধু মাঝে মাঝে মেঘ ছাড়া আর কিছু আকাশে দেখা যায় না । গ্রহ
নক্ষত্র সূর্য চন্দ্র এগুলো তো আছে , কিন্তু আমাদের দিশাতে মুক্ত দিগন্ত ছাড়া আর কিছু নেই ।
অথচ মার কোলে বসলেই এই ছিটে বেড়ার ফাঁক দিয়ে সারা আকাশটাই চলে আসে
। সারা দিন কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে গোপলা কি করছে কোথায় থাকে আলাদা করে খেয়ালই করে
না ।
হয়তো কিত কিত খেলছে পাশ দিয়ে এক গাদা খড় নিয়ে চলে গেল কিন্তু কিছুই
বলল না । রাগ হল একটু পরেই বাড়িতে ফিরে বলল – মা , ভূতো
আমাকে মারল তুমি দেখেও কিছু বললে না ।
চাল বাছতে বাছতে মা উত্তর দেয় - তুই যে ডান পা ফেলে গুটিটা চালাকি
করে সরিয়ে নিলি তার বেলায় । খেলায় চালাকি নয় ।
গোপলা মায়ের গলা জড়িয়ে বুঝতে পারে আকাশটা কত বড় । মা আলতো করে
মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় – আর না , অনেক খেলা হল এবার পড়তে বসো ।
গোপলা বায়না ধরবে – আর
একটু । তুমি টিফিন দাও । আমি আসছি । মা জানে একটু মানে অনেকটা । সন্ধ্যে গড়িয়ে
যাবে আবার ডাকতে হবে । কিন্তু কিছু করার নেই । তাই একটু পরেই ডাকতেই চলে এল । পড়তে
বসেই নানান বায়নাক্কা । পিঠটা চুলকে দাও । এটা কঠিন পরে পড়ব । তেমন কিছু তো পড়া
দেওয়া নেই । মাকে তখন মিশে যেতে তার সাথে । সব কিছু ঠিক না জানলেও বসে থেকে যে
তদারকি করে তাতে গোপলা বেশ বুঝতে পারে মা ছাড়া তার চলা অসম্ভব । রাতের রান্না বাড়া
সাথে কি রকম যেন যাদু করে সব পড়া করিয়ে নেয় । আর গোপলা হয়ে নিজের জগতে অনেকটাই
সেরা । ধীরে ধীরে ছোট আকাশটা কত বড় হয়ে যায় ।
স্কুলের বন্ধুদের সাথে মারামারি করে বাড়ি ফিরে এসে বললে মা প্রথমে
তাকেই দোষ দেয় । গোপলার খুব রাগও হয় । মনে হয় মা কিছু না বুঝে শুধু আমাকেই দোষ দেয়
। ওরা সব গুণ্ডা ।
তারপর সময় বইয়ে দিয়ে ঠিক
বুঝতে পারে গোপলা যে সেও তো কম যায় না । তাহলে অন্যকে দোষ দিয়ে কি লাভ ? আর মার এই ট্যাক্টিসে গোপলা বেশ বুঝতে পারে তাদের ছিটে
বেড়ার ঘরে আকাশ কেন এসে বরাবর খেলা করে । তাই সে অনেক বড় হতেও পারবে ।