গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

মাস্ক ও বিধবা সিঁথি  

শিবু বলে,ওই দ্যাখ, কতগুলো মাস্ক ঝুলছে।

-- চল তবে ওখান থেকেই কিনি।আকাশ উত্তর দেয়।
রাস্তার দিকে মুখ টানা বারান্দার সামনে শেড সেখানে একটা দড়িতে রংবেরঙের বেশ
কয়েকটা মাস্ক।নানারকম কোয়ালিটির অর্থাৎ দামও বিভিন্ন।
-- কোনটার কত দাম গো?
সামনে কেউ নেই ঘরের ভেতর সেলাই মেশিনের শব্দ।
-- আসছি -- বলে যে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় তাকে দেখে বেশ চমকে গেল আকাশ,
পসারিনি থমকায়, অপলক চেয়ে থাকে। অবাক দুজন শব্দহীন। এভাবেও দেখা হয়!
-- তুমি এখানে? বলে একজন।
-- তুমি এখানে? অন্যজনও একই প্রশ্ন করে।
তাকিয়ে থাকে বন্ধু শিবু।


সেই কবে মামাবাড়ি ছেড়ে গেছে আকাশ।কলেজের পড়া শেষ করে সে বাড়ি ফিরে যায়। তার মধ্যে দু-ক্লাস নীচে পড়া সঞ্চারীর সঙ্গে তার একটা মিষ্টি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। না,ছকে ফেলা প্রেম নয় অথচ বন্ধুত্ব জাতীয় মধুর একটা টান ওরা অনুভব করতো। সঞ্চারীর আঁকার হাত ছিল দেখার মতো।সে আকাশের স্কুলের খাতার ছবি এঁকে দিত,হাতের কাজ করে দিত।আকাশ ছিল অঙ্কে ভালো গ্রামে প্রাইভেট টিউটর ছিল না, সঞ্চারীকে অঙ্ক বুঝিয়ে দিত আকাশ।
    

দুজনেই ছিল পাশাপাশি নিজেদের মামার বাড়িতে।একসময় আকাশ ফিরে যায় বাবার কাছে।তাঁর ব্যবসার হাল ধরতে গিয়ে কয়েকবছর কেটে গেছে।সঞ্চারীও বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে জানতো আকাশ।
   

এভাবেই কত প্রিয়জনের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়।আজ করোনা আতঙ্কের ভেতর মাস্ক-নির্মাতা কাম বিক্রেত্রী সঞ্চারীর  সামনে ক্রেতা আকাশ। একটু অন্যমনস্ক ছিল আকাশ,একসময় তার মনে হলো সঞ্চারীর দেহে কীসের যেন একটা অভাব আছে।কথার মাঝেই সে লক্ষ করে ছাপাশাড়ি ঠিক আছে,তাহলে? অ্যানিমিয়ার রোগীর মতো ফ্যাকাশে রং? আর? ভাবতে থাকে সে......বিষন্নতাও আছে.... কী তবে নেই? ভাবনার মাঝে তার চোখে পড়ে বিষন্ন এক বিধবা সিঁথি যেন ভরা শ্রাবণের মরা খাল হয়ে আছে।