গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 ঋণ শোধ 


পাড়ার বাবলু দা যেমন মজার মানুষ ঠিক সেই রকম পরোপকারি।কারুর অসময়ে উনি নিশ্চই  পাসে থাকেন এবং শুধু তাই নয় সমস্যার সমাধান ও করেন। কিন্তু বাবলুদার বাড়ির লোকেরা ওনার এই পরোপকারী স্বভাবটা পছন্দ করেন না। ওনারা বলেন জমিদারের বংশের ছেলেরা পাড়ার কেউ মারাগেলে শ্মশানে যায়না শবদাহ করতে। কিন্তু বাবলুদা বলেন শ্মশান যাত্রা মহা পূণ্যের কাজ। শবদাহ করা আরো পূণ্যের। 

বাবলুদার বাবা মা দুজনেই বাবলুদাকে ঘরে ঢুকতে দেন না। বলেন ঐ সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে থাক তুই। বাড়িতে ঢুকিসনা। আপদ অপদার্থ এক ছেলে জন্মেছে। বাবলুদার কিন্তু কোন রাগ দুঃখ নেই সে জন্য। বলেন অসময়ে লোকের কাছে থাকা তাকে সমবেদনা জানানো  মনুষ্যত্বের কাজ। এই মনুষত্ব মানুষের হৃদয় থেকে উবে যাচ্ছে দিন দিন।

আমি ওদের টাকা পয়সা দিতে পারবোনা কিন্তু অন্যভাবে সাহায্য করতে ক্ষতি কি? কতো মানুষের অভিশাপ এই বংশে আছে তা খণ্ডন করবো ঋণ শোধ করে  

বাবলুদাকে নিয়ে আমার লেখা শেষ হবেনা কারণ সত্যি বাবলুদা মহানl পাড়ায় পার্টির তরফ থেকে রক্ত দান শিবিরের আয়োজন হোলl বাবলুদা প্রধান উদ্যোক্তাl  বাবলুদার ব্লাড গ্ৰুপ AB -ve. খুব ই বিরল গ্রূপের ব্লাডl তাই বাবলুদা নির্দ্বিধায় এই বিরল রক্ত মানুষের জন্য দান করে সবাইকে বলেন ওরে আমি ঋণ শোধ করছিl এই জমিদারি রক্তে অনেক মানুষের রক্ত আছেl সেটা কিন্তু স্বেচ্ছায় দেওয়া নয় সেটা তাকে তিলে তিলে মেরে সংগ্রহ করাl আমি সেই বংশের দায়াদ, আমাকেই সেই পাপ খণ্ডন করতে 

হবেl তোরা ভাবছিস আমি বিরাট একটা কিছু করছিl কিন্তু না আমি ঋণ শোধ করছিl আমার বংশে আমার পূর্ব পুরুষরা যে পাপ করেছেন মানুষের মুখের আহার ছাড়িয়ে নিজের সম্পত্তি বাড়িয়েছেন আমি সেই বংশের বংশধর হয়ে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনাl সর্বদা আমার মাথায় একটা চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছেl তাই বোধহয় ভগবান আমাকে একটা বিরল রক্তের গ্ৰুপ দিয়েছেনl আমি সেই রক্ত দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছিl

একবার চিন্তা করতো যে বাচ্চাটার AB-ve গ্ৰুপ সে আমার রক্ত পেয়ে যদি জীবনে বেঁচে যায় তবে আমার জীবন ধন্য হবেl এই বংশের পাপ কমবেl যদিও পাপের পরিমান এতো বেশি যে আমার শরীরের সমস্ত রক্ত দিলেও তার অবসান হবেনাl