শীত পড়তে না পড়তেই সোয়েটার বোনার অর্ডার চলে আসে সাঁঝবাতির।সারা বছর ওকে বোনাটা চালিয়ে যেতে হয়,তবে শীতের সময় অর্ডারটা বেশি আসে,বোনার হাতটাও ওর খুব ভাল।বিদেশেও ওর বোনা সোয়েটার যায়। অসুস্থ বাবা আর মা,ভাই কে নিয়ে ওর পরিবার।
সাঁঝবাতির বিএ পাশ করার পর আর পড়াশুনা করা হয়ে উঠেনি।অভাবের সংসার তার উপর একটা এক্সিডেন্টের পর বাবার নিচের দিক টা একেবারে অবশ হয়ে গেছে তাই সংসারের সব ভারটাই ওর কাঁধে,তার ওপর ভাইটা স্কুলে পড়াশুনা করছে,এখন মানুষ হতে অনেক দেরি, তাই অনেক চেষ্টা করে যখন কোন চাকরি জুটল না,তখন পাড়ার এক দিদির সাহায্যে অর্ডার নিয়ে হাতে বোনা উলের সোয়েটার বিক্রি করে রোজগার করতে শুরু করে,পরে অবশ্য এক টা উল বোনার মেশিন কিনে বেশি টাকার অর্ডার নিতে শুরু করে। রোজগার যা হয় তাতে চলে যায় ওদের কোন রকমে।
একদিন
বন্ধু পিয়ালি,ওর দাদার বন্ধু ধ্রুব রায় কে নিয়ে আসে ওর কাছে,ওনার জন্য একটা সোয়েটার
বুনে দিতে হবে।সেই দিনই প্রথম আলাপ ধ্রুবর সাথে সাঁঝবাতির।আর প্রথম আলাপেই ধ্রুবর ভালো
লেগে যায় সাঁঝবাতি কে।মাপ দিতে ওকে প্রায় আসতে হতো,ক্রমে ওদের মধ্যে একটা গভীর প্রেমের
সম্পর্ক গড়ে ওঠে।ধ্রুব একটা নামি কোম্পানিতে চাকরি করে। এইভাবে একদিন সাঁঝবাতি কে ধ্রুব
বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু ও এই মুহূর্তে বিয়েতে রাজি হয় না বলে,‘আমি কি করে এদের ফেলে
স্বার্থপরের মতো বিয়ে করে তোমার সাথে চলে যাই বলতো!সেই শুনে ধ্রুব হেসে বলে আমি ‘তোমার
জন্য এক আলোক বর্ষ কাল অপেক্ষা করতে পারি,যদি তোমার প্রতিশ্রুতির হাতটা দাও বাড়িয়ে’।
অনেক গুলো বছর কেটে যায়,ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটা ভাল চাকরি পেয়েছে।পড়াশুনায় ওর
ভাই বরাবরই ভাল ছিল তাই ভাল একটা চাকরি পেতে কোন অসুবিধা হয়নি।সাঁঝবাতি দের অবস্থা
এখন বেশ ভাল। একদিন ভাই সায়ন্তন দিদি কে ডেকে বলে,‘দিদি আর তোকে সোয়েটার বুনতে হবে
না,এবার সময় এসেছে তোর নিজের দিকে তাকাবার’।এবার ধ্রুব দাকে ডেকে বিয়ের ব্যাপারে পাকা
কথা বলতে হবে। এবারের ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পরেছে। ধ্রুব কয়েক মাস আসেনি,হটাৎ বেশ ভাবাচ্ছে
সাঁঝবাতি কে।ফোন করেছিল কয়েক বার বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিন কিন্তু ফোনটা ধরেনি ধ্রুব।
তাহলে কি ওকে ভুলে গেলো। মনে মনে ভাবে সাঁঝবাতি আর বলে,‘আমি বোধহয় বেশি ভাবছি’। ভাবতে
ভাবতে শুনতে পায় দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ ও ছুটে যায় দরজা খুলতে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে
আছে ওর প্রথম বোনা সোয়েটার টা পরে ও ওকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর কি মনে হয়
ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পরে বুকে মাথা রেখে বলে,এতদিন কোথায় ছিলে? শুধু একটু হেসে ধ্রুব,
‘বলে দিলে এই আপ্যায়ন টা পেতাম?পেতাম না।তোমাকে অবাক করার জন্যই তো আমার চুপ থাকা’।আর
সাঁঝবাতি চোখের জলে ভিজে যায় বুকটা। এর কয়েকদিন পর বিয়ে টা সেরে ফেলে ওরা,আজ খুব সুখী
ওরা।হটাৎ অনেকদিন পর সোয়েটার বুনতে বসেছে সাঁঝবাতি তবে কারোর জন্য নয় ওর কোলে যে আসছে
তার জন্য।