গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

সালমা রেখা

তমসাছন্ন ছায়া

প্রথম পর্ব

সুর্মার মত কাউকে দেখেই সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেনকালো সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিন চোখদেখতে সুর্মা যেমনই হোক, স্বভাবে সে ভারী লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। তাদের বাড়ী নবাবগঞ্জের দোহারে। এলাকাটি অনুন্নত, বেশীরভাগ মানুষই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। সুর্মা তার বাবা সালাম মিয়ার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কাজলীর গর্ভের প্রথম সন্তান।

সুর্মার পিঠেপীঠী তার এক ভাই রাজু, আর আছে তার চেয়েও সতেরো বছরের বড় সৎভাই মালেক। সুর্মার বাবা সালাম মিয়া অস্থির এবং রগচটে  ধরনের মানুষ, কোন কাজই বেশীদিন সে মন লাগিয়ে করতে পারেনা। পৈতৃকসুত্রে  যথেষ্ট সহায় সম্পত্তি পেলেও অদূরদর্শী সালাম মিয়ার আর্থিক অবস্থা এখন নিতান্তই করুন। বেহিসেবী জীবনযাপন আর  দুই সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে জমিজিরাত বিক্রি করতে করতে এখন সালাম মিয়ার নিজস্ব সম্পত্তি বলতে কেবল ভিটেটাই অবশিষ্ট আছে। সালাম মিয়া দাওয়ায় বসে যখন হুক্কায় টান দেয় তখন রান্নাঘরে দুই বউ উচ্চস্বরে ঝগড়া করে। আর দুই বউয়ের ঝগড়া শুনে সালাম মিয়ার অন্ধ মা তার ঝুপড়িঘর থেকে ধমকে বলে,  

: থাম কইতাছি, দুইজন মিলা সক্কাল সক্কাল কি শুরু করলি? ঐ সালাম বউ দুইডারে কিছু কস না ক্যান ছেমড়া?

ছেমড়া তখন মাদুর থেকে তড়াক করে উঠে সামনে যে বউকেই পায়, তারই চুলের মুঠি ধরে দুই ঘা লাগিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। 

: হালার মাইয়া মানুষ! এগুলারে নিয়া যদি একটু শান্তি অয়।

সালাম মিয়ার বাড়ীতে ঝগড়া ও মারামারির এ পরিক্রমা মোটামুটি বেশ নিয়মিত বলে পাড়া প্রতেবেশীরাও এখন এতে অভস্থ। এ সময়ে প্রায়শঃই সুর্মাকে  দেখা যায় ছোট ভাই রাজুকে কোলে নিয়ে পাশের পুকুরের  শান বাঁধানো বেঞ্চে বসে আছে, কখনো বা সে মিহি স্বরে সিনেমার গান গায় “পড়েনা চোখের পলক কি তোমার রূপের ঝলক।“

খুব ছোটবেলা থেকেই সুর্মা বাড়ীতে এমনতরো অনাচার দেখে  বড় হয়েছে। বাবাকে কিছু বলার সাহস তার নেই কিন্তু মায়ের অসম্মানও তার সহ্য হয়না, তাই সে বাড়ীতে ঝগড়া-মারামারির সুত্রপাত বুঝতে পারলেই বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। পুকুর ঘাঁটে তাকে দেখে গ্রামের মেয়েরা হাসাহাসি করে,

:কিরে সুর্মা তোর বাপ বুঝি আবারো তোর মায়রে মাইর দিছে?

সে কিছু না বলে উদাস চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকে। সংসারে অভাব অনটনের কারনে  ক্লাস ফাইভ পাস করার পরে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। স্কুলে পাঠানোর জন্য তার মায়ের ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যানানিতে বিরক্ত হয়ে তার বাবা একদিন কষে তার মাকে ধমকে বলেছে,  

: মাইয়া লোকরে লেহাপড়া শিখানোর কোন দরকার নাই, অযথা টেকাপয়সা নষ্ট। বেশী লেহাপড়া শিখলে মাইয়ালোকের চোখ ফুইট্টা যাইবো। বরং সংসারের কাজ কাম শিখাও, বিয়া দিতে সুবিধা হইবো!”  

তার বাবার কথার অবাধ্য হবার মত সাহস এবং মানসিক দৃঢ়তা কিছুই তার মায়ের নেই, ফলে সুর্মার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। সুর্মার মা কাজলীর জীবন কাহিনীও খুব করুন। অল্পবয়সে পিতৃহীন কাজলীর মাকে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়ায় কাজলীর নানা-নানীই ছিল তার একমাত্র অবলম্বন। কাজলী কিশোরী বয়সে পৌঁছুলে তার বিয়ের চেষ্টা শুরু হয়, কিন্তু তার গায়ের রঙ কালো বলে কোন সম্বন্ধই লাগতো না। সবাই মোটা অংকের যৌতুক দাবী করতো যা কাজলীর নানা নানীর দেবার সাধ্য ছিলনা। ফলে সে অনেক বয়স পর্যন্ত অবিবাহিতাই ছিল। সে সময়ে দৈবপাকে সালাম মিয়ার সাথে তার পরিচয়। সালাম মিয়া তখন বাজারের মনোহারি এক দোকানে চাকুরী করতো। বাজারের কাজে কাজলী কয়েকবার সালাম মিয়ার দোকানে গেছে। ভারী বাজার এগিয়ে দেবার উছিলায় সালাম মিয়া তার সাথে খেজুরে গল্প  করতে শুরু করে। অকালে বউ মরে যাবার পরেও আর মনমতো পাত্রী না পাওয়ায় সালাম মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেনি, এমনতরো বাক্য শুনে আর রেশমী চুড়ি, ফিতা, আলতা উপহার পেয়ে আস্তে আস্তে সালাম মিয়ার প্রতি কাজলীর একটা মায়া তৈরি হয়। সালাম মিয়া কয়েকদিন ভাব-ভালবাসা বিনিময়ের পরে যখন কাজলীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন আরক্ত মুখে কাজলী এক বাক্যে বিয়েতে রাজী হয়। কাজলীর দরিদ্র নানা নানীও তার একটা গতি হওয়ায় ভারমুক্ত হয়।

বিয়ের পরে কাজলী অনেক স্বপ্ন নিয়ে  সালাম মিয়ার সাথে সংসার করতে এসে দেখে সংসারে আগের পক্ষের স্ত্রী এবং কিশোর ছেলে বিদ্যমান। বড় বউ হনুফা, প্রথম দিন থেকেই কাজলীকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করে। প্রথম প্রথম কাজলী হনুফাকে তোয়াজ করার চেষ্টা করেছে, তার অসহায়ত্ব বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই সে হনুফার ক্ষমা পায়নি। পরে ধীরে ধীরে তার মাঝেও দানা বাধে ক্রোধ আর হিংসা। ফলে, কাজলী সুযোগ পেলেই নিয়মিত ভাবে হনুফাকে একহাত নেয়। সে কারনে সালাম মিয়ার সংসারে দুই বউয়ের মাঝে কাজিয়া ফ্যাসাদও হয়ে গেল প্রতিদিনের অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার। এই ঝগড়াঝাটি আর হিংসার মাঝেই সুর্মা আর রাজুর জন্ম এবং বেড়ে উঠা। সুর্মা তার মায়ের মতই কালো, তবে কমনীয় চেহারা আর চকচকে শরীরের অধিকারিনী বলে সবাই তাকে সুন্দরীই বলে। সে ক্লাস ফাইভের পরে আর স্কুলে না গেলেও বয়সন্ধি পর্যন্ত আরবী পড়ার জন্য মসজিদে গেছে। সেখানের মৌলভী প্রায়ই তাকে কাছে ডেকে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতো। একদিন তাকে একলা পেয়ে বেকায়দা আদর সোহাগ করতে চাওয়ায়, সে শিক্ষা গ্রহনে সুর্মার বিপুল অনীহা তৈরি হয়। আরবী পড়তে যেতে সুর্মার অনিচ্ছার কথা  জেনে সালাম মিয়া তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে কারন বিয়ে দিতে বাংলা না জানলেও চলবে কিন্তু আরবী শিক্ষা না হলে তো চলবে না! কয়েকদিন ক্রমাগত মারধোর করেও সুর্মার মন থেকে শয়তানের আছর দূর করতে না পেরে শেষমেশ সালাম মিয়া ক্ষান্ত দেয়। সুর্মা হুজুরের দ্বারা স্লীশতাহানি হবার কথা ভয়ে কাউকেই বলতে পারেনি এমনকি তার মাকেও না। কারন সুর্মা জানে তার কথা কেউ বিশ্বাস করবেনা, উপরন্তু হুজুরের নামে এমন অভিযোগ করার জন্য তাকে লোকজন  বিদ্রুপ করবে, খারাপ বলবে। সেই এগারো/বারো বছর বয়সেই সুর্মা পুরুষ মানুষের আপাতঃ নীরিহ এবং সুন্দর  মুখবয়বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা তমসাচ্ছন্ন আরেক সত্ত্বাকে অনুভব করতে শুরু করে।

 

সংসারের অভাব অনটনে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় সুর্মার মা কাজলী সংসারে  সচ্ছলতা আনার জন্য এলাকার অবস্থাপন্ন বাবসায়ী জামাল খাঁ-র বাড়ীতে ঠিকে কাজ করতে শুরু করে। ফলে রাজুর দেখাশুনার পুরো দায়িত্বই সুর্মার উপরে চলে আসে, এছাড়া তার অন্ধ দাদীকেও ধীরে ধীরে অথর্ব হয়ে পরায় সংসারের কাজে পুরোদমেই তাকে বাস্ত থাকতে হতো। সন্ধ্যা নামলে তার মা জামাল খাঁ-র  বাড়ী থেকে  বেঁচে যাওয়া খাবারদাবার হাতে ঘরে ফিরত, অধীর হয়ে অপেক্ষায় থাকা দুই ভাইবোন সে খাবারের উপর ঝাপিয়ে পরত। তার মা শরীরের ক্লান্তি লুকিয়ে আবার তাদের পরিবারের আর সবার জন্য রান্না করে গভীর রাতে খেতে বসতো। রাতে প্রায়ই সালাম মিয়ার দুই বউয়ের মাঝে ঝগড়া বাধত সালাম মিয়া  কোন ঘরে রাত্রিযাপন করবে সে নিয়ে। সুর্মা তার মায়ের এই টানাপড়েন জীবন দেখে কান্না লুকিয়ে ভাবতো, এমন কষ্টের জীবন যেন তার না হয়। 

 

 

দ্বিতীয় পর্ব

 

বছর তিন পরের কথা, পনেরো বছরের সুর্মা লম্বা চওড়া গড়নের বলে তাকে বয়স অনুপাতে বড় দেখায়। মেয়ের বাড়ন্ত শরীর দেখে তার মা কাজলী তার বাবাকে বলেই যাচ্ছে একটা পাত্র খুঁজতে, মেয়েটার জন্য একটি সুপাত্র তার চাই। সালাম মিয়া কাজলীর উৎকণ্ঠা গায়ে না মাখিয়ে বলে, 

: তুমার কালা মাইয়ারে কে বিয়া করবো?  আমার জমি জিরাত থাকলে তাও এক কথা আছিল, এই  মাইয়ারে বিয়া দিতে যৌতুক লাগবো, হেইডা আমি কই পামু?

কাজলী পরিস্থিতি বুঝেও আশা ছাড়েনা; কেবল দোয়া দরূদ পড়ে যেন একটি ভাল ছেলে সুর্মার জন্য আল্লাহ জুটিয়ে দেন। সুর্মার সৎ ভাই মালেক ঢাকায় গার্মেন্টসের কাজ পেয়ে চলে গেছে, সাথে তার মাকেও নিয়ে গেছে। ফলে সুর্মাদের বাড়ীতে দুই মায়ের নিয়মিত ঝগড়া এখন আর নেই। তার অন্ধ দাদীও গতবছর কয়েকদিনের জ্বরে ভুগে মারা গেছে। শেষ বয়সে পুরোপুরি বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় উনার ইন্তেকালে বরং সালাম মিয়া হাফ ছেড়ে বেচেছে। নানা অনিয়ম আর অভাব অনটনে  সালাম মিয়ারও আগের সে শারিরীক তাকদ নেই, সেও আগের চেয়ে নমনীয়। কাজলী কাজ করে কিছু পয়সা আনে বলে ছেলেমেয়ের মুখে অন্ন যায়, সংসারটা চলছে। সবমিলিয়ে তাদের বাড়ীতে এখন কাজলীরই একছত্র আধিপত্য। সালাম মিয়াকে রাজী করিয়ে রাজুকে কাজলী স্কুলে ভর্তি করেছে। মেয়ের পড়া নিয়ে সালাম মিয়ার আগ্রহ না থাকলেও রাজুকে নিয়ে সালাম মিয়ার অনেক স্বপ্ন। সন্ধায় রাজু যখন পড়তে বসে, তখন পাশে বসে সুর্মা তার বইয়ের ঘ্রান নেয়, হাতে নিয়ে পাতা উলটায়। বইয়ের মাঝের ছবি দেখতে তার খুব ভাল লাগে। মাঝে মাঝে সে পাড়ার মেয়েদের সাথে গঞ্জের সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখতে যায়, শাবনুর আর সালমান শাহের অভিনয় দেখে সে মুগ্ধ হয়। তাদের মত নাচতে চেষ্টা করে, তার অংগভঙ্গি দেখে রাজু হেসে কুটিপাটী হয়।

সুর্মার মা কাজলীর শরীরটা ইদানীং প্রায়ই খারাপ থাকে। চল্লিশেই তাকে মনে হয় বৃদ্ধা নারী।  ঘরে বাইরে শ্রম দিতে গিয়ে তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছে। সুর্মা তার মাকে বলে

:তুমি আর বাইরের কাম কইরো না মা।

শুনে তার মা খেকিয়ে উঠে

:তাইলে খাবি কি? না খাইয়া মরবি? তোর বাপ তো আইলসার আইলসা, হে তো কুন কামই বেশীদিন করবার পারেনা। যে কামেই যায় কয়দিন পরে হের আর ভালা লাগেনা। রাজু বড় না হওয়া পর্যন্ত আর তোর বিয়া না হওয়া পর্যন্ত আমার তো কাম করাই লাগবো। মাসে মাসে বাধা এই এক হাজার টাকা ছাড়া সংসার চলবো ক্যামনে?  

সুর্মা তার মায়ের অসহায়ত্ব টের পেয়ে নিশ্চুপ থাকে। তার বাবার আসলেই কাজে কোন মন নেই। আগে সৎ ভাই মালেক অনেক সময় বাড়ীতে বাজার খরচে সাহায্য করত, এখন সে তার মাকে নিয়ে চলে যাবার পরে আর বাড়ীতেই পা দেয়না। সালাম মিয়ার এ নিয়ে গভীর দুঃখ। মানুষজনকে ডেকে ডেকে মালেকের সমালোচনা করে। বাবাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেনা বলে তার এন্তার অভিযোগ  কিন্তু সালাম মিয়া বুঝতে পারেনা যে সম্মান ভালবাসা পাবার আগে তা দিতে হয়। যে ছেলের সাথে কখনো সে ভাল হয়ে কথাও বলেনি, তার প্রতি দায়িত্ব পালন করেনি,  এখন আশা করার সময় পিতৃত্বের ষোলআনা দাবী তার চাই।

বর্ষা কাল, ঝরছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। এমনিতেই শরীর দুর্বল তার উপর কয়েকদিন বৃষ্টিতে ভিজে কাজে যাওয়া আসা করায় কাজলীর কাপন দিয়ে জ্বর চলে এলো। সে সুর্মাকে ডেকে বলল

: মা তুই যা তোর চাচার জন্য রান্নাটা কইরা দিয়া আয়। ভাবী আমার উপর ভরসা কইরা কয়দিনের  জন্য পুলামাইয়া লইয়া বাপের বাড়ী গেছে। জামাল ভাই আবার সবার রান্না খাইতে পারে না। তুই গিয়া আবুলের মায়েরে কইলেই ও তোরে সব আগায়া দিবো, তুই রান্নাটা কইরা দিয়াই চইলা আসবি। 

সুর্মা জামাল খাঁ-র বাড়ীতে আগেও গেছে  কিন্তু এবারে যাচ্ছে সে বাড়ীর কাজ করতে। কুণ্ঠিত পায়ে সুর্মা সেই বাড়ীতে পা দিল।  বাড়ীর বাধা কাজের জন্য রাখা ষাটোর্ধ আবুলের মাকে বলল,  

:আমারে মা রান্না করতে পাঠাইছে।

আবুলের মা তাকে সব বুঝিয়ে দিলো। সে তাড়াতাড়ি সব্জী আর মাছ কাটাবাছা করে রান্না করলো।

বাড়ী থেকে বের হবার সময় জামাল খাঁর সাথে দেখা। জামাল খাঁর আড়তদারীর ব্যাবসা। প্রচুর টাকা পয়সা, এখন আবার রাজনীতির সাথেও যুক্ত হয়েছে। কাজ থেকে দুপুরে ঘরে এসেছে খেয়ে দিবানিদ্রা দিতে। সুর্মাকে দেখে বলল

:আরে তুই কাজলীর মেয়ে না? কত বড় হইয়া গেছস!  

বলে কাছাকাছি এসে লোভাতুর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। পুরুষ মানুষের চোখের কুদৃষ্টি এবং সুদৃষ্টি, সব মেয়েরাই পড়তে পারে। তাড়াহুড়ো করে রেশমী বিদায় নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। বাড়ীতে আসা মাত্র তার মায়ের উৎকণ্ঠিত প্রশ্ন

:ঠিকমতো রান্না করছিলি? তোর চাচার সাথে দেখা হইলো? আমার কথা কিছু জিগাইলো?  

সে শুনেও  কিছু উত্তর না দিয়ে পুকুরে চলে যায় গোসল সারতে, সারাদিনে এ সময়টাই তার কেবল একান্ত নিজস্ব। পুকুরের শান্ত জলে নিজেকে সে আকাশের নীল পটভূমিতে দেখে মুগ্ধ হয়। তার মনের মাঝে সালমান শাহ-র মত একটি মুখ হাতছানি দিয়ে যায়। সবটাই স্বপ্ন তবু এই অলীক ভাবনাই তার জীবনের শান্তিময় আশ্রয়। 

পরের কয়েকদিনেও তার মায়ের শারিরীক অবস্থার উন্নতি হলোনা। তাই সুর্মা কাজলীকে বিশ্রামে রাখার জন্য তার মায়ের বদলে জামাল খাঁ-র বাড়ীতে নিয়মিত কাজে যেতে লাগলো। আজকেও আবুলের মা তাকে সব জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়ে বাড়ীর অন্য কাজ সারতে চলে গেল। রান্না শেষ না হতেই জামাল খাঁ ঘরে ফিরে হাক দিলো,    

:সুর্মা, আমারে খাবারটা গুছায়ে দে রে মনি। খুব খিদা পাইছে।