গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

কুমকুম বৈদ্য

কনে দেখা


মেয়ে ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে. প্রথম অনসাইট ও হয়ে গেছে .সুতরাং এবার মেয়ে পাত্রস্থ করার সুবর্ণ সময়. বাবা উকিলr, মা রিটায়ার্ড প্রধান শিক্ষিকা.মেয়ের প্রেম বছর খানেক হল কেটে গেছে, সুতরাং আনন্দবাজার  এর পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন ভরসা. মেয়ের ঘোরতর আপত্তি অগ্রাহ্য় করে বেশ ঘটা করে বেরলো বিজ্ঞাপন. ব্য়াস তারপর থেকে শুরু হল ফোনের পর ফোন. সে নানা ধরনের মানুষের নানা প্রশ্ন. রেলের হকার থেকে শুরু করে ৪০ বছর বয়সি সংস্কৃতর অধ্য়াপক লম্বা লিস্ট. গুটি কত ভদ্র সন্তান বাবার কাছে ইন্ট‍ারভিউ দিয়ে বিদায় হলেন. গুটি কয়েককে মেয়ে দেখানো হল. কিন্তু ব্য়পারটা তেমন জমল না. উৎসাহের ঢেউ যখন একটু থিতু হয়েছে, হঠাৎ একটা ফোন এল.

ভদ্রলোকের ছেলে কোল ইন্ডিয়াতে চাকরি করেন, উনি নিজে ওএনজিসি তে চাকরে করতেন রিটায়ার্ড . আসতে চান মেয়ে দেখতে. কিন্তু উনি মুর্শিদাবাদ থেকে আসবেন তাই একরাত থাকবেন. বাড়িতে তো জোর প্রস্তুতি. যদি ও মেয়েটি  প্রচন্ড আপত্তি করছিল, অচেনা  মানুষকে রাতে আশ্রয় দেওয়া বেশ বিপজ্জনক হতে পারে. কিন্তু আপত্তি কেউ কানে তুলল না.

 

কথামতো রবিবার দিন দুপুর বেলা সেই মহাশয় হাজির হলেন,. পরনে প্রায় পরিস্কার পাজামা পাঞ্জাবী. পাত্রীর ডাক পড়ল, মেয়টির মনে হল ভদ্রলোকের মনটা যেন একটু অস্থির. যাই হোক আলাপ পরিচয় সেরে তিনি জানালেন পাত্রী তাঁর খুব ই পছন্দ হয়েছে. দুপুর বেলার উত্তম মধ্য়ম আহারটি সেরে বালিশে গা এলিয়ে তিনি মেয়র বাবাকে জানালেন ছেলে তো জামসেদপুরে থাকে, তিনি এখান থেকে ওখানেই যাবেন ডাইরেক্ট. ওনার স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে দু বছর হলো. উনি রিটায়ার করেছেন. নরেন্দ্রপুরের কাছে ওনার বাড়ি ভেঙ্গে ফ্ল্য়াট হচ্ছে, ছেলের বিয়ে দিয়ে ওখানেই থিতু হবেন. বিকালে জলখাবার পর্বটি ভালোই হলো, মেয়ের গান শোনা হল.

রাতে উনি  মাটন খাবেন না চিকেন খাবেন বলে জনালেন. ছেলের ছবি দেখালেন. আর মেয়ের একখানা ছবি চাইলেন.

মেয়ের তো হাড়পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে রকম সকম দেখে. মেয়ে  মা কে বলে দিল দখো মা আমার কিন্তু গরবড় কেস লাগছে, কোনো ফটো টটো দেবে না ব্য়াস.

 

রাতে গুরু ভোজ সেরে তিনি জানালেন রাতের ওষুধ আনতে ভুলে গেছেন, যদি দয়া করে আনিয়ে দেওয়া যায়. আর ওষুধ যেন full strip নওয়া হয়. কাটা ওষুধ উনি কেনেন না. ওষুধ এনে দেওয়া হল. উনি খুশি মনে তা ব্য়গস্থ করলেন.

সকালে উঠে উনি জানালেন এখন তো ছেলের কাছে যাবো, হুট বলতে বেরিয়ে এসেছি, টিকিটের দামে ১০০০ টাকা মত কম পড়ছে.

মেয়ের বাবা অনেক ভাবে চিন্তে ৫০০ টাকা দিয়ে বললেন দাদা এবার টা কষ্টশিষ্ট করে এই দেয়ে ম্য়ানেজ করুন. সেই ৫০০ নিয়ে  উনি বিদায় হলেন.

 

মেয়েটি অফিস বেরলো, বাবা কোর্টে বেরোলেন. মা বাড়িতে. বিকেল বেলা মার ফোন, জানিস সোদপুর থানা থেকে ফোন করেছিল.

যে লোকটা এসেছিল সে নাকি ভুয়ো, সোদপুর, আগরপাড়া র দিকে বেশ কয়েকটা বাড়িতে পাত্রী দেখার নাম করে এরকম  টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন. আজ ট্রেনে করে ফেরার সময় ওনাকে দেখে তারা সোদপুরে নামিয়ে মারধোর করে থানায় দিয়েছেন. ওনাকে জেরা করায় উনি বাবার নাম করেছেন, তাই থানা থেকে ফোন করেছিল আমাদের কত কি খোয়া গেছে জানতে. ভদ্রলোক চালচুলোহীন, শিয়ালদার কাছে এক মেসে থাকেন আর এই রকম ফন্দিফিকির করে ক্ষুন্নিবৃত্তি করেন. ফোনে উনি কেঁদে কেঁদে বলেছেল আপনারা পূনাত্মা মানুষ, ক্ষমা করে দেবেন.আগে তো কত জায়গা গেছি ধরা পড়িনি, আপনাদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে ধরা পড়লাম. খুব মেরেছে, বড্ড লেগেছে.