গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

তন্ময় বসু

 

বসন্ত

বাড়ির পাশে গাছগুলোতে পাখিদের আড্ডাখানা হয়েছে। কমবে কি, দিন দিন আনাগোনা বেড়েই চলেছে। এমনিতে ল্যাংড়াশিবে এখন প্রায় হাফ বৈরাগী, তাতে আবার এই গাদা গুচ্ছের পাখির ভীড়। ধারে পাশে বেশ কয়েকটা পেল্লায় বড়মাপের প্রাচীন গাছ, বসতি থেকে নিরিবিলিতে ল্যাংড়াশিবের বাড়ি। এদিকটা আজকাল কেউ বড় একটা আসে না। হলে কি হবে, নতুন এক আপদ এসে হাজির। ইয়ে, রোজ উটকো কিছু পাখির ডালে বসে আলোচনা! কি? না -- 'বসন্ত আসছে' এক কথা শুনে শুনে কান ঝালাপালা। শেষে থাকতে না পেরে ল্যাংড়াশিবের চিৎকার প্রশ্নকে পাকিয়ে আকাশে ধাক্কা খেয়ে গাছের ডালে ডালে ঝুলতে লাগল। তাতে অন্য ফের! পরদিন থেকে ল্যাংড়াশিবের কানে যখনই এল 'বসন্ত আসছে' পরক্ষণেই কোথাও বেজে উঠছে -- 'এই শীত গেলে সামনের শীত' তারপরেই নাকি বসন্ত! মহাজ্বালা! 

জগাই ঘোষের সেজছেলেটা কবছর হল, এলাকার মাতব্বরদের মাথায় বসেছে। বাড়ি-গাড়ি করে রমরম চালাচ্ছে মাতব্বরি। লোকালয় এড়িয়ে থেকেও ল্যাংড়াশিবে ভাবল - একটিবার জগাই ঘোষের বাড়ির পাশ দিয়ে চক্কর মেরে আসে, বসন্ত ব্যাপারটা কি, যদি বোঝা যায়। যেমন ভাবা, হজির হল জগাই ঘোষের বাড়ির পাশে, আরিব্বাস! হেব্বি বাড়ি বানিয়েছে ঘোষের ব্যাটাটা। শৌখিন খাঁচায় কয়েকটা পোষা পাখি ঝুলছে বারান্দায়। 'দিন ফুরালো হরি বল দোকান এবার গুটিয়ে ফেল' চমকে এদিক ওদিক ল্যাংড়াশিবে বুঝল পোষা পখির বুলি। তা ভাল, ঘোষর ব্যাটার দেবদ্বিজে ভক্তি আছে! 'যাবে কি যাবে না অত কেউ ভাবে না' পাশের খাঁচা থেকে আওযাজ এল। সাবাশ, ল্যাংড়াশিবের মনে এল, নাট্যশালা নাকি! তারপরেই কানে বাজল 'বসন্ত আসছে" প্রায় ভিরমি খেতে খেতে সামলে নিতেই - 'এই শীতের পরের শীত তারপরেই বসন্ত'। পোষাপাখি-বুলি শুনে ল্যাংড়াশিবের বাদবাকি পৃথিবীটুকু চক্কর দিতে লাগলো। গোঁ-গোঁ শব্দ করে, একমুখ গ্যাঁজলা তুলে মাটিতে পড়ে রইল।