স্কুল গেটের দু'ধারে স্কুলের বাগান। পাঁচিলে দু'হাত ঠেকিয়ে থুতনিতে ভর দিয়ে আনমনা অরি। অরি মানে অরিত্র। ম্যাগি করে দেয় নি মা, মোটা হয়ে যাচ্ছে বলে। বাগানে নতুন হরেকরকম গাঁদা, ক্যালেন্ডুলা, একমনে নিরীক্ষণ করছে ভগ্ন হৃদয় অরি। হঠাৎ কাঁধে একটা হাত। অস্ফুটে অরির মুখে বের হয় "পাপা!"
-নতুন বছরে তো বড় স্কুলে
আসবি। চল্ আমাদের স্কুলটা তোকে ঘুরে দেখাই।
একটা গেট, দু'টো গেট তারপর দু'পাশে সারি সারি ঘর। বাবা ঘুরে ঘুরে দেখান কোন ঘরে তাঁরা কোন ক্লাসে পড়তেন। কোন ক্লাসে অনিলবাবু বেধড়ক মেরেছিলেন ক্লাসে দুষ্টুমির জন্য, কোন ম্যামের ক্লাসে বাইরে কান ধরে দাঁড়িয়েছিলেন, পড়া না পারার জন্য।
ঘুরতে ঘুরতে স্কুলের
ভিতর এক বাঁধানো গাছতলায় বসে পড়ে বাপ-ছেলে।
-জানিস বাবু, এখানে বসে
আমরা টিফিন খেতাম। কৌটোভরা মুড়ি আর মায়ের হাতের কুমড়ো ছক্কা। তেল, হলুদ আর পাঁচফোড়ন
দিয়ে ভাজা ভাজা কুমড়ো ছক্কা। খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরও হাতে লেগে থাকত তেল আর হলুদ। আমি
আঙুল মুখে ভরে চেটে চেটে খেতাম। সে যে কি অমৃত-স্বাদ, তোকে বলে বোঝাতে পারব না।
-তবে জানিস কি বাবু,
খিদেই হল আসল তরকারি। তখন তো স্কুলে এসে খুব ছোটাছুটি করতাম। খিদে পেত খুব। চল বাবু,
মাঠে দু'পাক ছুটে নিই।
অভিমানী ছেলেকে খুঁজতে
এসে সুমিতা দেখে, সবুজ ঘাসের বুক চিরে অরি ছুটছে।
বাড়ি এসে জিজ্ঞাসা করেন
"আজ হঠাৎ ছোটাছুটি?"
অরি বলে "মা, আমাকে
কুমড়ো_ছক্কা করে দেবে?"
সুমিতা দেওয়ালে সমীরণের
ছবির দিকে তাকায়। সমীরণ মিটিমিটি হাসছে।