গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

নীহার চক্রবর্তী

 


যুগান্তর


সেদিন বিকালের দিকে পাশের বাড়ির দিদি সহেলির মার সামনেই ঋজু দুষ্টু-দুষ্টু হেসে বলে বসলো ওর বৌ শিপ্রাকে,'তোমার ব্রা আনতে বলেছিলে না ? কত সাইজ যেন ?'

শুনে শিপ্রা হাঁ । সহেলির মা খুব লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকাল ।

খুব বিরক্ত হয়ে শিপ্রা বলে উঠলো ঋজুকে,'তোমার লজ্জা বলে কিছু নেই ? ওনার সামনে বল কীভাবে ?'

সেই দুষ্টু-হাসি মুখে ঋজু উত্তর দিলো,'যা বাব্বা ! আমি তো পোশাক ভেবেছি । এতে আবার লজ্জা কী ? আমি তো ওপর থেকেই ছেড়ে দিয়েছি । তার কিছু বেশি কি ?’

 

সহেলির মা তখন লজ্জায় জড়সড় একেবারে । খুব গোপনে ইশারা করে চুপ থাকতে বলল শিপ্রাকে ।

কিন্তু শিপ্রা রাগে গজগজ করতে-করতে বলল ঋজুকে,'এ আবার কেমন কথা ? ওপর থেকে মানে ? সে আবার কী কথা ?’

ঋজু ফিক করে হেসে বলল,'সে কে না জানে । পোশাক কি শুধু ওপরের হয় ? ধুর,যুগের সঙ্গে চলতে শিখলে না দেখছি । তা আনবো কি ?'

শিপ্রা বসেছিল সহেলির মার পাশে ।

উঠে মাজায় হাত দিয়ে বলল সরোষে,'তোমার কিছুই আনতে হবে না । সে আমিই পারি । দিদির সঙ্গে সঙ্গে যাবো । তুমি নিজের কাজে যাও দেখি ।'

‘কিন্তু তোমরা দুজনে কেমন করে বলবে পুরুষ দোকানদারের কাছে সাইজের কথা ? আমি বললে বেশ হয় না ?’

 

মজার সুরে ঋজু একথা বললে সহেলির মা এবার বলল শিপ্রাকে,'থামো তো এবার । কোথাকার জল কোথায় গড়াবে তুমি জানো ? বরকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে সাইজের কথা বল । এনে দেবে ।'

সাথে-সাথে ঋজু মুখে চাপা-হাসি নিয়ে বলে বসলো,'সে সাইজ দেখেই বুঝতে হবে ।'

'আরে,এসব কী বলছ তুমি ? পাগল হলে নাকি তুমি ?'

ঝাঁঝালো সুরে শিপ্রা বলে বসলো ঋজুকে ।

 

কিন্তু ততোক্ষণে ঋজু এলোমেলো হাসতে- হাসতে ঘর ছেড়ে বারান্দা,বারান্দা থেকে একেবারে বাড়ির বাইরে চলে গেছে ।

এরপর সহেলির মা একগাল হেসে বলল শিপ্রাকে,'আসলে আমি আছি বলেই তোমার বর অমন কথা বলল । আসলে ওর দোষ না । এখনকার বররা খুব ক্লান্ত এক বৌতে । কিন্তু কিছুই করার নেই । এক সুতোয় বাঁধা পড়ে গেছে । ছিঁড়তে চাইলে আইন আছে না ? বলে মজা আর কি । বলুক । এবার থেকে আমিও উত্তর দেবো খন । কি আর হবে তাতে ।'

 

শিপ্রা তার কথা শুনে রাগের মধ্যেও এক চিলতে হেসে ফেলে বলল,'বলে কিনা ওপর থেকে ছেড়ে দিলাম ।'

সাথে-সাথে সহেলির মা টোল-পড়া-গালে হেসে উত্তর দিলো,'ওখানেই তো যত মজা । আমাদের মজা হয় না বুঝি ? আসলে লজ্জায় বলতে পারি না আমরা । তাই না ?’

'তুমি এবার থামো,দিদি । কোথা থেকে আবার চলে আসবে ।'

শিপ্রা একথা বলার পরেই দেখা গেলো ঋজু কানে ফোন দিয়ে বেশ গম্ভীর মুখে ফিরে এলো ।

 

দুজন বেশ অবাক দেখে ।

সহেলির মা জিজ্ঞেস করলো ঋজুকে,'কী হল,ঠাকুরপো ?'

'নাহ । তেমন কিছু না । এক বন্ধুর ফোন । কি একটা সমস্যা বুঝি । খুলে কিছু বলল না । আমাকে একটু বেরোতে হবে এখন । তবে আমি ভুলছি না । আর একদিন কথা হবে ।'