গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০

প্রদীপ ঘটক


 জীবনতৃষা


    রমেশের জ্বরটা কি কমেছে না আকাশে মেঘ? গত কয়েকদিন শরীরে প্রবল উত্তাপ। রমেশ চেয়েছিল আরো বাড়ুক। বিলীন হোক পঞ্চভূতে এ দেহভার। আর যে বয় না জীবন।

     জীবনে অনেক ছ্যাঁদা রমেশের। কোনটাই মেরামত করতে পারেনি। কিছু জায়গা পচে ক্ষয়প্রাপ্ত। অভাব যেন ক্রনিক ব্যাধি। সুদিনের আশায় পেরোল  চল্লিশ বছর। বিধাতা শেষ বন্ধন ছিন্ন করেছে তার সাথে।

     আজ সকাল থেকেই রোদ বেশ কয়েকদিন পর। রমেশের মন কুয়াশাচ্ছন্ন। বাল্যজীবনের কথা মনে আসে। অভাবী বাবা শরৎ উপন্যাস ধার করে নাম রাখেন রমেশ। কিন্তু জীবনটা তাকে বিদ্রুপ করেছে চিরদিন।

     অভাবে সপ্তম শ্রেণিতেই ইতি। প্রথমে চায়ের দোকান, তারপর নানা দোকান ঘুরে আজ রিক্ত। শহরে মালিকের মাল আনতে গিয়ে দুর্ঘটনায়  পা হারায়। মুহুর্তে অযোগ্য হয়ে ওঠে।

     মা অভাবের শিকার, বাবা ক্যান্সারের। নিজে পা-হারা। নিজেরই খাবার নেই, অন্যকে আর জড়ানোর সাহস হয়নি জীবনে। অপুষ্টিতে আজ সে চল্লিশেই ষাট। একমাথা কাঁচাপাকা চুল, মুখে কয়েক সপ্তাহের না কাটা দাড়ি।

     উমার কথা মনে আসে। সে এখন ঘোর সংসারী। একদিন ভাবনায় ছিল তার সাথে জীবন জোরার। সম্পর্ক হারিয়েছে জীবন পথের বাঁকেই।

     রোদে এসে বসে রমেশ। সূর্যদেব  কি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে? এমন জীবন রাখার মানে হয়?

     অতএব রমেশ চলল স্টেশন ছাড়ানো মেঠো রেললাইনের দিকে। রেললাইন পার্শ্বস্থ জি টি রোড বড় ব্যস্ত। একের পর এক গাড়ি। চঞ্চলতা বাড়ে রমেশের। ট্রেনের সময় এগিয়ে আসছে।

     হঠাৎ একটা কালো অ্যাম্বাসাডর থেকে উড়ে এল একটা কথা "বাঁচাও।" স্পষ্ট নম্বর দেখল রমেশ WB 2041

 বিধাতাকে বিদ্রুপ করে রমেশ  হেসে ওঠে।