গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০

ফারা দিবা


তপু


“ওই যে যায় হেলিকপ্টার, খাও বাবু। হা করো হা”এরকম শব্দে তপুর ঘুম ভাঙে রোজ । না এভাবে চলে না। পাশের বাসার আন্টিটা প্রতিদিন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তার বাচ্চাটাকে খাওয়ায়। বাচ্চাটাও নাছোড়বান্দা কিছুতেই খাবে না। আর তার মায়ের সপ্তসুর বাড়তেই থাকবে। এভাবে চললে ঘুমানোই দায়। আচ্ছা পুলিশে খবর দিয়ে মহিলাকে ধরায় দেওয়া যায় না? যাবে তবে কি বললে কাজ হবে? শব্দদূষণকারী? নাকি জঙ্গি? আচ্ছা শিশু নির্যাতন বললে কেমন হয়? ছোট শিশুটিকে জোরপূর্বক আন্ডেপিন্ডে গেলানোর অপচেষ্টা । হ্যাঁ । এইটা ঠিক আছে।
এরকম সমাজসেবামূলক ভাবনা নিয়ে বিছানা থেকে নামলো তপু। মফস্বল এর ভেতরে এক তিনতলা বাড়ির উপরতলায় আনিসুর সাহেব স্বপরিবার ভাড়ায় থাকেন। সেই পরিবারের কুলপ্রদীপ প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে দশটা নাগাদ। দশটা অচিরেই বারোটাই রুপ নিতে পারতো যদি পাশের বাড়ির শিশু নির্যাতনকারী অতটা সক্রিয় না থাকতো।

তপুর বয়স সতেরো। ঢাকার নামকরা একটা স্কুল থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিলো। তবে দেশে মহামারী লেগে যাওয়ায় এখন সে পরিচয়হীন ছাত্রে  রূপান্তরিত হয়েছে। তাতে তার অবশ্য কোনো মাথাব্যথা নাই। পরীক্ষা হলেই কি বা না হলেই কি? পড়াশোনা তার ভালো লাগে না ।

ঘুম থেকে উঠে তপু সোজা চলে গেলো ছাদে। বাসায় থাকলে মায়ের কথা শোনা লাগবে " উঠেছিস বাবু? নবাব আমার,  কত ভাগ্য করে মহারাজ জন্ম দিয়েছি।"
আচ্ছা আম্মুকে বাবা বিয়েটা কেন করেছিলো? না করলে আমিও হতাম না আর পরীক্ষাটাও দেওয়া লাগতো না। দেখি আজ দাদু কে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে। কেন এই বকবকানির সাথে তার একমাত্র ছেলের গাটছড়া  বেধেছিলো?

ছাদে গিয়ে দেখে দোতলার মালিহা আপু ফটোসেশনে ব্যাস্ত। লোকাল ফটোগ্রাফার ( তার ছোট ভাই রিশান) ঠিক পজিশন এ ফটো তুলতে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।
একবার বসে, ডানে বামে শুয়ে, একবার চিৎ হয়ে। তবুও মালিহাপুর একটা ছবিও পছন্দ হচ্ছে না। বার বার বলছে "এই ভালো করে তোল, গাধা নাকি।" আচ্ছা ছবি তুলতে না পারলে গাধা আর পারলে কি তাকে ঘোড়া  বলে? কে জানে?তপুকে দেখে মালিহাপু একগাল হেসে দিয়ে আবার বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দাঁড়াতে লাগলো।
কোয়ারেন্টাইন এ থাকতে থাকতে মানুষের কয়েকটি রোগে পেয়েছে। ছাদে উঠে ছবি তোলা সেটার ই অংশমাত্র । এটা অবশ্য খারাপ কিছু না। দূষণমুক্ত ফকফকা আকাশ । তবে তপুর মতে কোনো ক্যামেরার ক্ষমতা নাই কোন সৌন্দর্যকে আটকায় । তার তো মোবাইল ই বেশিক্ষণ হাতে রাখতে ইচ্ছে করে না। কারন একটাই সবসময় টুং টুং বাজতেই থাকে। অযথা আওয়াজ এর ঘোর বিরোধী সে। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রিশান ডাক দিলো “এই তপু এদিকে আয় তো।” অনিচ্ছাসেত্ত্বও গেল সে তার দ্বায়িত্ব পড়লো ছাতাটা মালিহাপুর মাথায় এমনভাবে ধরতে হবে যেন রোদ কেবল তার গালে পড়বে। আর কোথাও না। কারন তার একটা sunkissed ছবি দরকার । আচ্ছা sunslapped , sunhitted, sunpunched হয় না? ভাবতে হবে। এই কঠোর দ্বায়িত্ব পালন শেষে তপু নিচে নেমে আসে। sunkissed ছবি তুলতে গিয়ে রীতিমতো sunburn হয়েছে সে।

ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় । ঘরে ঢোকার সময় খেয়াল করেছে তার মা চেচাচ্ছে “ নবাব আমার না খেয়ে রোদ তাপাতে গিয়েছেন, জন্ম দেওয়াই সার্থক আমার ।” তপু রীতিমতো পাত্তা না দিয়ে সোজা রুমে ঢুকে যায় । আর মনে মনে বলে শহরের ব্যস্ততা আর জ্যাম সেরা ছিলো। চোখ বন্ধ করে শুনতে পায় “এই মামা গুলিস্থান যাবে?” কিন্তু পেছন থেকে কেউ একটা বলে ওঠে,"এইতো শেষ,  আরেকটু হা করো বাবু।”