সেদিন দিল্লি থেকে রাত ০২.১০ এর ফ্লাইট ধরে কলকাতা ফিরছি ইন্ডিগো বিমানে সঙ্গে আমার সহধর্মীনি l রাতে
ফিরছি কারণ আর কোন টিকিট পাইনি l রাত
বারোটায় দিল্লীর ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দরে এতো ভিড় দেখে আশ্চর্য হই l মনে হচ্ছিলো যেন হাওড়া স্টেশনে ভুলে এসেছি l দেখে খুশি লাগছে এখন বিমান পরিষেবা সাধারণ মানুষের
আওতায় এসে গেছে l কিওস্ক এ গিয়ে আমাদের দুজনের পি. এন. আর. নাম্বার দিয়ে বোর্ডিং পাস বারকরে ইন্ডিগো কাউন্টারে
যাই l বিমানের টিকিট এবং গেট নাম্বার
নি আধার কার্ড দেখিয়ে সিকিউরিটি চেক এর জন্য এগোই l সব জায়গাতেই লম্বা কিউ l সঙ্গে লাগেজ বলতে আমার একটা ভি. আই. পি. ব্রিফ কেস আর ওনার একটা লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ l কেবিনেই নেওয়া যাবে কারণ ছয় কিলো লাগেজ নিতে পারবেন l আমাদের সঙ্গে সঙ্গে একজন বোরখা পরা ভদ্র মহিলা
হাঁটছিলেন l বোধ হয় একা l কিন্তু মুসলিম মহিলারা প্রায় একা কখনো বাইরে বেরন না l উনি একা দেখে মনেহলো কি জানি হয়তো সঙ্গে কেউ আছেন আমরা
জানিনা l জানার কথাও নয় l
এইসময়
মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কি কলকাতা যাবেন?
আমার
স্ত্রী বললেন হ্যাঁ l
উনি বললেন আমি এয়ার পোর্ট থেকে আপনাদের সঙ্গে এক
ট্যাক্সিতে যেতে পারিকি? আমি
একলা স্ত্রী লোক l ফ্লাইট ভোর ০৪.১০ এ ল্যান্ড করবে নেতাজী ইন্টার ন্যাশনাল এয়ার পোর্টে
l অতো ভোরে একলা যাওয়া রিস্কি.....
দেখুন আমার ছেলে আসবে ওর গাড়ি নিয়ে আমাদের নিতে l আপনি এয়ারপোর্টে একটু ওয়েট করবেন সকাল হওয়া অবধি l তারপর সকাল হলে চলে যাবেন আপনার বাড়ি l মহিলা একটু বিরক্ত হলেন আমার কথায় l
রাত দুপুরে ইন্ডিগোর বিমান সেবিকারা সুপ্রভাত জানান l হ্যাঁ প্রভাত তো বটেই কারণ রাত বারোটার পর এ. এম., তাই
সুপ্রভাত বলে টিকিট দেখিয়ে নিজের সিটের দিকে এগোই সিট নাম্বার 6A 6B.
নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমানে যে যার নিজের সিটে বসে
পড়ি l সিট্ বেল্ট পরে একটা ইন্ডিগোর
ম্যাগাজিন ওলটাতে লাগি l
কিছু বাঁধি গত আছে যা বিমান সেবিকারা বলে থাকেন l সিট বেল্ট কেমন করে বাঁধবেন, অক্সিজেন মাস্ক, লাইফ
জ্যাকেট আপাত কালীন বিপত্তিতে জরুরী বহির্গমন ইত্যাদি l নির্ধারিত সময়ে বিমান টেক আপ করলো l
নির্ধারিত সময়ে বিমান অবতরণ করলো l তখন ও অন্ধকার আছে কারণ শীতের দিন l এমনিতেই কলকাতায় পলিউশন l তাই একটা ধোঁয়াটে ভাব ছিল l আমাদের লাগেজ নেই তাই কনভেয়র বেল্টে যাওয়ার নেই l সোজা হাঁটা দিলাম বহির্গমনের দরজার দিকে l সেন্সর লাগানো দরজা তাই আপনা হতে খুলে যায় l গেট নাম্বার 2 টে অপেক্ষা করছি পেছন থেকে ঐ বোরখা পরা মহিলা.... একটু আঁতকে উঠলাম l তারপর সামলে নিয়ে ছেলে কে ফোন করি l বেচারা রাতে কাজ সেরে হয়তো ঘুমোচ্ছে তাই আর ফোন না করে একটা ওলা
ট্যাক্সির জন্য এপ এ গিয়ে বুক করছি ঠিক ঐ সময় ছেলের কার এসে গেলো l আর বুক না করে এগুচ্ছি ঐ সময় মহিলা এসে বলেন আপনারা
কোন দিকে যাবেন?
কেন
বলুনত? আমার স্ত্রী বলেন l
- না আমি একলা মহিলা বুঝতেই পারছেন......
-কি আশ্চৰ্য ওরকম কতো মহিলা একা যাতায়াত করেন l আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন? আমাদের তাড়া আছে আসি বলে কারে উঠে পড়ে আমরা দুজনে l
রাস্তায় সিগনালে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কার.... ঐ মহিলাকে আবার দেখি জেবরা ক্রস পার হতে l কি
হোল ! চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি হ্যাঁ
উনি তো l এই এয়ারপোর্ট থেকে এতো তাড়া তাড়ি
এখানে কি করে এলেন l আশ্চর্য ম্যাজিক নাকি?
আমরা দুজনে একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম l ছেলে বলে কি হোল তোমরা চুপ চাপ কেন?
কিছু না l বলি
তুই গাড়ি চালা l গাড়ি চালানোর সময় অন্যমনস্ক হতে
নেই l
এবার
আমাদের জানলার কাঁচের সামনে ঐ মহিলা !
আমি চোখ বুজে বলি অশরীরী আত্মা... ওদিকে তাকিওনা l গাড়ি স্পিডে বেরিয়ে গেলো মহিলা আমার কাঁচের পাশেই বোরখা খুলে
দেখালেন তাঁর একপাশ পোড়া মুখ l সেদিকে
চোখ, কান চুল কিছুই নেই সব জ্বলে
গিয়েছে l আমি চোখ বুজে রাম রাম জপ করতে
থাকি l এই সাত সকালে কোথা থেকে ভূত এলো?
ঘুমটা
ভেঙে গেলো গিন্নির চায়ের কাপ এর সুন্দর দার্জিলিং টি র সুগন্ধে !!
- কি বিড় বিড় করছিলে শুনি?
গিন্নির
মুখের দিকে তাকিয়ে বলি আমি ! আমি
কি ঘুমচ্ছিলাম?
- হ্যাঁ লক ডাউনে ১৪ ঘণ্টা ঘুমচ্ছ
আর রাতে কম্পিউটার এ কি বোর্ডে খট খট করে কি সব লিখছ ! জানিনা
বাপু.......
!!