ধারাবাহিক রহস্য কাহিনী--৪০
সুন্দরবনের রহস্যময় আলেয়া
লৌকিকতার বাইরে যে অলৌকিক এক জগত আছে এটাকে আমরা একেবারে অবিশ্বাস্য ভাবে উড়িয়ে দিতে পারি না। কার্যকারণ সম্পর্ক জুড়ে দিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক অলৌকিক ব্যাপারকে প্রমাণ দ্বারা লৌকিক ঘটনায় পরিণত করেছেন। তবু বলব এমন অনেক জাগা আছে যেখানে বিজ্ঞান প্রবেশ করতে পারেনি। সে সব অপ্রবেশ্য স্থানগুলি তাই আজও অলৌকিক হয়েই রয়ে গেছে। সর্বোপরি বলব বিশ্বাস অবিশ্বাস হল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আজকের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনকে ঘিরে। এই সুন্দরবনের কোন কোন জায়গায় নাকি গভীর রাতে এক অলৌকিক আলেয়ার দেখা পাওয়া যায়। কখনও স্থানীয় জেলেরা এই আলোকে অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। তারা এক সময় চলতে চলতে ঘন জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলে। আর এ ভাবেই নাকি তারা হারিয়ে যায়, আর জীবিত ফিরে আসতে পারে না।
রাতে সুন্দরবনের কোন কোন জাগা নাকি সত্যি বড় রহস্যময় হয়ে ওঠে। পর্যটকদের আসলে সুন্দরবনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয় না। নির্দিষ্ট কিছু জানা চেনা গ্রাম ও জনবসতি তাদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ ছাড়া কিছু খাড়ি, নদী পথ, সুগম জঙ্গল এলাকাই তাদের দেখানো হয়। সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এলাকা। এখানে ভারতের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের বাস--এমনি একটা চিত্র এখানে আসা পর্যটকরা নিজেদের মনের কল্পনায় সাজিয়ে নিয়ে সেটুকুতেই তৃপ্ত হয়ে ঘরে ফিরে যান।
এই সুন্দরবনের গভীরে শুধু যে বাঘের ভয় তা কিন্তু নয়, রাতের আঁধারে সেখানে ভূতের ভয়ও যে কম নয় ! শোনা যায়, সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল, জলাশয়, খাড়িতে এক ধরণের রহস্যময় আলো দেখতে পাওয়া যায়, স্থানীয়রা তাকে আলেয়া বলে। এই আলেয়াকে যারাই অনুসরণ করতে যায় তারাই হারিয়ে যায়। তারপর কোন জলা জায়গায়, জঙ্গলে বা নদীর পারে তাদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এমনি অনেক জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। আবার এমন কথাও শোনা যায় যে সেই আলেয়া কখনও নাকি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারও করেছে।
গভীর রাতে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে যদি আলেয়াকে দেখে ফেলে তবে তাদের শরীর ও মনে নাকি একটা ঘোর ঘোর ভাবের সৃষ্টি হয় এবং তাদের সমস্ত বোধবুদ্ধি তখন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তারা মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই আলোর পিছু পিছু এগিয়ে চলে। সেই আলেয়াকে অনুসরণ করে যারাই জল জঙ্গলের পথ ধরে হেঁটে গেছে তাদের মৃতদেহ নদীর পারে বা খারির ধারে কিংবা জঙ্গলের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে একটা বিষয় এই যে মৃত দেহের গায়ে কিন্তু কোন প্রকার ক্ষত চিহ্ন বা আঘাতের
সুন্দরবনের রহস্যময় আলেয়া
লৌকিকতার বাইরে যে অলৌকিক এক জগত আছে এটাকে আমরা একেবারে অবিশ্বাস্য ভাবে উড়িয়ে দিতে পারি না। কার্যকারণ সম্পর্ক জুড়ে দিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক অলৌকিক ব্যাপারকে প্রমাণ দ্বারা লৌকিক ঘটনায় পরিণত করেছেন। তবু বলব এমন অনেক জাগা আছে যেখানে বিজ্ঞান প্রবেশ করতে পারেনি। সে সব অপ্রবেশ্য স্থানগুলি তাই আজও অলৌকিক হয়েই রয়ে গেছে। সর্বোপরি বলব বিশ্বাস অবিশ্বাস হল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আজকের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনকে ঘিরে। এই সুন্দরবনের কোন কোন জায়গায় নাকি গভীর রাতে এক অলৌকিক আলেয়ার দেখা পাওয়া যায়। কখনও স্থানীয় জেলেরা এই আলোকে অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। তারা এক সময় চলতে চলতে ঘন জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলে। আর এ ভাবেই নাকি তারা হারিয়ে যায়, আর জীবিত ফিরে আসতে পারে না।
রাতে সুন্দরবনের কোন কোন জাগা নাকি সত্যি বড় রহস্যময় হয়ে ওঠে। পর্যটকদের আসলে সুন্দরবনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয় না। নির্দিষ্ট কিছু জানা চেনা গ্রাম ও জনবসতি তাদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ ছাড়া কিছু খাড়ি, নদী পথ, সুগম জঙ্গল এলাকাই তাদের দেখানো হয়। সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এলাকা। এখানে ভারতের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের বাস--এমনি একটা চিত্র এখানে আসা পর্যটকরা নিজেদের মনের কল্পনায় সাজিয়ে নিয়ে সেটুকুতেই তৃপ্ত হয়ে ঘরে ফিরে যান।
এই সুন্দরবনের গভীরে শুধু যে বাঘের ভয় তা কিন্তু নয়, রাতের আঁধারে সেখানে ভূতের ভয়ও যে কম নয় ! শোনা যায়, সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল, জলাশয়, খাড়িতে এক ধরণের রহস্যময় আলো দেখতে পাওয়া যায়, স্থানীয়রা তাকে আলেয়া বলে। এই আলেয়াকে যারাই অনুসরণ করতে যায় তারাই হারিয়ে যায়। তারপর কোন জলা জায়গায়, জঙ্গলে বা নদীর পারে তাদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এমনি অনেক জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। আবার এমন কথাও শোনা যায় যে সেই আলেয়া কখনও নাকি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারও করেছে।
গভীর রাতে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে যদি আলেয়াকে দেখে ফেলে তবে তাদের শরীর ও মনে নাকি একটা ঘোর ঘোর ভাবের সৃষ্টি হয় এবং তাদের সমস্ত বোধবুদ্ধি তখন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তারা মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই আলোর পিছু পিছু এগিয়ে চলে। সেই আলেয়াকে অনুসরণ করে যারাই জল জঙ্গলের পথ ধরে হেঁটে গেছে তাদের মৃতদেহ নদীর পারে বা খারির ধারে কিংবা জঙ্গলের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে একটা বিষয় এই যে মৃত দেহের গায়ে কিন্তু কোন প্রকার ক্ষত চিহ্ন বা আঘাতের
ছাপ খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেছেন, এ সব ঘটনা আদৌ ভৌতিক নয়। তাঁদের মতে যারা মারা গেছে তারা অন্য কোন কারণে মারা গিয়ে থাকবে। আসলে আলেয়া ব্যাপারটাই নাকি একটা রাসায়নিক সংযোগ মাত্র। এটা হল মিথেন ও ফসফরাস গ্যাসের মধ্যে রাসায়নিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফল। এই দুটি গ্যাসের সংমিশ্রণে জলজ জাগাগুলিতে আলেয়ার সৃষ্টি হয়। প্রায়ই এমনটা দেখা গেছে যে নিচু জলো জায়গায় অনেক দিনের পচা ডালপালা পাতা একত্রিত হয়ে এই গ্যাসের সৃষ্টি হয়, আর সেই গ্যাস থেকে উৎপন্ন আগুনের গোলা বাতাসের সঙ্গে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। দিনের আলোয় এ আগুন লোকের চোখে স্পষ্টতর হয় না। রাতের অন্ধকারে মানুষের চোখে এ আগুনের
আলো স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে সুন্দরবনের বাসিন্দারা কিন্তু এ কথা মানতে চায় না। তারা বলে, নিজের চোখে যা আমরা দেখি তা কি করে অবিশ্বাস করবো ? এ ব্যাপারে তাদের মুখে মুখে একটা গল্প প্রচলিত আছে। সে গল্প এক প্রাচীন রাজা ও রাজপুত্রের গল্প। সে গল্প কোন
এক বিস্মৃতি কালের গল্প।
প্রায় এক শতাব্দী আগের সে কাহিনী। এই সুন্দর বনেরই এক প্রাচীন কাহিনী। এর সত্যতার প্রমাণ অবশ্য কারও কাছে নেই। ইতিহাসে এ কাহিনীর বর্ণনার কতটা কি আছে বা না আছে তা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত, তবে সুন্দরবনের বাসিন্দাদের দাবি, এ ঘটনা সত্য না হয়ে যায় না। এ কাহিনী নাকি চলে আসছে তাদের বাপ-ঠাকুরদা-দাদা পর-দাদাদের মুখে মুখে। তারা বলে, সে এক প্রাচীন কাহিনী—
সুন্দরবনে এক রাজা ছিলেন, তাঁর নাম ছিল সঞ্জুন। তার এক মাত্র পুত্র মানে রাজকুমার ছিল সঞ্জয়। সে ছিল সৎ গুনের অধিকারী। রাজকুমারের সৎ গুনের জন্য রাজ্যের সব প্রজাদের কাছে সে ছিল খুব প্রিয়। প্রজারা তাকে আলেয়া বলে ডাকত। একদিন আলেয়ার রাজ্যাভিষেকের সময় এগিয়ে এলো। সে সময়টায় নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য অভিষেকের আগে রাজপুত্রকে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হত। আর সে যোগ্যতা অনুসারে রাজপুত্রকে নরখাদক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শিকার করে নিজের
উপযুক্ততার প্রমাণ দিতে হত।
রাজ্য অভিষেকের আগে আলেয়া তার বাবার সঙ্গে সুন্দরবনের জঙ্গলে গেল বাঘ শিকার করতে। সুন্দরবনের খাড়ি-নদী ধরে তারা দুদিন ভেসে বেড়াল। এমনি চলতে চলতে একদিন রাতে চাঁদের আলোয় রাজকুমার, আলেয়ার চোখে পড়ল এক বাঘিনী ও তার শাবককে। বাঘিনী ও তার শাবক তখন খাড়ির মুখে নেমে এসে জল খাচ্ছিল। আলেয়া এই সুযোগকে হাত ছাড়া করতে চাইল না। সে তার দলবল নিয়ে সেই বাঘিনী ও তার শাবককে ঘিরে ফেলল। তারপর তাদের হত্যা করল। এ ভাবে সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার মেরে সে রাজ্য অভিষেকের যোগ্যতা অর্জন করে ফিরছিল নিজেদের রাজ্যের দিকে। ফেরার পথে পর দিন রাতে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটলো। আকাশে সে দিন রাতেও পূর্ণ চাঁদ উঠে ছিল। রাজকুমার সে চাঁদনী রাতের আলোতে দেখতে পেল আর একটা বাঘিনী ও তার শাবক খাড়িতে জল খেতে নেমে আসছে। রাজকুমার আলেয়ার ইচ্ছে হল সেই বাঘ ও তার শাবককেও শিকার করার। আর তাতেই তার জীবনে নেমে এলো কাল। রাজ কুমারের শিকারের প্রস্তুতির আগেই আচমকা সে বাঘ আক্রমণ করে বসলো রাজকুমারকে। সে দিন রাতে বাঘের কবলেই আলেয়ার মৃত্যু হল। বাঘ আলেয়ার মৃতদেহ মুখে করে নিয়ে শাবককে সঙ্গে নিয়ে
গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে গেল।
এই ঘটনার পর থেকেই নাকি রাজকুমার আলেয়ার অতৃপ্ত আত্মা সুন্দরবনের জঙ্গল, নদী, খাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। রাজকুমার আলেয়া ভূত হয়ে নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেমে বলে প্রায় প্রতি রাতে নাকি সে ঘুরে বেড়ায়। সুন্দর বনের স্থানীয় লোকেরা আজও তার অলৌকিক আত্মাকে আলেয়া হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখে। আর যারা সেই আলেয়াকে দেখতে পায় তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার পেছন পেছন চলতে থাকে আর এক সময় মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
এই ছিল সুন্দরবনের আলেয়ার গল্প।
এই ছিল সুন্দরবনের আলেয়ার গল্প।