গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯

প্রীতি মিত্র

বার্ধক্য, বিষাদ


বরাবর ই রমলার খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।ইদানীং বসন্তের খবর নিয়ে জানলার ধারে একটা কোকিল এসে ভোর রাতে রেওয়াজ শুরু করলে, রমলা আর শুয়ে থাকে না। আস্তে আস্তে ছাদে উঠে যায়। ভোরের গা বেয়ে আলতো ঠান্ডা, কুর্চি ফুলের মতো চোখে মুখে এসে পড়ে, ভারী ভালো লাগে তার। মনটা তার বরাবরই একটু কাব্যিক।
       সংসারের জংগুলে বন্যতা, পাথুরে রুক্ষতা এসব নিয়ে কোনদিনই বিশেষ চিন্তা করতে পারেনা। তার জন্য রয়েছেন ধৈর্য সহ্যের ঠাণ্ডা মাথার মানুষ স্বামী নিশিকান্ত।
"কাল রাতে চারবার বাথরুম  উঠতে হয়েছে....ঘুমের এতো ডিস্টার্ব .....বড় ক্লান্ত লাগে সকালে উঠে....অসুধপত্রের এতো দাম বেড়েছে...সব ওষুধপাতি ঠিকমতো কিনতে পারিনা,......তাই খাওয়াও হয়না ঠিকমতো ... বাবুন যে কটা টাকা পাঠায়....তাতে কি আর দুজনের ওষুধপাতি হয়....!"
নিশিকান্ত স্বগতোক্তি করে চলে আপন মনে চা খেতে খেতে।
          "তবে ওর আর দোষ কি....নাত্নীর নামী দামী স্কুলের খরচ.....আরো আগডুম বাগডুম কতো খরচ ওদের।তুমি আমি সেসব বুঝবো নাগো। এভাবেই আমাদের চলতে হবে "বলে উঠে পড়ে রমলা।
            ক্রিং ক্রিং ক্রিংক্রিং..... "হ্যালো মা, আমি বাবুন বলছি। তোমায় একটা সুখবর দিই।আমি একটা গাড়ি কিনেছি।তোমরা এলে ঘুরবে তখন।আর বাবাকে বোলো,আমি যে টাকাটা পাঠাই, ওটা কিছুদিন দিতে পারবোনা। কয়েক মাস বাদে এপ্রাইজালে কিছু টাকা বাড়লে, তখন পাঠাতে পারবো। "
সব শুনে নিশিকান্ত বাবু একেবারে চুপচাপ হয়ে রইলেন। রমলা তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেও লাভ হোলনা।দুপুরের দিকে বুকের যন্ত্রণায় ছটপট শুরু করলেন নিশিকান্ত।
দিশাহারা রমলা ছেলেকে ফোন করে, "বাবা শিগগির একবার আয়,তোর বাবার অবস্থা ভালো নয়।"
"
আজ আমার গাড়ির ডেলিভারি ডেট মা। আমি কালকের আগে যেতে পারবো না।"
ভোররাতে স্তব্ধ, পীড়িত, অভিমানী মায়ের ফোন ছেলেকে...."তোর আর ছটপট করে আসতে হবেনা বাবা। বাবা এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ঘুমোক, অনেক ঘুম জমেছিল ওর। তুই পারলে, একেবারে বারো দিন পরে একবার এসে ঘুরে যাস।"