মরুতীর্থ
কথাটা কানে বাজছে।
কান মাথা গরম হয়ে গেছে পলাশের।
পাশের ঘরের মেয়েটা টিটকারি মেরে বলে কিনা -
'শালা রোজ মেয়েছেলে পাল্টাবে। একটাতে মন ভরে না ? চরিত্রহীন হারামি।'
'শালা রোজ মেয়েছেলে পাল্টাবে। একটাতে মন ভরে না ? চরিত্রহীন হারামি।'
সোনাগাছি থেকে বেরিয়ে, ট্যাক্সি। ঠিকানা ঘাস বাগান, হাওড়া। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে পেয়ে গেলো একটা। আগে উঠে পড়লো ,তারপর কোথায় যাবে বললো । হাওড়া যেতে চায়না
এরা । হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে ওয়েদারটা ঠাণ্ডা হয়েছে।
কিন্তু পলাশের মাথায় এখনো কথাটা ঘুরছে । মাথা
গরম হয়ে আছে । সাড়ে আটটা বাজে, মোবাইলটা অন করে দেখলো। যাক এখনো ঘুমাবে বৈশাখী। আর তাছাড়া
ওর মা আছেন।
খানিকটা শান্ত হয়ে
এলো পলাশ। বাড়ি ঢোকার আগে বৈশাখীর 'ফ্লুঅক্সিডিন' আর 'ওলানজিপিন' একপাতা
করে, শাশুড়ির 'এসলো ফাইভ' একপাতা, পাউরুটি একটা আর ....
-- এই বাঁ দিকে দাঁড়াও।
-- এই বাঁ দিকে দাঁড়াও।
টাকা মিটিয়ে নেমে
পড়লো। সব কেনাকাটা করে, মনে হলো 'নিয়েই
নি'। পাশের মদের দোকানে
ঢুকেই পড়লো। 'টিচার্স ফিফটি' পাঁইট একটা নিয়ে,সোজা বাড়ির দিকে।
শাশুড়ি দরজা খুলে
দিলেন।
-- এখনো
ঘুমোচ্ছে , তুমি
ফ্রেস হয়ে বসো আমি সব জোগাড় করে দি তোমার। আজ আমিই না হয় ওকে খাইয়ে দেবো।
কিছু বলেনা পলাশ,
প্যাকেটগুলো ওষুধগুলো শাশুড়ির হাতে দিয়ে ,স্নানের ঘরে চলে গেলো।
সব মনে পড়ছে আজ ,
কতো আনন্দ ছিলো ওদের সংসারে । রিষড়া এস.বি.আই এর চাকরি পাওয়ার পর,বাবা দুবছরের মধ্যে
বিয়ে দেন। বৈশাখী, একটি সুন্দর লক্ষ্মীশ্রী রূপের মেয়ে, ভীষন নরম স্বভাবের।
বিয়ের কদিনের মধ্যেই,
ভীষণ ভালোবেসে ফেলে একে অপরকে । কদিন পরেই
শাশুড়িকে প্রায় চ্যাংদোলা করে তুলে আনে পলাশ। শশুর বহুদিন আগেই গত হয়েছেন। ইচ্ছে ছিলো
বাবা, শাশুড়ি সবাইকে নিয়ে খুব মজা
করে দিন কাটাবে । আর তাছাড়া ছোটো বেলায় মা হারা, সেই স্নেহটা শাশুড়ির থেকে আদায় করে নেবে। বেশ
সুখে কাটছিলো। তিন বছরের মাথায় সায়ন্তন হলো। আনন্দ দশগুণ, ওদের সংসারে।
কি যে হলো ! ছমাসের মাথায়, ছেলেটা ডেঙ্গুতে....। সেই যে বৈশাখীর প্রলাপ শুরু হলো...
ডাক্তার বললেন,
স্কিৎজোফেনিয়া। সব কেমন যেন ঘটে গেল পরপর।
মাস খানেকের মধ্যে বাবার হার্ট অ্যাটাক, অনাথ হয়ে পরা।
না, ভেঙে পড়েনি পলাশ।
শাশুড়ি,পাশে থেকে মায়ের
স্নেহ যত্ন পরামর্শ সবই দিয়ে চলেছেন। পলাশও ওনার কথার দ্বিমত করে না। একাই সব করে পলাশ। সকালে
বৈশাখীকে স্নান করিয়ে ,খাইয়ে ,ওষুধ
খাইয়ে ,বিছানা করে শুইয়ে অফিসে বের হয়।
বেরোনোর আগে শাশুড়ির সাথে খেয়ে, শাশুড়িকে প্রেসারের ওষুধ
খাইয়ে দেয়।এরপরই দুটি কাজের লোক চলে আসে।
তাদের দেখেন শাশুড়ি মা।
এভাবেই সাতবছর কেটে গেলো। পলাশ, এখন কি করে, কোথায় যায় মাঝে মাঝে, সব জানেন উনি। বরং পলাশকে দেখে ওনার বুকফাটা কষ্ট হয়। নিজের
মেয়ের থেকেও
বেশি ভালোবেসে ফেলেছেন ছেলেটাকে। এই বয়সে এই রকম ঝড় ছেলেটার জীবনে ! তাও কারুর অসম্মান করে না। একই ভাবে ভালোবাসে
সবাইকে, সব কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করে।
হ্যাঁ, কিছু কাজ করে,
যা সমাজ মেনে নেয়না,
আড়ালে কথা
বলে,হাসে, নিন্দা করে। করুক, উনি মন থেকে চান ছেলেটা একটু হাঁফ ছাড়ুক। এই যন্ত্রণা খানিক হলেও
ভুলে থাকুক।
অনেক রাত হয়েছে ,বৈঠকখানা থেকে কাঁচের গ্লাস ,থালা নিয়ে
সিঙ্ক'এ রেখে,উঁকি মারলেন মেয়ের শোবার ঘরে । বৈশাখীকে জড়িয়ে ধরে যেন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে পলাশ। ছলছল চোখে এগিয়ে, দুজনেরই গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,পরম স্নেহে।