গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯

পীযূষ কান্তি দাস

বসন্ত এসে গ্যাছে


    অফিস ছুটি হয় কাঁটায় কাঁটায় ঠিক চারটায় সাহেব কোম্পানীর অফিস সেই অফিসে পেটি ক্লার্ক আমি দেখতে শুনতে লোকে বলে ভালোই মহিলামহল আড়ালে আবডালে বলে কার্তিককুমার আমি মনে মনে হাসি কার্তিককুমার হেঁ হেঁ হেঁ ! দুপুরের টিফিনের পর প্রায়দিনই বারে বারে সামনে টাঙানো মস্ত বড় দেওয়াল ঘড়ির দিকে চাই আর ছটফট করি শালা ঘড়ির কাঁটা যেন নড়তেই চায় না ! আমার মুখোমুখি পরের রোর টেবিলে বসেন অনিকবাবু আমার চেয়ে বছর পাঁচেক বড় আমি ডাকি অনিকদা। আমার ছটফটানি তাঁর নজর এড়ায় না বলেন এই যে পাল ! অত অস্থির কেন ? মন দিয়ে কাজটা করো গত সপ্তাহে বড় সাহেব আমায় ডেকেছিলেন জিজ্ঞেস করছিলেন কাজ কম্মো কেমন করছো ইদানিং তোমার ফাইলে নাকি বেশ ভুলভাল থাকছে। ব্যাপারটা কি হে ? আমি বললাম তাই নাকি দাদা ! আর কি কিছু বললেন ? উনি বললেন না না তবে ....... তবে কি দাদা আমি ব্যগ্র হয়ে প্রশ্ন করি না না সেরকম কিছু নয় তবে আমি বলি কি ভায়া এবার কাজে একটু মন দাও অনিকদার কথা শুনে আমিও মনে মনে ভাবি ঠিক! ঠিক ! আর নয়। এবার মন দিয়ে কাজ করা দরকার শীগগির যখন একটা গুরু দায়িত্ব ঘাড়ে চাপবে , আগের থেকেই ঘাড়টা একটু মজবুত করা উচিৎ কি বলেন ! মনের প্রতিজ্ঞা মনেই রয় টিফিনের পরে উসখুসানি কমে না
    কেটে যাচ্ছিল এমনি করেই দিন রঙবেরঙের সুতোয় গাঁথা জীবনও রঙিন ! কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় অন্য ! মার্চ মাসের মাঝামাঝি গরমটা এরই মধ্যে পড়েছে ভালোই রাতে ভালো ঘুম হয় না সেকথা সেদিন ভিক্টোরিয়ায় গাছের তলায় লতুর কোলে মাথা দিয়ে খুনসুটি করতে করতে বলে ফেলেছি তাই না শুনে লতু বলছিল এখন যা করছো করো বিয়ের পরে .সি কিন্তু চাই - -চাই তারই দুদিন বাদে সবে অফিসে ঢুকেছি সাহেবের আর্দালি বংশী এসে বললে বড় সাহেব এত্তেলা পাঠিয়েছেন টিফিনের আগেই যেন দেখা করি শুনেই তো বুকের মাঝে ঢেঁকির উঠাপড়া কি জানি বাবা আবার কি ভুল করলাম! অনিকদার কাছে গিয়ে সিগারেট দিয়ে তৈলমর্দন করি দাদা সাহেব কেন ডেকেছেন আপনি কি কিছু জানেন ? আসলে আগের থেকে যদি কিছু জানা যায় ! যা রাশভারী সাহেব ! ঢিপঢিপানি নিয়েই ঢুকলাম কামরায় দেখি সাহেব দরজার দিকে পিছন ফিরে ফোনে কার সাথে কথা বলছেন গলার স্বরে হার্টবিট দ্বিগুণ হল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট তিনেক পরে ঘুরতেই বললাম গুড মর্নিং স্যার ! আপনি আমায় ডেকেছেন ? মুখখানি আরও একটু গম্ভীর করে তিনি বললেন পাল , বিনীতা আগামী কাল থেকে মেটারনিটি লিভে যাচ্ছে সেটা জানা আছে নিশ্চয়ই ? আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম সামনে ইয়ারএন্ডিং আবার তার সাথে অডিট তোমাকে তোমার নিজের টেবিল সামলে বিনীতার টেবিলের কাজটাও সামলাতে হবে পারবে তো ? কোম্পানী অবশ্য বিনিময়ে স্পেশাল কিছু অ্যালাউন্স ---- ঘাড় নেড়ে বাইরে এলাম নাড়া ছাড়া উপায় কি ! আমি তো কোন ছার , আজ পর্যন্ত সিনিয়ররাই কেউ সাহেবের আদেশ অমান্য করার সাহস করে নি ! টেবিলে ফিরে মনে মনে হিসাব করি বিনীতার বিয়ে হল যেন কমাস ? তবে কি বিয়ের আগেই বাঁধিয়েছিল নাকি ? বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল লতু আমি বলি কি কাজের ঠ্যালায় চোখে সর্ষেফুল দেখছি তখন ! দেখা করব কি করে ? গতকাল অনেক রাতে ইয়ারএন্ডিং আর অডিটের কাজ শেষ। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে আজ অফিসে এসেছি সই করে সোজা অনিকদার টেবিলে একটা সিগারেট অফার করি। অনিকদা সিগারেট নিতে একটা চেয়ার টেনে তার আরও কাছ ঘেঁসে বসি দুজনেই সিগারেট ধরাই তারপর বলি অনিকদা একটা কথা ছিল অনিকদা বললেন জানি জানি একটু আগে বেরোবি এই তো ? তা যা কদিন তোর যা খাটুনি গেল আমি সাহেব ডাকলে ম্যানেজ করে নেবো'খন ধন্যবাদ দিয়ে নিজের টেবিলে যাই চেয়ারে বসেই মোবাইল বের করে ফোন করি ওপাশে রিং হচ্ছে আমি ভাবছি কি বলব তবে ফ়োন তো কই তুলল না আবার রিপিট করি নো রেসপন্স যা বাবা কি হল রে ! বাথরুম গেল নাকি ফ়োন টা ফেলে ? এটা তো ওর স্নানে যাওয়ার সময় নয় তবে ? চেয়ারে বসে মনে মনে প্ল্যান করি , আজ দুপুরে বেরিয়ে ওকে বাইকে বসিয়ে সোজা সেই গঙ্গার ঘাটে যাব, যেখানে আগেরবার গিয়েছিলাম নদীর ধারে বটের ছায়ায় সেই সিঁড়িতে বসব দুজনে মিলে ভবিষ্যতের ছবি আঁকব।সামনে কুলু কুলু গঙ্গা তাতে ভেসে যাবে পাল তোলা নৌকা। নদীর থেকে ফুরফুরে বাতাস এসে ওর কুন্তল ওড়াবে আমি সেই কুন্তল সরিয়ে আলতো করে একটা চুমু দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি আধাঘন্টা পরে আবার ফোন করি ওদিকে সুইচ অফ সেকি রে বাবা আমার মিস কল দেখেও রিং ব্যাক না করে সুইচ অফ ! দুপুরে টিফিনের সময় বেরুলাম আগে সুলতাদের বাড়ি যাই নি কোনদিন তবে নামটা জানি। নবোদয় কলোনী গড়িয়া অফিস থেকে পাক্কা চল্লিশ মিনিট বাইক চালিয়ে গেলাম ওদের কলোনীতে দুজনকে ওর দাদার নাম বললাম চেনে না বলল একটা বাড়ির সামনে ফুটপাত ঘেঁসে বাইকটা দাঁড় করালাম একটা পা মাটিতে ঠেকিয়ে সিগারেট ধরালাম আর কাকে জিগ্গেস করব ভাবছি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম রিং করলাম আবার ওই তো রিং হচ্ছে আমি কলার টোনে শুনছি "বসন্ত এসে গ্যাছে বসন্ত এসে গ্যা -অ্যা -ছে" তিনবার রিং হয়ে কেটে গেল আবার রিপিট করলাম যথারীতি নো রেসপন্স দেখা না করেই ফিরে যাবো ? নাকি ওর শরীর খারাপ হল? কিছু একটা হয়েছে নিশ্চয়ই অন্যমনস্ক হয়ে এই সব ভাবছি এমন সময় সামনের গেট খুলে কে বেরুল ? একি ওর সাথে লোকটা কে ? লতুর কপালে সিঁদুর ! হাতে শাঁখা -পলা ! আমার দুচোখ ঝাপসা আমার এদিকে নিদাঘ তপ্ত দুপুর আর ওদিকে "- - - - - - - - "