গোল্ড ফ্লেক
ফি হপ্তায়
শনিবার সন্ধ্যে বেলায় শোভনদের
বৈঠক খানা ঘরটা জমজমাট হয়ে ওঠে তাদের ব্যান্ডের রিহার্সালের
কল্যানে । এ পাড়ায় শোভনদের বাড়িটাই
একমাত্র টিঁকে থাকা সবচেয়ে বড় আর
পুরোনো বাড়ি ... বেশির
ভাগ বাড়িই বাঁচতে পারেনি প্রোমটারের থাবা থেকে , কৌলিন্য হারিয়ে এখন
ছোট ছোট
পায়রার খোপ ;দিশা কি বোর্ড বাজায় এই ব্যান্ডে ... শোভন
গীটার, পলাশ ড্রাম , জ্যাজ ... মোট ছজন তারা , ছয় মূর্তি ... এরকমই এক শনিবার বিকেলে
তন্ময়কে রিহার্সালে নিয়ে আসে শোভন ... বলে " মিট তন্ময় , আমাদের লিড সিংগার , একটা হলুদ
রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছিল তন্ময় ,লম্বা ঝুলের , একমাথা ঝাঁকড়া চুল,সেটা আবার পনিটেল করা ,মুখে দাড়ি
গোঁফের জঙ্গল , চেহারার মধ্যে অসাধারণত্ব কিছু ছিল না ... কিন্তু মাইক্রোফোন
হাতে নিয়ে যখন তন্ময় ধরেছিল, "হয়তো
তোমারই জন্য / হয়েছি প্রেমে যে বন্য..." তার
গমগমে গলার অসাধারণ টোনাল কোয়ালিটিতে মুগ্ধ হয়েছিল সব্বাই ... আর দিশা তো একেবারে ফিদা ... যাকে বলে ক্লিন বোল্ড ।
রিহার্সাল শেষে
প্রতি শনিবারই একপ্রস্থ আড্ডা জমে
শোভনদের বাড়িতে ... চা জল খাবারের
সৌজন্যে শোভনের মা ; এ ব্যাপারে কাকিমা একেবারে মাই ডিয়ার ।
দলের সবাই তারা
চাকরি বাকরি করে কোনো না
কোনো প্রফেশানের সঙ্গে
যুক্ত । সারা সপ্তাহ প্রচন্ড পরিশ্রম যায় । সপ্তাহান্তে একটু রিল্যাক্স । একজোট হওয়া
মিউজিককে ভালোবেসে ।
আড্ডায় অল্পদিনের মধ্যেই তন্ময় মধ্যমণি হয়ে ওঠে । শোভন তাদের
লিরিসিস্ট । কি রকম গান লেখা উচিত
ব্যান্ডের জন্য ... মর্ডান গানের ট্রেন্ড এই নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই জোর আলোচনা
চলে শোভন আর তন্ময়ের মধ্যে ।
তন্ময়ের গমগমে ভরাট গলা
আর সবে বিষয়ে
অসাধারণ জ্ঞান ... দিশা শুধু মুগ্ধ হয়ে শোনে ... দিশার দু
চোখের মুগ্ধতা তন্ময়ের দৃষ্টি এড়ায় না ... কিন্তু সেই দৃষ্টি কখনই ঝড় তোলে না
তন্ময়ের বুকে ... তার
শয়নে স্বপনে চিন্তায় জাগরণে সায়নী.. শুধুই
সায়নী ... কলকাতার একটা কলেজে পড়ায় তন্ময় সেখানেই আলাপ সায়নীর সঙ্গে ... সায়নী ওর কলিগ ... ডাকসাইটে সুন্দরী সায়নী পাত্তাই দেয় না তন্ময়কে ... কলেজে ওর
এক ঝাঁক স্তাবকের মধ্যে
তন্ময়ও একজন ... তবু তন্ময় চাতকের
মতো তাকিয়ে থাকে সায়নীর
দিকে যদি ছুঁড়ে দেয়
একটুকরো হাসি একটু প্রশ্রয় মাখানো
দৃষ্টি ... তাতেই
সার্থক তন্ময়ের জীবন ...
চেন স্মোকার তন্ময় ; সিগারেট
ধরিয়ে যায় একটার পর
একটা ... গোল্ড ফ্লেক ... ধোঁয়ার
রিং ছাড়ে ...
দিশার যে কি মিষ্টি লাগে গন্ধটা ... একটা ম্যানলি স্মেল ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘর জুড়ে তন্ময় এলেই ... আগে আগে
শুধু শনিবারই দেখা হতো
তন্ময়ের সঙ্গে ... সারাটা সপ্তাহ হা পিত্যেশ করে বসে থাকত দিশা। তারপর একদিন রিহার্সাল শেষ হতে বেশ রাত
হয়ে যাওয়ায় শোভনই তন্ময়কে বলে, দিশাকে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে
আসতে ; তন্ময়ের বাইকের পিছনে খুব সন্তর্পনে আলগোছে
বসেছিল দিশা ,তন্ময়ের
ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ...
তবু গোল্ড
ফ্লেকের একটা মিষ্টি মৃদু গন্ধ তাকে ঘিরে
রইল সারাক্ষন ... আসার পথে
সারাটা রাস্তা একাই বক বক করছিল তন্ময় ... যেমন করে; হুঁ-হাঁ র বেশি খুব একটা উত্তর করে নি দিশা ,একটা ঘোরের মধ্যে বুঁদ হয়ে ছিল সে ... সারা রাত সেই ঘোরটা
তার সঙ্গে সঙ্গে ছিল ... সেই থেকে
দিশাদের বাড়িটা চিনে
যায় তন্ময় , এখন
শনিবার ছাড়াও চলে আসে আড্ডা মারতে ;তবে সাবধান
করে দিয়েছে দিশাকে তন্ময় , আমরা
কিন্তু বন্ধু জাস্ট বন্ধু , আমি চাইনা তুই এর থেকে কিছু বেশি ভেবে মনে মনে কষ্ট পাস ...
আজকাল প্রায়ই আয়নার সামনে দাঁড়ায় দিশা ; নিজেকে দেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ... উজ্জ্বল ফর্সা রঙ
তার , তবে বেশ
শর্ট হাইট আর গড়নও রোগা পাতলা ... একটা
মাঝারি মাপের আই টি কোম্পানিতে বেশ উচুঁ পদেই চাকরি করে সে , কি বোর্ড বাজানো তার প্যাশান .. শোভন
বলে সে নাকি বেশ ভালোই বাজায় ... জানে না সে
, তবে তন্ময়ের সঙ্গে
বাজাতে তার বেশ ভয় ভয়
করে আজও ... এই বুঝি পাছে নোটেশানে ভুল হয়ে যায় ... সুরে না লাগে ; সায়নীর কথা কোনোদিন দিশাকে বলে নি
তন্ময় ... কি জানি কি ভাবে নেবে ! যা অভিমানী মেয়ে !
সেদিন
কয়েকজন অফিস কলিগের সঙ্গে সিটি
সেন্টার ওয়ানে গিয়েছিল দিশা , কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে , হঠাত একটা পিলারের পেছন থেকে সেই চির পরিচিত গোল্ড ফ্লেকের গন্ধটা পায় ...কৌতূহল বশতঃ এগিয়ে
গিয়ে দেখে তন্ময় , জায়গাটা বেশ আলো আঁধারি , দিশার দিকে পিছন ফিরে ছিল বলে তন্ময়
দেখতে পায় নি দিশাকে, দিশা
দেখেছে ঠিক... একটা মেয়েকে চুমু খাচ্ছিল তন্ময় ; দুজনের ঠোঁট মিশে গিয়েছিল, মেয়েটির কোমরে তন্ময়ের হাত , পরম ভাললাগায় চোখ বুজে
ছিল মেয়েটি। মেয়েটির মুখের দিকে চোখ পড়তেই বিদ্যুত পৃষ্ট হয় দিশা ... সায়নী না ? দিশার স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয়
বান্ধবী ... ডাকসাইটে সুন্দরী সায়নী রায় চৌধুরী ... আর একমূহূর্ত ওখানে দাঁড়ায় না দিশা ... গলার কাছে একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে
উঠতে থাকে; ঝাপসা হয়ে যায় দুচোখ ...একবার বুক
ভরে শ্বাস নেয় পেছন ফিরে ... সেই গোল্ড
ফ্লেকের গন্ধ...