গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

রত্না ঘোষ

কার কাছে যাব!!!

আর কয়েক মূহূর্ত । তার পর চলে যেতে হবে। সবাই ঘিরে ধরেছে আমায়। সকলের চোখে জল। ছেলে- বউমা,মেয়ে -জামাই, নাতি-নাতনি সবাই। মেয়েতো জড়িয়ে ধরে আছে , যেতে দিতে চায়না যেন। এরকম বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কেঁদেছিল। সেদিন সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। আজ আর শক্তি নেই ওদের অনুভূতির সাথে নিজের অনুভূতি কে মেলানোর। পরপারের ডাক এসেছে আমার। ওখানেও যে অপেক্ষায় আছে অনেকে। এপারের মায়া কাটিয়ে চোখ মেলতেই দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। দুজন। একজন আমার স্বামী অন্যজন প্রেমিক । স্বামী, যে আমাকে সুখী করতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনেকরতেন। বিনিময়ে কিছু চাননি কোনোদিন। এখনও দেখছি আমাকে ভালোবেসে নিজেকে ধন্য করতে এসেছেন। দাঁড়িয়ে আছে অসহায়ের মত । কারন তাঁর চোখের সামনেই তার প্রতিযোগী। তবে তার চোখের ভাষা পরিষ্কার। যেন বলতে চায়-----" এপারে আমার সবটুকু দিয়ে তোমায় সুখী করব। ভরিয়ে দেব তোমার সব না পাওয়াকে। বিনিময়ে তুমি কিছু না দিলেও মুখ ফুটে চাইব না। আর দিলে সাদরে গ্রহন করব, অসম্মান করব না। তুমি এসো আমার সাথে। 

আমার স্বামী এপারে আসার আগে শুধু একবার অস্ফুটে বলেছিলেন----"আমাদের সন্তানরা তোমায় সুখে রাখবে। হ্যা সন্তানরা বাবার আদর্শে বড় হয়েছে। তাই জানে মাকে কতটা ভালো বাসতে হয়। বউমা তো আমার বড় মেয়ে। আমার মেয়েও আমার সেবায় হাতগুটিয়ে থাকেনি মেয়ে বলে। ওরা আমার সুসন্তান। স্বামীর অনুপস্থিতিতে আমি ওদের আদরে ভেসে গেছি। আমার আজ মনে পরছে বিয়ের দিনের কথা। সিদুঁর দানের পর আমার নাকে সিদুঁর মাখামাখি অবস্থায় দেখে সকলে বলেছিল।,-----"তোর বর তোকে খুব ভালোবাসবে"হ্যা আমার বর আমায় আমরন খুব ভালোবেসেছে। একদিনের জন্যও অবহেলা করেনি। অন্যদিকে দাঁড়িয়ে আছে আমার প্রেমিক । ঠোঁটের কোণে এক-চিলতে দুষ্টু মিষ্টি হাসি নিয়ে। যার এই হাসিতে আমি অষ্টাদশীতেই মজেছিলাম। আজও অবহেলা করতে পারছি না। আমি বানভাসি ভালোবাসায় ভেসেছিলাম। সেও হয়ত জানিনা। তবে ভালোবাসা কেন দুজনকে একসূতোয় বাঁধতে পারলনা তা সকলকে বলা মানে ভালোবাসাকেই অপমান করা। তা আজ মনেও করতে চাইনা তবে দুজনেই ছোট হয়ে যাব। আমি তাকে শেষ চিঠি তে শুধু লিখেছিলাম,----"এ জন্মে তোমায় পেলাম না । পর জন্মে যেন পাই।" জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ওই আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল আমার প্রতিশ্রুতির কথা বার বার।যদিও পরজন্ম নিয়ে ও নিজেই দ্বিধাগ্রস্থ ছিল। তবে এপারে আসার আগে আমার হাত দুটো ধরে ও শুধু একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল,------"চললাম, পরপারে দেখা হবে।" দেখাতো হল। এপারে আসতেই দেখি দাঁড়িয়ে আছে স্বভাব সিদ্ধ হাসি নিয়ে। যে হাসিতে আমি এখনও মোহগ্রস্থ। বুঝতে পারছিনা কোথায় যাব? কার কাছে? স্বামী না প্রেমিক যাকে কথা দিয়েছিলাম???