পরিণীতা
শেষ রাতে গভীর
নীরবতা। রাতপরী আলোগুলো একাকী
দাঁড়িয়ে। শহর গভীর ঘুমে
বিভোর। কেউ জানবে না,
কোনদিন জানবে না কেন
এমন হল। এমন হবার
তো কথা ছিল না।
হঠাৎই একদিন বিন্দুমাসী তার
ছেলেকে নিয়ে বাবার কাছে
হাজির হয়েছিল। রূপমের রূপ
দেখে চমকে গেছিল নিশা।
জড়োয়ার সেট দিয়ে আশীর্বাদ।
আলাদা ফ্ল্যাট, যেটা রূপম
কিনেছে নিজেদের দাম্পত্যকে মনের
মত করে সাজাবে বলে।
মনে খুশির বান ডেকেছিল
নিশার। দরজা বন্ধ করে
এগিয়ে আসে রূপম। পাশে
বসেই গভীর চুম্বন। তারপর
এক ঝটকায় কোলে তুলে
নিয়েই নিশাকে বিছানায় শুইয়ে
দেয় রূপম। পাগল করা
বিরামহীন চুম্বনে অনাঘ্রাত যৌবন
শিহরিত হয়ে ওঠে নিশার।
দগ্ধ দেহ প্রত্যুত্তরে রূপের
অধরকে ভরে নেয় নিজের
ওষ্ঠাধারে। গভীরভাবে আঁকড়ে ধরে
রূপমের শরীরটাকে। একে একে
অনাবৃত করে তাকে রূপম।
দুটি দেহ মিশে যাচ্ছে,
মিশে যাচ্ছে। হঠাৎই ছিটকে
বেরিয়ে যায় রূপম। রূপমের
নগ্ন শরীরের কাঙ্খিত বস্তুটি
দেখে চমকে ওঠে নিশা।
মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া
বাঘিনীর মত বলে ওঠে
"মানে?" "বিয়ে আমি করতে
চাইনি। মা বলেছিল,
বিয়ের পর ঠিক হয়ে
যাবে, মেয়েরা অর্থের আর
গহনার কাঙাল,আমার তো
তার অভাব নেই। তাই
…………, আমি চেষ্টা করেছিলাম।
পারিনি। আমাকে তুমি ক্ষমা
কর।" রাস্তার নিভতে থাকা
আলোগুলো ভোরের সংকেত দিচ্ছে।
চলাচলকারী পথচারীরা দাঁড়িয়ে এক
নব্য বিবাহিত পরিনীতার দেহ
ঘিরে। সিঁথিতে টকটকে সিঁদুর।
ব্রণ
ডান গালে ছোট্ট
একটা ফুসকুড়ি হয়েছে সীমার।
সেদিন আয়নায় চুল আঁচড়াতে
গিয়ে দেখে আনন্দে বিহ্বল।
নির্ঘাৎ সেই ব্রণ,
১০ বছরে দেখা দিয়েছিল
প্রথম। প্রথমে লালচে,
তারপর মুখের কাছটা সাদা
হয়ে আসা। মা বলেছিল
"টিপবি না, টিপলে
সারা মুখে বেরোবে। কালো
কালো ছোপ পড়বে। দেখতে
বিশ্রী হয়ে যাবে মুখটা।"
আজ আবার ব্রণ হয়েছে।
তাহলে? যৌবনটা এখনও আছে?
সীমা সারাদিন ব্রণের স্বপ্নে
বিভোর। ঘুরতে ফিরতে আয়নায়
দেখে,মুখের কাছটা সাদা
হল কিনা। সীমা এখন
জানলা দিয়ে নতুন সকাল
দেখে। গাছের কচিপাতা দেখে।
ছোট্ট পাখির ছানা দেখে।
নির্জন দুপুরে একা ঘরে
আয়নায় স্তনগুলো দেখে। মনে
হচ্ছে এখনও বয়সের ভারে
ন্যুব্জ হয়নি। এক অদ্ভুত
আনন্দে বিচরণ করে সারাদিন।
একটা ব্রণ হয়েছে,
আরো হবে, আরো
হবে,আরো আরো।
তারপর তারপর তারপর…………সীমা
আর ভাবতে পারে না।
অফিস থেকে সুকুমার ফিরলে
গর্বের সঙ্গে দেখায় চোখের
তলার হাড়টার নীচে সেই
ছোট্ট অথচ সুন্দর জিনিসটাকে।
সুকুমার ম্লান হাসে। কিন্তু
অবাক হয়, আনন্দও
পায় সীমার খুশিতে।
"এখনও হতে পারে বল?
সীমার প্রশ্নের উত্তরে সুকুমার
অবিশ্বাস সত্ত্বেও ঘাড় নাড়ে।
কিন্তু ব্রণটা আর পাকে
না। আকারে বড় হলেও
সেই দশ বছরের মত
নয়। সীমা আশা ছাড়ে
না। অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষা
করেই চলে। মাঝে মাঝে
মনে উদিত হয়,
এ ব্রণ গান্ধারীর গর্ভবতী
হওয়ার মত নয় তো?
একদিন ব্রণটা গেলে দিতে
যায়। কিন্তু গলে না।
কিছুই বেরোয় না,
যেমন আগে বেরোত সাদা
পদার্থ। এদিকে আরো একটা
মাসের আঠারো তারিখ পেরিয়ে
গেল। গত মাসে হয়নি,
এ মাসেও হল না।
বুকের মধ্যে কিছু একটা
দলা পাকায়, গলা বেয়ে
উঠতে চেয়েও পারে না।
সন্ধ্যায় সুকুমার ফিরলে কান্নায়
ভেঙে পড়ে সে।
" এ
জন্মে আর মা হতে
পারব না? বল
না, বল না।"
সুকুমার মাথা নামায়।