গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

গৌতম সেন

মেট্রোপথে

গোবিন্দবাবু ফিরছেন দক্ষিণেশ্বর থেকে। যাত্রা একাধারে সংক্ষেপিত আরামদায়ক করতে শ্যামবাজার  থেকে মেট্রো  ধরেছেন। বরিষ্ট নাগরিকের আসনে বসে, সন্ধ্যারতির সুর সুখরোমন্থন করতে করতে চলেছেন ভিড় হালকা হতে তাঁর নজরে আসে সামনের সিটে এক ভীষণ চেনা মুখ। স্মৃতি-অভিধান ঘাঁটা শুরু হয়ে গেল তাঁর। অথচ যাকে নিয়ে  তাঁর এই অনুসন্ধান  সে যদি একবার তাঁর দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতেন। ভদ্রলোক সিটের একপাশে আরামে হেলান দিয়ে  ঢুলছেন।
একসময় সেই ঘুমন্ত মানুষটির পাশে সিট খালি হল। আক্ষরিক অর্থে একলাফে তিনি ওই ব্যক্তির পাশে গিয়ে বসলেন। শুধু তাই নয়, বসার সময় একটা মৃদু ধাক্কা প্রয়োগ করলেন। তাঁর এই কৌশলে কাজ হল। ভদ্রলোকের ঘুম ছুটে গেল। গোবিন্দবাবুর চোখে চোখ পড়তেই তিনি চমকে উঠলেন – “আরে গোবিন্দ না! কত যুগ পরে দেখা।গোবিন্দবাবুর মুখ যেন তখন এক তৃপ্তির ক্যানভাসএতক্ষণে জট খুললোতিনি কোন ঢাকগুড় না করে বললেন -“হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ। কিন্তু ভায়া নামটা তোমার কিছুতেই মনে আসছে না। তোমাকে দেখা ইস্তক হাতরে চলেছি তোমার নাম।
- “সে তো তোর তুমিসম্বোধনেই পরিস্কার। আমি দেবাশিস রে, তোদের দেবু।
- ও বাঁচালি রে! তখন থেকে শুধু ঢুলছিস! একবার আমার দিকে চাইলেই তো ল্যাঠা চুকে যেত।
-
আমি তো নামব সেই শেষ। তুই নামবি কোথায়?
আমি নাকতলায় থাকি, নামব গীতাঞ্জলী” – গোবিন্দবাবু নিজের আস্তানার খবর দিলেন, “তোর ফোন নাম্বার টা দে। গিয়েছিলি কোথায়?

ফোন নাম্বার বিনিময় হল দুজনের। চাকরী থেকে অবসরের পর কয়েকবছর যা যোগাযোগ ছিল, তারপর থেকে দুই বন্ধুর মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বললেই চলে। সেই বন্ধুত্বের আজ আবার পুনর্নবীকরণ হল। তাঁর বন্ধু নন্দন থেকে বাংলা সিনেমা দেখে ফিরছে শুনে বললেন – “এখনও আগের মতই সংস্কৃতির ধ্বজা উড়িয়ে চলেছিস। একটু ধম্মে-কম্মে মন দিলেও তো পারিস? আমি তো দক্ষিণেশ্বর, বেলুড় নিয়মিত যাই।বন্ধু দেবাশিষ উচ্চস্বরে হেসে ওঠেন। বলেন –“দেবদেবীর আশীর্বাদ তো আমায় ঘিরে রয়েছে সেই অন্যপ্রাশনের দিন থেকেই, আর তোরা তো আছিস রে তোদের পূণ্যে আমার পূণ্য, নইলে বহর বাড়ে!বন্ধুর এই কথার জবাব আর গোবিন্দবাবুর দেওয়া হয় নামেট্রোর ভিতরে ঘোষণা শোনা যায় – ‘স্টেশন্‌ গীতাঞ্জলী