সমরেশের তিন বাল্যবন্ধু রঞ্জিত,সুব্রত আর অখিল ।
একে-একে তিন বন্ধুই সরকারী চাকরী পেয়ে গেলো । তার অনেক পরে সমরেশ চাকরীর পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরে-ঘুরে শেষে তিওরখালি বাজারে ছোটো একটা মুদিখানার দোকান দিলো ।
একে-একে তিন বন্ধুই সরকারী চাকরী পেয়ে গেলো । তার অনেক পরে সমরেশ চাকরীর পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরে-ঘুরে শেষে তিওরখালি বাজারে ছোটো একটা মুদিখানার দোকান দিলো ।
তিন বন্ধুকে সমরেশ একই ভাষায় হেসে-হেসে বলল,''তোরা চাকরী পেয়েছিস আমি খুব খুশী
। এবার তোরা আমাকে খুশী কর আমার দোকান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে ।''
তিন বন্ধু এককথায় রাজী সমরেশের কথায় ।
ওরা তিনজন প্রায় একই ভাষায় ভিন্ন-ভিন্ন সময়ে বলল,''সে আর বলতে ? আমরা আছি কী করতে,শুনি ? তুই এ নিয়ে ভাবিস না একদম ।''
বন্ধুদের কথা শুনে আপ্লুত । সমরেশ ওর বৌ ফাল্গুনীকে বন্ধুদের কথা জানালো পরে ।
ফাল্গুনী শুনে ফিকফিক করে হেসে বলল,''দেখো তবে । তবে কী জানো ? নাহ । এখন কিছু বলছি না ।''
সমরেশ অনেক চেপে ধরা সত্ত্বেও ফাল্গুনী মুখ দিয়ে আর একটি কথাও বার করলো না । বেশ অবাক হল তখন সমরেশ ।
তিন বন্ধু এককথায় রাজী সমরেশের কথায় ।
ওরা তিনজন প্রায় একই ভাষায় ভিন্ন-ভিন্ন সময়ে বলল,''সে আর বলতে ? আমরা আছি কী করতে,শুনি ? তুই এ নিয়ে ভাবিস না একদম ।''
বন্ধুদের কথা শুনে আপ্লুত । সমরেশ ওর বৌ ফাল্গুনীকে বন্ধুদের কথা জানালো পরে ।
ফাল্গুনী শুনে ফিকফিক করে হেসে বলল,''দেখো তবে । তবে কী জানো ? নাহ । এখন কিছু বলছি না ।''
সমরেশ অনেক চেপে ধরা সত্ত্বেও ফাল্গুনী মুখ দিয়ে আর একটি কথাও বার করলো না । বেশ অবাক হল তখন সমরেশ ।
তিন বন্ধু নিয়মিত সমরেশের দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনছে । চাহিদামতো জিনিস পাচ্ছে । পয়সাও মিটিয়ে দিচ্ছে ঠিক সময় ।
এভাবে চারমাস চলার পর একদিন সুব্রত একটু বিরক্তির সঙ্গে বলল সমরেশকে,''খাতায় ঠিক করে দাম লিখিস তো ? বৌ বলল কাল বাজারের থেকে একটু যেন বেশী...''
যারপরনাই বিস্মিত সমরেশ তখন ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো,''বেশীর কথা বলছিস তো ? হ্যাঁরে,একটু না । বেশ বেশীই নিচ্ছি । পরের মাস থেকে আর তোকে আমার দোকানে খেতে হবে না ।''
এভাবে চারমাস চলার পর একদিন সুব্রত একটু বিরক্তির সঙ্গে বলল সমরেশকে,''খাতায় ঠিক করে দাম লিখিস তো ? বৌ বলল কাল বাজারের থেকে একটু যেন বেশী...''
যারপরনাই বিস্মিত সমরেশ তখন ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো,''বেশীর কথা বলছিস তো ? হ্যাঁরে,একটু না । বেশ বেশীই নিচ্ছি । পরের মাস থেকে আর তোকে আমার দোকানে খেতে হবে না ।''
ব্যস... সুব্রতর নাম কেটে গেলো সমরেশের খাতা থেকে ।
শুধু কি দোকানের খাতা থেকে ? সমরেশের বুক থেকেও ও বুঝি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো । সমরেশ ফাল্গুনীকে কিছুই বলল না ।
সুব্রত ওর দুই বন্ধুর কাছে সব জানালো । সমরেশ অবশ্য ওদের কিছুই বলেনি । বলার প্রয়োজন মনে করেনি । তবে কি ওর নতুন কিছুর জন্য অপেক্ষা ?
শুধু কি দোকানের খাতা থেকে ? সমরেশের বুক থেকেও ও বুঝি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো । সমরেশ ফাল্গুনীকে কিছুই বলল না ।
সুব্রত ওর দুই বন্ধুর কাছে সব জানালো । সমরেশ অবশ্য ওদের কিছুই বলেনি । বলার প্রয়োজন মনে করেনি । তবে কি ওর নতুন কিছুর জন্য অপেক্ষা ?
তারপর দুমাস গেলো ।
এক সন্ধ্যায় রঞ্জিত অফিস থেকে ফেরার পথে সমরেশের দোকানে এলো বেশ মুখ-ভার করে । সমরেশের হাসি-মুখ ওর পছন্দ হল না ।
রঞ্জিত বলে বসলো সমরেশকে,''গত দুমাস থেকে চালটা ঠিকঠাক হচ্ছে না । ডালটাও না । অথচ দাম বাজারের চেয়ে কোন অংশে কম না ।''
সমরেশ আগেই বুঝি ওর কপাল-লিখন পড়ে ফেলেছিল ।
তাই ও তখন এক চিলতে হেসে বলল রঞ্জিতকে,''এই হয় । সুব্রতরও তাই হয়েছিলো । এ মাসের পয়সা মিটিয়ে এবার বিদেয় হ রে । আমি আর পারছি না ।''
বলতে বলতে সমরেশের গলা ধরে আসে কান্নায় । কিন্তু সে বোঝার ক্ষমতা ছিল না রঞ্জিতের । পয়সা মিটিয়ে ও হনহন করতে করতে বেরিয়ে গেলো নিমেষেই । সমরেশ কিন্তু সে কথাও ফাল্গুনীকে বলেনি পরে ।
ফাল্গুনী বন্ধুদের কথা জানতে চাইলে সমরেশ বারংবার বলে ওকে,''সব ঠিক আছে । চলছে বেশ ।''
কিন্তু ফাল্গুনীর মুখের অবিশ্বাসের হাসি ওকে অবাক করে খুব ।
এক সন্ধ্যায় রঞ্জিত অফিস থেকে ফেরার পথে সমরেশের দোকানে এলো বেশ মুখ-ভার করে । সমরেশের হাসি-মুখ ওর পছন্দ হল না ।
রঞ্জিত বলে বসলো সমরেশকে,''গত দুমাস থেকে চালটা ঠিকঠাক হচ্ছে না । ডালটাও না । অথচ দাম বাজারের চেয়ে কোন অংশে কম না ।''
সমরেশ আগেই বুঝি ওর কপাল-লিখন পড়ে ফেলেছিল ।
তাই ও তখন এক চিলতে হেসে বলল রঞ্জিতকে,''এই হয় । সুব্রতরও তাই হয়েছিলো । এ মাসের পয়সা মিটিয়ে এবার বিদেয় হ রে । আমি আর পারছি না ।''
বলতে বলতে সমরেশের গলা ধরে আসে কান্নায় । কিন্তু সে বোঝার ক্ষমতা ছিল না রঞ্জিতের । পয়সা মিটিয়ে ও হনহন করতে করতে বেরিয়ে গেলো নিমেষেই । সমরেশ কিন্তু সে কথাও ফাল্গুনীকে বলেনি পরে ।
ফাল্গুনী বন্ধুদের কথা জানতে চাইলে সমরেশ বারংবার বলে ওকে,''সব ঠিক আছে । চলছে বেশ ।''
কিন্তু ফাল্গুনীর মুখের অবিশ্বাসের হাসি ওকে অবাক করে খুব ।
রইলো বাকি এক ।
অখিল । সমরেশ ভাবল,এ আর যেতে কতক্ষণ ? কানে কি আর বিষ ছড়ায়নি ? বেশ ছড়িয়েছে ।
কিন্তু একদিন অখিল নিজেই সখেদে বলল সমরেশকে,''সব কানে এসেছে আমার । আমি মোটেও বিশ্বাস করিনি । আমার কোন অভিযোগ নেই তোর জিনিসের ব্যাপারে । আর একটা কথা । অভিযোগের কী আছে ? আমরা যখন বাল্যবন্ধু,তখন শলা-পরামর্শ করে একে-ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি । তাই না ?''
অখিলের কথা শুনে সমরেশের দু'চোখ ছলছল করে উঠলো তখন । তা লক্ষ্য করে অখিল শীতের সন্ধ্যায় দোকানের বাইরে থেকে হাত বাড়িয়ে দিলো সমরেরশের দিকে হৃদয়ের উষ্ণতা বোঝাতে । সমরেশ ওর হাত চেপে ধরে খুব ঝাঁকাতে থাকলো নিজের দুঃখগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় ।
অখিল । সমরেশ ভাবল,এ আর যেতে কতক্ষণ ? কানে কি আর বিষ ছড়ায়নি ? বেশ ছড়িয়েছে ।
কিন্তু একদিন অখিল নিজেই সখেদে বলল সমরেশকে,''সব কানে এসেছে আমার । আমি মোটেও বিশ্বাস করিনি । আমার কোন অভিযোগ নেই তোর জিনিসের ব্যাপারে । আর একটা কথা । অভিযোগের কী আছে ? আমরা যখন বাল্যবন্ধু,তখন শলা-পরামর্শ করে একে-ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি । তাই না ?''
অখিলের কথা শুনে সমরেশের দু'চোখ ছলছল করে উঠলো তখন । তা লক্ষ্য করে অখিল শীতের সন্ধ্যায় দোকানের বাইরে থেকে হাত বাড়িয়ে দিলো সমরেরশের দিকে হৃদয়ের উষ্ণতা বোঝাতে । সমরেশ ওর হাত চেপে ধরে খুব ঝাঁকাতে থাকলো নিজের দুঃখগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় ।
সেদিন রাতেই সমরেশ ফাল্গুনীকে সব বলল একে-একে ।
ফাল্গুনী সব শুনে গালে হাত রেখে মৃদু-হেসে বলতে থাকলো,''হুম । তবে তোমাকে একটু বলার আছে আমার । তুমি এখন ব্যবসায়ী । তোমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক অর্থের । তোমার খদ্দেরদেরও তাই । তোমার আগের দুই বন্ধুকে আমি ভুল বলছি না । আর যে আছে,সেও তোমার ভরসা নয় । এভাবেই চল । বুঝলে আমার কথা কি ?''
সমরেশ তখন অম্লান-হেসে উত্তর দিলো,''বুঝলাম গো । সব বুঝলাম । কিন্তু বন্ধুত্ব এমন এক ব্যাপার বুকে খুব খচখচ করে ওঠে । তাই ভুলতে একটু দেরী হবে । তারপর একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে । দেখো তুমি ।''
ফাল্গুনী সব শুনে গালে হাত রেখে মৃদু-হেসে বলতে থাকলো,''হুম । তবে তোমাকে একটু বলার আছে আমার । তুমি এখন ব্যবসায়ী । তোমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক অর্থের । তোমার খদ্দেরদেরও তাই । তোমার আগের দুই বন্ধুকে আমি ভুল বলছি না । আর যে আছে,সেও তোমার ভরসা নয় । এভাবেই চল । বুঝলে আমার কথা কি ?''
সমরেশ তখন অম্লান-হেসে উত্তর দিলো,''বুঝলাম গো । সব বুঝলাম । কিন্তু বন্ধুত্ব এমন এক ব্যাপার বুকে খুব খচখচ করে ওঠে । তাই ভুলতে একটু দেরী হবে । তারপর একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে । দেখো তুমি ।''
পর মুহূর্তেই ফাল্গুনী সমরেশের মাথাটা ওর কোমল বুকে টেনে নিলো । এবার কিন্তু ফাল্গুনী চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না । সমরেশ ওর বুক-জুড়ে কেঁদে চলল শিশুর মতো । বাইরের রাতের অন্ধকারও বুঝি তা দেখেছিলো । তাই সেই কখন যাওয়া বিদ্যুৎ হঠাৎ চলে এসে ঘর আর বাইরের পরিবেশকে আলোকিত করে তুলল । এ বুঝি যন্ত্র-হৃদয়ের উষ্ণতার নামান্তর ? কিছু
মানুষের কেন যে কম !