শিয়ালদহ বাজারে এক মুটে বাবু টিকে দশ টাকা বেশি চাইলেন।বাবু
দিতে নারাজ যেন কি ভীষণ ঠকে যাবে সে।অগত্যা দশ টাকা কমেই নব্বই টাকায় রাজি হয়ে মাথায়
করে মোট নিয়ে চলল মুটে। লাফিং বুদ্ধের মতো দেখতে মোটা বাবুটি ব্যাঙের মত থপ থপ করে
চলেছে আগে আগে মুটে চলেছে পিছনে পিছনে। মোট মাথায় মুটে বলল;- বাবু থোরা জলদি চলিয়ে। বাবু রেগে
অস্থির। -বেটা সিরাজউদ্দৌলার নাতি।ডাক্তার নিষেধ করেছেন দৌড়ঝাঁপ।হার্টের
অসুখ, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস,
আর্থ্রাইটিস, কোলেস্টেরল সব একসাথে ধরে নিয়েছে।
মুটে বলল;- আপকা উমর কেয়া হ্যাঁয়? বাবু বললেন;-সামনের বছর পঞ্চাশ হবে। মুটে বলল;-
উমর মে আপ হামসে ছোটা হ্যাঁয় । বাবু বললেন;- তোমার কোন তকলীফ আছে? মানে শরীর ঠিক আছেত?
মুটে হাঁটতে হাঁটতে বলল;- হ্যাঁ!
ঠিক আছে বাবু।লেকিন বহুত ভুখ লাগে।জাদা নিঁদ ভী আতা হ্যাঁয়। বাবু
মনে মনে বললেন কি জ্বালা।বেটার খাবার নেই খিদে পায়।ফুটপাতে থাকে বেটার শোবার জায়গা
নেই তবু ঘুম পায়।আর আমার সব আছে অথচ আমার খিদেও পায়না ঘুমও পায় না। ইনফ্যান্টের
বাচ্চার মত ডাক্তারের রুটিং মেপে চলতে হয়। বাবুটি আগে আগেই চলছিল মুটেটি বাবুকে অনুসরণ
করেই চলছিল পেছনে।কিন্তু বাবুটি বেশ বুঝতে পারছিল তার পকেটে হাজার টাকা থাকলেও সে মুটে
টির চাইতে এ জীবনে অনেক টা পিছিয়ে রয়েছে। তবু বাবু টক অম্বলের ঢেকুর তুলতে তুলতে;ঠিক কতটা পিছিয়ে রয়েছেন মেপে দেখার জন্য; বললেন;-
যা খাও হজম হয়তো? মুটে এক গাল হেসে বলল।-লোহা ভী হজম হয়ে যায় বাবু। মুটে টাকে হিংসা হতে লাগল বাবুটির।তবু গন্তব্যে
পৌঁছে একশ টাকা দিলেন বাবু। মুটে অতিরিক্ত দশ টাকা না নিয়ে লুঙ্গির তলা থেকে ময়লা
কাপড়ের বটুয়া ব্যাগ বার করে তা ফিরিয়ে দিতে গেলে। বাবু বলেন;- থাক। মনে মনে বললেন অতিরিক্ত খেয়ে কি লাভ;হজম
করতে না পারলে! গাড়িতে মাল তুলে সেলাম করে মুটেটি চলে গেলে
বাবু টি সিটে বসে ফর্দ মিলিয়ে হিসেব কষে চলল।গাড়ি যখন মৌলালির মোড় পার হচ্ছে;বাবুটির মনে হল ওই মুটে বেটা যদি তার থেকে একদিনও বেশি বাঁচে তাহলে সে লাভবান
হবে ।বাবু তবু কখনো মুটে হবার কথা ভাবতে পারলেন না। এদিকে মুটে বেটার এতো কিছু ভাবার
সময় নেই । সে আবার একটা বাবু খুঁজতে লাগলো আর একশো টাকা পেলে সে আজ গোস বিরিয়ানি
দিয়ে রাতে দারু খাবে চ্যামেলির ঠেকে। বেশ খোশ মেজাজে । মুটেটা নিজের অজান্তেই যেন
বাবু হতে চাইল।