ঝুপসি অন্ধকার
ঝুলছে এগাছ সে গাছ থেকে । অন্ধকার নিয়ে লোফালুফি করছে চাঁদটা । এদিকটা
কেউ আসেনা । গ্রামের প্রান্ত । বিরাট মাঠের মাঝে সিঁথি পথ । রোজ রাতে ঘরে ফেরে সুমন এক়থলে অন্ধকার নিয়ে ।ঝাড়াঝাড়ি করলে চারটে আলু কি দুটো পটল
বেড়োয় । মা়ঠ জোড়া এই অন্ধকার সুমন ভালোবাসে ।নিশ্ছিদ্র নক্ষত্রবিহীন
হলে আরো ভালো লাগে । আলোর অনুপস্থিতি অন্ধকার
।তার ়ঘরেও আলো নে়ই । অন্ধকার ও
জীবন্ত হয় । যেদিন মা মরবে সে রাতে একটা অন্য অন্ধকারকে দেখেছিলো ।ছোটো আলমারীটার কোণে বসেছিলো গুটিসুটি । বৃদ্ধা এক বুড়ি । ঠায় বসে়ছিলো যতক্ষণ না মার প্রাণটা বেড়োলো । ইস্কুলের মেধাবী ছাত্র।কিছুই করতে পারেনি জীবনে
।কোনোমতে দিন চলে । অন্ধকারের নেশা তার ।অনু পরমানু কিভাবে চলাচল করে অন্ধকারে ...... কালো মলিকিউল ।পৃথিবীর সব আলো কে হজম
করে এক রাশ অন্ধকার ইলেক্ট্রণ আর প্রোটন কনা ।তারা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। সুমন চিনে নেয় অস্পষ্ট অন্ধকার, আবছায়া আর জমাট বাঁধা অন্ধকার ।এভাবেই অন্ধ অনু আর পরমানুদের ভেঙে ভেঙে এই মাঠে
সৃষ্টি করেছে এক ছায়ামানুষের
।পৃথিবী র অস্তিত্ব শব্দ তরঙ্গের নানা মিশ্রণের প্রতিফলন ।শব্দ ব্রম্ভ । শব্দের না থাকা নিঃশব্দ
। নিঃশব্দ বাঙ্ময় হয় তরঙ্গের মিশ্রণকে একটু বদলে নিলে । সুমন নিঁশব্দের ভাষা শুনতে পায় ।়ওই অন্ধকার মানুষটি অনেক কথা বলে ।তাই তার মাঠ পেড়োতে
দেরী হয় ।..
ছোটো টালির ঘর । ভাত ফুটছে কাঠের
আগুনে,সারা বাড়ি ফুটন্ত ভাতের গন্ধ মিশে যাচ্ছে
হাওয়ায়।বাসন্তি সে গন্ধ ছাপিয়ে গন্ধ পায় ,মৃত ইঁদুরের,সুমনের । এমন অনেক গন্ধই সে পায়। আগুনের আঁচে ঘেমে উঠছে দেহ ।ভাঁজে ভাঁজে ঘাম ,বাসন্তি কাপড় আলগা করে ।একটুকরো জমি ছিলো ,ননদ মালতির বে তে সেটাও বর বেচে দিলো ।শশুড়র ঘর ভালোনা
।কিষাণগন্জতে বর মিস্ত্রী। মৃত্যু
গন্ধ পেয়েছিলো তবু। সেবার রাতেও গন্ধ পেয়েছিলো ।রক্তের গন্ধ।দুদিন বাদ খপর এলো মালতি পোয়াতি অবস্থায় নাকি গলায় দড়ি দেছে । টাকা কিচু বাকী ছিলো
বটে পণের। তবু এসব কিছুই বলেনি বরটাকে।
ভাত বাড়ে। মুখোমুখি বসে ।বাইরে ঝিঁঝিঁ ডাকে। আওয়াজ করে খায় সুমন। কানে লাগে।
গলা খাঁকড়ি দেয় সুমন,
-কাল যাবে নাকি গাজিবাবার মেলায়?
-কেন?"
-ইয়ে এমনি ,কোথাও যাওনা ত .....
-যাব"
-বেশ তবে কাল তাড়াতাড়ি ফিরে আসব
-হুম...
তারপর রাত নেমে আসে ।নিঃশব্দে ছায়ামানুষটা দুজনের মাঝে এসে বসে । সুমনের দিকে চেয়ে হাসে।
কলতলায় গিয়ে মুখ ধোয় ।পুকুর পারে বসে বিড়ি ধরায় । বাসন্তি কাপড় ছাড়ে ।কখনো সুমন শুয়ে দেখে ড্যাব ড্যাব করে । বাসন্তির নির্বিকার ।
পাশে এসে বসে জমাট অন্ধকারটা । সুমন নানা রকম অন্ধকার দেখতে পায় । ফিকে ,অস্পষ্ট,নিকষ ।তার ওখানটায় নিকষ অন্ধকার ।একটু বড়ো হবার পর টের পেল । ওটা বাড়েনা ।ছোট্ট শিশুর মতো, নেতিয়ে পড়া ।সে নপুংসক । বাসন্তি বলে পুরুষত্বহীন মাকাল । পা ডুবিয়ে কালো জলে ,ঢোড়া সাপ চলে যায় পায়ের ওপর দিয়ে ।চাপা শ্বাস ঘেঁটে দেয় জমাট অন্ধকার ।ছায়ামানুষ পিঠে হাত রাখে । কথা বার্তা হয় মনে মনে ।ইথার তরঙ্গে । অনেক জমে থাকা কুয়াশা আবছা হয় ।
-বাসন্তির বাপটা ছিলো একেবারে নিরন্ন । ঝুপড়িতে থাকত রেল লাইনের ধারে ,খেতে পেতোনা প্রায়দিন ।বাসন্তির ডাগর চেহারা ডেকে আনত অশান্তি । আমাকে ধরে পড়ল বুড়ো । কান্নাকাটি ।
-সর্ সর্ পাতা পরে বাতাসে বলে " কিন্তু তুমি তো......"
-হ্যা তাইতো রাজি হইনি । বুড়োকে টাকা দিতুম কখনো নিজের এই অবস্থাতেও, একদিন ওরা তুলে নিয়ে গেল বাসন্তিকে ।
-কারা, ওই লালমাঠে?কালু ওয়াগন ব্রেকারদের দলটা?
-হ্যাঁ , ছুটলাম মার খেলাম।মারলামও । তারপর ক্ষত বিক্ষত বসন্তিকে ঘরে তোলা ছাড়া উপায় কি । কেউ ত এগিয়ে এলোনা ।
-বুড়োটাকে অনেক সেবা করলে শেষতক ,সুমন। তোমার মনটা বড়ো সুন্দর।
হাল্কা নরম অন্ধকার সুমনের মাথায় বিলি কেটে দেয়।
সুমন চোখ মোছে। বুকে হাত বোলায় ,অকারণ অস্বস্তি হয়। কাঁচা পাকা চুল বুকে ।
- আমি ত ঠিকমতো পুরুষ নয়..... বাসন্তির জীবনটা নষ্ট, গভীর শ্বাস ফেলে সুমন ।
রাতপাখি কর্কশ ডেকে ওঠে ।
বাসন্তি তারা গোনে । ভাবে শূণ্য ঘরের কথা, নিলার কোলের ছেলেটার কথা, কেমন চুক চুক দুধ খায় ।ভাবে রতনের কথা । পুকুরের ওপারে দুঘর পরে থাকে । দূর থেকে গন়্ধ পায় বাসন্তি।কাঁচা পেঁয়াজ আর রসুনের ।
-মাচাটা ঠিক করে বাঁধো, চালটা ঠিক করো জল পড়তিছে "
সুমন ঘাড় কাত করে । দুপুর হয়ে যায় । গনগনে রোদে পাথরে কোঁদা মানুষটার গা দিয়ে ঝরে ঘাম ।
বাসন্তি আরচোখে চায় । মানুষটা খাটতে পারে বটে ।না খাওয়া না দাওয়া ।মুখে রা কারেনা ।যেন জন্ম অপরাধী ।
তবু, তবু রতন হাতছানি দেয় ।যৌবন বড়ো জ্বালা ।একপুকুর জলেও জুড়োয়না জ্বালা । রতন মাতাল ।তিনটে বাচ্চার বাপ ।টিঙ টিঙে চেহারা ।বৌটাকে ঠেঙায় রোজ । তার দিকে নজর । বাসন্তি গন়্ধ শুঁকে চলে।
আজ পুন্নিমা । বাসন্তি মাদুলি আনতে যায় গাঙপাড়ের নতুন ফকিরের থেকে ।বাঁধতে হবে সুমনের হাতে ।পথে গাছ গাছালি, বন ,অন্ধকার,ছায়া ছায়া পথ । হঠাত্ গন্ধ পায় কাঁচা পেঁয়াজের । সতর্ক হয়। রতন বেড়িয়ে আসে আড়াল থেকে ।
-কিরে বাসু কোথা গেছিলি"
-গাঙপাড়
-ফকিরের থানে
-হা হা করে হেসে ওঠে রতন, দেশি মদের গন্ধ বেরোয় মুখ থেকে। " ওই মাকালটারে পড়াইবি? "
-"হ্যাঁ".মাথা হেঁট করে বাসন্তি।
-রতন ঘন হয় । বাসন্তি দোটানায় ।হঠাত জাপটে ধরে রতন । ঘেমো শরীরে শুইয়ে ফেলে তাকে ।রক্ত গন্ধ পায় বাসন্তি । রতন সারাশি হাতে পিষতে থাকে........
ছায়ামানুষটা তাড়া দেয়। ঠেলে দেয় তাকে জঙ্গলের দিকে ।সুমন অন্ধকার সাঁতরে চলে । কিসের ইসারা করে এক বিশ্রি অন্ধকার ।
হাসপাতালে নিয়ে গেছে পুলিশ রতনকে। রতন মরে গেছে ।মেরে ফেলেছে সুমন তার অসুরের শক্তি দিয়ে ।বাসন্তি কে ঘরে পৌঁছে দে শেষ রাত ঘরে ছিলো সুমন ।
-সকালে পুলিশ আসবে। নে যাবে ।তুই সাবধানে থাকবি নির্বিকার বলে ।
আজ রাত । স্নান করে এসে মাকালটার পাশে বসে বাসন্তি। স্নিগ্ধ ফুল গন্ধ পায় সে । পিঠে হাত রাখে সুমনের । বুকে মাথা রাখে ।কয়েকফঁোটা জল গড়িয়ে পড়ে ।তার পুরুষ ।বাসন্তি প্রাণভরে আদরে ভরিয়ে দেয় তার পুরুষমানুষটাকে ।
চাঁদ হাসে ।অন্ধকার আবছা হয় । ছায়ামানুষ মিলিয়ে যায় অন্য আরেক অন্ধকারের দিকে ।লালচে আলোর রেখা পূব আকাশে ।