গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়

নগ্ননির্জন

ছলাৎ করে চাঁদের জোছনা উপচে পড়ল তিয়াসার শরীরে। মুহূর্তে চমকে উঠল তিয়াসা।
এতক্ষন মেঘের আড়াল থেকে পুর্ণেন্দু চুপিসারে দেখছিল রুপোলী তিয়াসার অভিসার। ও আজ বকুলফুলের মালা পরেছে গলায়। বাজুবন্ধে হাস্নুহানা। ককটেল করা গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছিল বনস্থলীর টিলা। এই গন্ধের সঙ্গে দারুণ সঙ্গত করছিল শালফুল।
মাতোয়ারা তিয়াসার সে সবে খুব একটা হুঁস ছিল না। ও আমাকে নিয়ে খেলতেই ব্যাস্ত। খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বলল
-তুই খুব বোকা
আমি বললাম
-কেন কেন, তুই কি করে বুঝলি?
-তুই জোছনাকে সামাল দিতে পারলি কই। পুর্ণেন্দু আমাদের সব কিছু দেখে ফেলল।
-তাতে কি?
-মহূলের সঙ্গে সখ্যতা পাতিয়ে তোর সব বুদ্ধিলোপ পেয়েছে। সারা গায়ে লেপটে আছে সতীন মহূয়ার গন্ধ।
-তা কি করি বল! আদিম অন্ধকারে পথ হাতড়াতে মহূয়ার সঙ্গ বড্ড প্রয়োজন ছিল রে তিয়াসা। তুই তোর দুই সই বকুল আর হাস্নুহানা কে কেন নিয়ে এলি বল!
-ওরা না থাকলে এই প্রথম অভিসারের সাক্ষী হতো কে? তাই বলে তুই আমার সতীনকাঁটা কে সঙ্গে নিয়ে আনলি? এ তুই ঠিক করিস নি।
-নহবতখানায় সানাই বাজাবে কে,ও না থাকলে!

এ এক অদ্ভুত অভিসার। জুঁই মালতির ফিচলেমি। বীরহোড় ডেরায় মৌমাছির গুঞ্জন। বীরহোড়রা নাকি আজ মধু দিয়ে গুঁদলু লেটো খাবে। শ্রান্ত মৌমাছিরা নাকি বিষন্ন। আজ এই দুবচাটান পাহাড়ের টুড়গার পাথর চাটানে বসে সবাই ফিসফাস করছে। বাতাসে কুরচির বুকের আঁচল বারবার খসে পড়ছে ঠিক ঝর্ণার মত। রুপোলি পুর্ণেন্দু ফিকফিক করে হাসছে। লজ্জায় মুখ ঢাকে তিয়াসা। জোৎস্নায় চান করে বনস্থলী গর্ভবতী হয়। কুয়াসা মাখা কুরচিরা শাল পিয়ালের সঙ্গে মাখামাখি করে ঠিক তিয়াসার বালিকাবেলার মত। কিশোরী করঞ্জা বনতুলসীর কার্পেটে গা এলিয়ে গান ধরে
"আজি এই জোৎস্নারাতে
কে তুমি মধ্যরাতে
এসো আজ গল্প করি
চল আজ মিশে যাই জল প্রপাতে।
মহুয়ার নেশায় বিভোর হই আমি।বুকের আঁচল খুলে দেয় তিয়াসা। নগ্ন বনানী ক্ষত বিক্ষত হয় প্রেমের আঁচড়ে। ঐহিক শীৎকারের অনুরণন কানে আসে ফিরে ফিরে।