গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৫

নীতা মণ্ডল



রং নাম্বার

(১)

ফোনটা ধরেই সোহিনী ঝাঁঝিয়ে উঠল, ‘কত মিনিট হয়েছে যে এর মধ্যে ফোন?’
ওপাশে রোহিত কাঁচুমাচু, ‘কি কি নেবার কথা ছিল? কতটা! সব ভুলে গিয়েছি। লিস্টটাও বাড়িতে। একবার দেখে বলবি প্লিজ।
ছদ্ম রাগ দেখিয়ে সোহিনী লিস্টটা আউড়ে গেল। ফোন রাখার সময় মিষ্টি করে বলল রাখছি, সাবধানে আসিস।
মঞ্জুদি ঘর মোছা থামিয়ে বলে উঠল, ‘কি করে এমন যাদু করলে গো? একটু লিপস্টিক দাও না, চোখে কাজল পর না, তবুও দাদা ঘর থেকে বেরিয়েই বারেবারে ফোন করে। আমার বর তো মেয়ে হবার পর আর ফিরেই দেখল না আমাকে। সেই থেকেই তো ঝিগিরি কচ্চি।
সোহিনী হেসে ফেলল, ‘ও হচ্ছে এক নম্বরের ভুলো। কি ভাবছ আমার বিরহে ফোন করে? আজ সন্ধ্যেবেলা বাড়িতে লোক আসবে। বাজারের জিনিস ভুলভাল আনলে কি হবে বুঝতে পারছ?’
এ দৃশ্য ছিল বিয়ের পরপরই।

(২)

এখন দৃশ্যপটের বদল হয়েছে। প্রতি রবিবার সকালে রোহিত সারা সপ্তাহের বাজার করে। সোহিনী ঘোরতর গিন্নী। এছাড়া ওর কলেজ আছে।
মিনিট দশেক হল রোহিত বেরিয়েছে। অতএব সোহিনীর ফোনটা বাজল।
লিস্ট তো সঙ্গে দিয়েছি। কি হল?’
চিকেন লিখেছিলে। এখুনি একটা কচি পাঁঠা কাটল। তুমি ভালবাস। নেব?’
নাও।সোহিনী ফোন কেটে দিল।
রবিবারের ব্রেকফাস্টে লুচি আর আলু চচ্চড়ি খাবার বায়না করে ছেলে গুড্ডু ক্রিকেট খেলতে গিয়েছে। ময়দা মেখে কাটা আলুগুলো ধুচ্ছিল সোহিনী। ফোনটা দ্বিতীয়বার বাজল।
কি হল আবার?’
দারুণ ইলিশমাছ উঠেছে। নিই?’
আজ রাঁধতে পারব না। ফ্রিজে থাকবে, নিয়ে নাও।

সোহিনী যখন গরম তেলে কালোজিরে আর কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিচ্ছে তখন ফোনটা আবার বেজে উঠল। স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে, আর ও এইচ... ।

সোহিনী অধৈর্য হয়ে আলুগুলো ছাড়তে ছাড়তে ফোন ধরল, ‘আশ্চর্য মানুষ! যা ইচ্ছে নিয়ে এস। না পারলে আনতে হবে না। তোমার কি নিজের বুদ্ধিশুদ্ধি বলে কিছু নেই?’
সোহিনী থামতেই ওপাশে অন্য কন্ঠস্বর বলে উঠল, ‘গুড মর্নিং ম্যাডাম। আমার পেপারটা কি একবার চেক করবেন? তাহলে আপনাকে ইমেইল করে দেব।
ফোনের ওদিকে সোহিনীর ছাত্র রোহণ। সোহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রোজেক্ট করছে। সোহিনী কিছুক্ষণের জন্যে স্ট্যাচু হয়ে গেল।

ওহো। সরি, রোহণ। অ্যাঁ,হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি মেইল করে দাও...।ফোনটা কেটে দিয়ে, খুন্তি নাড়ানো থামিয়ে স্ক্রিনের দিকে বোকার মত চেয়ে থাকল সোহিনী।