খেলার
মাঠের বাঁদিক ঘেঁষে একটা অনেকদিনের পুরনো বকুল গাছ। তার বাঁধানো বেদীতে বসেছিল ওরা
তিনজনে। টুবলুর হাতে তখনও ধরা সিগারেটের শেষ টুকরোটা। একটু আড়াল করে বসেছে সে। শেষ
টানটা দিয়ে সিমেন্টের বেদীতে টুকরোটা একবার ঘষে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল টুবলু।
জগন সেটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিল আগুন আছে কিনা,
তারপর তপো মানে তপোব্রতর দিকে ফিরে বলে উঠল---উ লাল্টুস আজ আসবে
না, দেখে নিস, আমিও ভাগলাম।‘
জগনরা বাঙ্গালী নয়, কিন্তু প্রায় তিন পুরুষের বাস ওদের এই জায়গায়। কথাবার্তায় সব সময় যে সেটা ধরা পড়ে তা নয়, কিন্তু বন্ধুদের মাঝখানে হল্লা করার সময় সেটা বেশ বোঝা যায়। বাড়ির পরিবেশে এখনও অবাঙ্গালীয়ানা থেকে গেলেও জগনের কথায় খুব একটা তার প্রভাব নেই। কিন্তু রেগে গেলে কিংবা তর্ক করার সময় টানটা টের পাওয়া যায়। তপোকে হাত দিয়ে একটা আলতো ঠেলা দিয়ে আবার বলল জগন---আরে, উ তোর লাল্টুস আজ আম্মিজানকে লিয়ে পিকচার গেছে বে, আম্মিজান আজ আসতে দিবে না। দেখিস, আমি ঠিক বলছি কি না! ‘
--এই,
তুই রিখিকে আম্মিজান বলিস কেন রে? এইটুকু
একটা মেয়ে, আমাদের চেয়েও দু ক্লাস জুনিয়র...‘ টুবলু বললে জগনের দিকে
তাকিয়ে।
--জুনিয়র
তো কি আছে, ক্লাসে জুনিয়র, বাকি সোব দিকে সিনিয়র আছে...’ মুচকি হেসে বলল জগন।
--
তোরা মাইরি পারিস্। সত্যি...’ হেসে ফেলল তপো। তার মাথায় এখন অন্য চিন্তা। গতকাল লাল্টু দুটো
সিনেমার টিকিট কেটে রিখির হাতে দিয়ে আসতে বলেছিল। টুবলুরা জানে না। কথামতো তপো
ওদের জন্য টিকিট কেটে রিখিকে দিতেও গেছিল, কিন্তু
দেখা হয়নি। একটা কাগজে মুড়ে রিখির ঘরের জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছিল। তপোর কোন
দোষ নেই, লাল্টু তাকে সেইরকমই বলেছিল। রিখির ঘরে কেউ যায়
না, সব সময় তালা দিয়ে রাখে, কেউ
জানতে পারবে না...। রিখির ঘরটা একেবারে রাস্তার ধারে, ফেলা
সহজ হয়েছিল কিন্তু এখনও পর্য্যন্ত লাল্টু না আসায় ভয় ভয় করছে। সিনেমা দেখে এতক্ষণে
লাল্টুর এখানে চলে আসার কথা। রিখির বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেল না তো! টিকিটে নাম নেই,
কোন চিঠি নেই...তবু তপোর ভয় করছিল। এই হাসি-ঠাট্টা ভাল লাগছিল
না। শুকনো গলায় বলে উঠল---ভাল্লাগছে না, চল্, বাড়ি চলে যাই...’ তিনজনে উঠতে যাবে, দেখল দূর থেকে
লম্বা লম্বা পায়ে খেলার মাঠ পেরিয়ে সীতুদা এদিকেই আসছে। ওরা বসে রইল।
(২)
খবরটা
সীতু আগেই পেয়েছিল। বকুলতলায় এসে চারজনের একজনকে দেখতে না পেয়ে বিশ্বাস দৃঢ হল। গতকালই
রাত্রে শুতে যাবার আগে ছোট কাকিমা বারান্দার এককোনে সীতুকে ডেকে ফিসফিস করে বলেছিলেন
কথাটা। রিখি সীতুর ছোটকাকার মেয়ে। সীতুদাদের বিরাট বড় একান্নবর্তী পরিবার। এত বড়
এবং মান্যগণ্য পরিবার এই তল্লাটে আর নেই। যেমন বাড়ি পেল্লায়, তেমনি লোকও অনেক। মানে, সম্মানে, জ্ঞানী-গুণীতে ভর্তি সীতুদাদের বাড়ি। জ্যাঠা-বাবা-কাকাদের কল্যাণে সব
মিলিয়ে তারা ভাইবোনও অনেকগুলি। সীতু নিজেই এক এক সময় বলে---একটু যে কোথাও শান্তিতে
বসব, তার উপায় নেই। সব সময় হাঁস-মুরগীর দল প্যাঁকপ্যাঁক করছে।‘
বলে,
কিন্তু একটা গর্ব কোথাও আছে মনের মধ্যে। সীতুদা নিজেও বড় চাকরি
করে, পাড়ার ক্লাবে ফুটবল খেলে, ভালো
খেলোয়াড়।
--শালা,
তুমি রিখির সঙ্গে প্রেম করবে, আম্মিজানকে
নিয়ে সিনেমা যাবে, আর আমার মুন্ডুকাটা যাবে...সীতুকে
কাছাকাছি হতে দেখে মনে মনে লাল্টুকে একটা গালাগাল দিল তপো।
সীতু
একবার তিনজনের দিকে চেয়ে বললে---আর একজন কই, চতুর্মুখের
একটি মুখ বাদ কেন? তপো কিছু বলতে গিয়েছিল, বাধা দিয়ে টুবলু বলে উঠল---দ্যাখো না সীতুদা, সেই
কখন থেকে বাবুর জন্য বসে আছি, পাত্তাই নেই। আজ আমরা
ভেবেছিলাম, ওপাড়ায় ঘোতনদা’ দের বাড়ি যাব.....বাধা
দিয়ে সীতু বলে উঠল---কেন, ওপাড়ায় আবার কি?’
--তুমিই
তো বলেছিলে যাবার জন্য। মনে নেই, সেই যে সেদিন
মিটিং এর পর বল্লেনা, ঘোতন দা’রা এবছর খেলবে কিনা
জেনে আসতে। সেই যে, নন্তু দাও তো ছিল সেদিন.... কথা শেষ
হবার আগেই বলে উঠল সীতু---চলে যা, কে আসবে, না আসবে বলে সময় নষ্ট করছিস কেন? আর এখানে বসে
কোন রাজকার্য্যটাই বা
হচ্ছে শুনি, যা...চলে যা...’
---চলে
যা, এখানে বসে আছিস কেন? এখানে
কি কাজ তোদের?’
ওরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তিনজনে ঊঠতে যাবে,
সীতু তপোর দিকে তাকিয়ে বলল---ওরা দুজনে যাক্, তুই থাক, তোর সঙ্গে আমার দরকার আছে...’ বলে ওদের দিকে চেয়ে
বললে---ঘোতনকে বলিস, কাল বিকেলের দিকে
একবার মাঠে আসতে, কথা বলে নেব। টুবলু আর জগন একবার তপোর
দিকে চেয়ে হাঁটতে শুরু করল। তপো ওদের যাওয়া দেখছিল।
(৩)
ভয়ে মুখ সাদা হয়ে গিয়েছিল তপোর। শ্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছিল। ওরা একটু এগিয়ে চলে গেলে সীতু বাঁধানো বেদীতে বসে একটা সিগারেট ধরাবে বলে প্যাকেট বার করল। একটা সিগারেট নিজের মুখে দিয়ে কি মনে হওয়ায় আর একটা সিগারেট বার করে তপোর দিকে এগিয়ে দিল। চমকে উঠল তপো। তাদের বন্ধুরা যে সিগারেট খায় এই কথা সীতুদা দের না জানার কথা নয়, কিন্তু সীতুদা এভাবে এগিয়ে দেওয়ায় চমকে গেল।
--আমি
খাই না সীতুদা...
--আরে,
ধর...ধর...আমি সব জানি-‘ বলল সীতু।
--আমি
সত্যিই সিগারেট খাই না সীতু দা...
--তবে
কি চলে, বিড়ি নাকি অন্য কিছু...? ভুরু কুঁচকে বলল সীতু।
--না,
আমি স্মোক করি না...দৃঢ গলায় বললে তপো।
যাক্...
এবার সত্যি কথাটা বল্ তো, রিখি তোর সঙ্গে কবে
থেকে সিনেমা দেখছে?
তপো
বুঝল সীতুদা ঘটনা জানে। কিন্তু সীতুদা কি তার
কথা ভেবেছে নাকি, কতটা জানে...! অবাক
হয়ে উত্তর দিল তপো---তুমি ঠিক কি বলছ, বুঝতে পারছি না
সীতুদা... আমি সিনেমা...রিখির সঙ্গে...’ কথাটা শেষ হবার আগেই বলে উঠল সীতু,
--তপো,
তোকে জন্মাতে দেখেছি। তোর বন্ধুদের মধ্যে তোদের বাড়ির সঙ্গেই
আমার, আমাদের বাড়ির মেলামেশা সবচেয়ে বেশি। তাই তোকে
বিশ্বাসও করি সবচেয়ে বেশি। আজ যদি তোর কীর্তির কথা বিমানকাকাকে বলি, তুই
খুশি হবি? রিখিকে নিয়ে তো সকলের সামনেই সিনেমা যেতে
পারতিস, কেউ কিছু মনে করত না। চাই কি, একটা পুরো দঙ্গল তোদের সঙ্গে
চলে যেতেও পারত। আমরা, আমি কিছু মনে করতাম
না। কিন্তু এইভাবে, লুকিয়ে, একা
রিখিকে নিয়ে....চোরের মত...ছিঃ...’ তপোর মুখের দিকে চেয়ে বললে সীতু।
চোখে
জল এসে গেল তপোর। ভয় হল বাবা-মা’কে নিয়ে। বাবা কি
জানে? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল---বাবা জানে?
--সত্যি
কথাটা না বললে জানবেন।
---বিশ্বাস
কর সীতুদা, আমি কোনদিন রিখিকে নিয়ে সিনেমা
যাইনি। তুমি জিজ্ঞেস কর ওকে...’
--তাহলে,
আর একটা টিকিট কার? নাম বল, আমি কিচ্ছু মনে করব না। সত্যিটা কি তোর কাছ থেকে জানতে চাই।
আমার কাছে লুকোস না তপো, আমি সব জানি।‘
দারোগার
মতো মনে হল সীতুদাকে। রাগ হল, কি জানে সীতুদা,
কতটুকু জানে? লাল্টুর সঙ্গে বড় রাস্তা
ছাড়িয়ে নতুন কলোনীর দিকে বেড়াতে যায় রিখি, সীতুদা জানে?
মাঝে মাঝে লাল্টুর বাড়িতে যায় রিখি...সীতুদা জানে? কলেজ যাবার পথে অনেকদিন কলেজ না গিয়ে..., জানে
সীতুদা?
--তপো,
তুই না বললে আমায় তোদের বাড়ি যেতে হবে, তুই
বুঝতেই পারছিস। আমার বোন, তাকে নিয়ে আমাদের পরিবারে একটা
স্ক্যান্ডাল হোক, নিশ্চয়ই চাইবি না... ‘
--তুমি
কিন্তু আমায় ব্ল্যাকমেল করছ সীতুদা...একটু উষ্মাভরে বলে উঠল তপো।
---কি
আমি তোকে ব্ল্যাকমেল করছি! তুমি আমার বোনকে নিয়ে লুকিয়ে সিনেমাহলে প্রেম করবে...,
আর তুই আমায় বলছিস, আমি তোকে ব্ল্যাকমেল
করছি! এত সাহস
কবে থেকে হল তোর...?’
কথাটা
বলেই অস্বস্তিতে পড়েছিল তপো। ঠিক এভাবে বলতে চায়নি। কিন্তু সীতুদাই বা ওভাবে
দারোগার মতো প্রশ্ন করছে কেন? এতই যদি...তাহলে
রিখির দিকে নজর নেই কেন?
বিরক্ত হচ্ছিল তপো। ---তোমরা শালা প্রেম করে বেড়াবে, এদিকে আমায় সীতুদা... মনে মনে লাল্টুর উপরে রেগে যাচ্ছিল । একটা কথাও
আর সে বলবে না, মুখ নিচু করে বসে রইল তপো।
----আমি
জানি তুই বন্ধুকে বাঁচালি। আমি সব জানি তপো...কাঁধে হাত রাখল সীতু।
--কিন্তু
এভাবে আমার হাত থকে ক’দিন পালিয়ে বাঁচবে।
চোরের মতো যে বন্ধুর কাঁধে ভর ক’রে প্রেম করে, তাকে চিনতে সীতেশ রায়চৌধুরীর দেরী হয় না। তুই একটা ভাল ছেলে,
পড়াশোনায় ভাল, এভাবে ওদের সঙ্গে মিশে
নিজেকে নষ্ট করছিস কেন? ভাল করে লেখাপড়া কর...’
এবার
রাগ হল তপোর। লেখাপড়ায় ভাল তো কি! সকলের মাথা সমান হয় না। লেখাপড়ায় ওরাও খুব খারাপ
কিছু নয়, এটুকু বেশি-কম হতেই পারে! সে কার সঙ্গে মিশবে,
না মিশবে সেটা সীতুদা বলে দেবার কে? তার
বাবা একজন বড় চাকুরে, মা স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পড়াশোনা
না করলে, পরীক্ষায় খারাপ ফল করলে একটু/আধটু বকা-ঝকা করেন।
কিন্তু কই, বাবা-মা তো কোনদিন কোন বন্ধুর সঙ্গে মিশবে,
না মিশবে এই নিয়ে কোন কথা বলেন না! তাহলে সীতুদার এত মাথাব্যথা
কিসের! বন্ধুত্ব কি শুধু পড়াশোনা দিয়ে হয়? আর সীতুদার তো
লাল্টুকে কিছু বলাই উচিত নয়, ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত,
ওদের গোটা পরিবারের । সীতুদা এত রোয়াব দেখাচ্ছে কিসের জন্য?
মুখ গম্ভীর করে বসে রইল তপো।
(৪)
সন্ধ্যেবেলায়
বাড়িতে দেখা গেল রিখিকে। শান্ত মেয়ের মতো পড়ার টেবিলে একগাদা বই খাতা নিয়ে একমনে
পড়াশোনা করছে। সামনে একটা খাতায় কি সব লিখছিল রিখি। এই ঘরটা রিখির আর মেজ
জ্যাঠামশাইয়ের মেয়ে রিনির ছিল। গত বছর রিনির বিয়ে হওয়াতে ঘরের দখল এখন রিখির।
কয়েকটা কুচো-কাচা বাদ দিলে সে এখন বাড়ির বড় মেয়ে। তার কি একটা
নিজের ঘরও থাকতে নেই! তাই এই ঘরের মালিক সে নিজে।
সীতু একটা গলা খাঁকারি দিয়ে ঘরের পর্দা সরাল। --কি করছিস--বলে
দেখল রিখি একমনে সামনে বইখাতার উপর ঝুঁকে কিছু লিখছে। সীতুর কথায় একবার
মুখ তুলে সীতুকে দেখল, আবার বইয়ে মুখ নামাল।
সীতু সেদিকে তাকিয়ে বললে---বইটা রাখ,
কথা আছে তোর সঙ্গে...’
---বল,
শুনছি-- হাতের কলম বন্ধ করে সীতুর মুখের দিকে তাকাল রিখি।
--কাল
কার সঙ্গে সিনেমায় গিয়েছিলি?
--তুমি
জানো, সিনেমায় যাইনি। টিকিটগুলো তোমরা কেড়ে
নিয়েছিলে...’
--কাউকে
না জানিয়ে একটা ছেলের সঙ্গে...। কথাটা শেষ হবার আগেই বলল রিখি,---আমি তখন অনেক ছোট... বড়দা, কিন্তু তোমাদের
বান্ধবী কাজলদি, অনিমাদি এরা সব এলে তোমরা সিনেমা যাওনি?’
---কিসের
কি! আমরা তো দল বেঁধে একসঙ্গে সিনেমা যেতাম। তার সঙ্গে এটা এক হল?--বিরক্ত হল সীতু।
--কাজলদিরা
মেয়ে, অনায়াসে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে পারত। মা, জ্যেঠমণিরাও ওদের ঢুকতে দিতেন, গল্প করতেন। এই
ছেলেগুলোকে ঢুকতে দেবে? তাহলে ওরাও এবার থেকে ভেতরে
আসবে----আমাকে সঙ্গে নিয়েই সিনেমা যাবে...মুখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি বলল রিখি।
---তোর
মেয়ে বন্ধু নেই? ছেলেদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করতে হবে?
--বন্ধুত্বের
আবার ছেলে-মেয়ে কি? আমায় তো ছোটবেলা থেকে
তুমি, বাড়ির কেউ তা তো শিখিয়ে দাওনি বড়দা। কাজলদিদের
সঙ্গে তোমরা
যেতে পারলে আমিই বা
যেতে পারবো না কেন? ওদের সামনে আসতে
বাড়ির লোকেরা অনুমতি দিত, এদেরকেও অনুমতি দাও, সামনে দিয়েই যাব...’
---রিখি...!’ জোরে ধমক দিল সীতু।
--বড্ড
বাড় বেড়েছে না? একা যাচ্ছিলি কেন? আমরা কোনদিন একা একা গিয়েছি ? আর কেউ ছিল না
কেন?
---বাকিদের
সেদিন অসুবিধে ছিল। সঙ্গে থাকলে বন্ধু, নইলে
নয়---এ আবার কেমন কথা বড়দা...’ রাগে, অভিমানে বন্ধ গলায় কথা
বলছিল রিখি। কিন্তু কিছুতেই হার মানবে না আজ বড়দার কাছে।
--একটা
ফালতু ছেলে, কাজ নেই, পড়াশোনা
নেই...শুধু মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়ানো... রাগে গর্গর্ করে উঠল সীতু। লাল্টু বলেই
কি এত রাগ, এত আক্রোশ! আর থাকতে পারল না রিখি। আজ যেন
বড়দা ঠিক করেই নিয়েছে রিখিকে দিয়ে কিছু বলাবেই, নইলে এত
কথা উঠছে কেন? চোখে চোখ রেখে বলে উঠল রিখি,
---আমাদের
বাড়িতেও কিন্তু এইরকম একটা ফালতু ছেলে ছিল
বড়দা।
তখন হয়ত অনেকেই আমরা জন্মাইনি, অনেকে
ছোট ছিলাম। পরে বড়দের কাছে শুনেছি। আমাদের বাড়িতে কিন্তু কোনদিন তাঁকে কেউ
অশ্রদ্ধা করেনি, করিনি বড়দা। যখন অনেকদিন পরে আমরা জেনেছি,
তখনো না। আর তুমি......’ কথাটা ঠিক বলা শোভন কিনা বুঝতে না পেরে চুপ করে গেল রিখি।
অবাক
মুখে চেয়ে রইল সীতু। তার বাবার কথা বলছে রিখি। এত কথা রিখি জানল কোথা থেকে,কে বলেছে তাকে, লাল্টু? নাকি মা, কাকিমাদের কেউ? কিন্তু বাড়ির পুরনো কথা তাঁরা আলোচনা করবেনঃ, তাও
আবার রিখির কাছে! এসব কথা আলোচনা এখনও হয়! ওই লাল্টুর দাদুই একদিন বাবাকে ডেকে
চাকরি দিয়েছিলেন তাঁদের কারখানায়। বড়বাড়ির ছেলে,
এভাবে বাড়িতে বসে থাকা দেখতে খারাপ লাগে, বাড়ির লোকেরাও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিলেন। লাল্টুর বাড়ির লোকের কাছে তাঁরা
কৃতজ্ঞ। রিনি জানে সব কথা! কিন্তু কবে কি হয়েছিল, তার
জন্য...মাথা নিচু করে বেরিয়ে এল রিখির ঘর থেকে সীতু। লাল্টু কি রিখিকে ব্ল্যাকমেল
করছে!