গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৫

দে বা শি স কো না র


বাঁকা চাঁদ


অপু এক সময় চাঁদ খুব ভালোবাসতো । এখন আর বাসে না । চাঁদ সম্পর্কে একটা বাজে ধারণা তৈরি হয়েছে তার । কিভাবে যে এমন ধারণা হল, সেটাই ভাবছে সে । প্রথম আঘাতটা আসে তার প্রথম প্রেয়সী রূপসার কাছ থেকে । যে সে আঘাত নয় , একেবারে জুতো ছুড়ে মার । রূপসার ডাক নাম চাঁদনী । আদর করে অনেকেই তাকে চাঁদ বলে ডাকে । ডাকতেই পারে । তা বলে সে চাঁদকে নিয়ে গান গাইতে পারবে না ? চাঁদের সমস্ত পেটেন্ট কি রূপসা একা নিয়ে রেখেছে ? কি বলবে সে ? যাক,যা অতীত তা কি আর কোনোদিন ফিরবে ? অতীত বড় ব্যাথা দেয়। আসলে হয়েছিল কি,অপু রাস্তা দিয়ে সে সময়ের একটা জনপ্রিয় গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিল । মান্না দের গান। আপাত নিরীহ সেই গান গাওয়ার জন্য যে এমন ঘটনা ঘটবে , তা কে জানবে ? জানলে অপু কি আর গাইত ? আর ঠিক ওই সময়েই রূপসা টিউশানি পড়ে বাড়ি ফিরছিল । 'চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি ' -এই গানের জন্য জুতোপেটা খাওয়া - ভাবা যায় ! অপুর প্রথম প্রেমের সলিল সমাধি ঘটেছিল এই চাঁদের জন্য । এর পরেও অপু চাঁদ সম্পর্কে খুব একটা খারাপ চিন্তা - ভাবনা করে নি । কিন্তু ক্লাশে বাংলা স্যার একদিন পড়া ধরেছিল।জানতে চেয়েছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটির ব্যাখ্যা । নিজের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে বলেছিল অপু । সে বলেছিল চাঁদ নাকি প্রেমের প্রতীক ।প্রেমে আঘাত পেলে যখন কষ্ট হয়,তখন আকাশের চাঁদকে মনে হয় ঝলসানো রুটি । আরও অনেক কথা বলবে বলে ভেবেছিল অপু । কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাংলা স্যার তাকে চুলের মুঠি ধরে মারতে শুরু করেন । অপুদের আমলে টিচাররা যা খুশি তাই করতেন । এখন হলে ওই বাংলা স্যারের বারোটা বেজে যেত । এরপর যা ঘটেছিল তা আরও মারাত্মক । 

অপু তাই আর চাঁদকে পচ্ছন্দ করে না । জ্যোৎস্না সে সময়ে অপুর বান্ধবী । অপু একটা চাকরীও জুটিয়ে ফেলেছে। পার্কে এক রাতে সেই মান্না দের গান গাইছে অপু । পাশে জ্যোৎস্না । "ও চাঁদ সামলে রাখ জোছনাকে "। এই গান গাইবার পরদিন থেকে আর অপু তাকে কাছে পায় নি । লোক মুখে শুনেছিল ওর বাবার নাম নাকি চাঁদ ছিল । আর চাঁদের কন্যা জ্যোৎস্না । এরপর অপু আর কি করে চাঁদকে পচ্ছন্দ করবে